লিখেছেন: ব্রুস ডিকিনসন
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
যখনই আমরা কোনো অ্যালবাম নিয়ে হাজির হয়েছি, সেটি সত্যিকারঅর্থেই সময়কে করে তুলেছে অর্থবহ। সেইসব অ্যালবামেরই একটি সেনজুৎসু। এই সর্বশেষ অ্যালবামে সম্ভবত (আমার আয়রন মেইডেন-এ প্রত্যাবর্তনকারী অ্যালবাম, ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া) ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড-এর সেই পরিচিত সংবেদনশীলতাকে ধারণ করা গেছে বলেই আমার অভিমত। কেননা, প্রচুর নিন্দামন্দ কানে আসছিল আমাদের: ‘এ তো স্রেফ একদল বাতিল বুড়োর নতুন করে দাঁত লাগিয়ে নাচন-কোঁদন।’
তবে ব্যাপারটি আদৌ তা ছিল না; লোকজনকে এমনও বলতে শুনেছি: ‘হায় ঈশ্বর, এ তো আসলেই দারুণ অ্যালবাম।’ এরপর লোকে আরও বলেছে, ‘আচ্ছা, এটা আরেকটা মেইডেন অ্যালবাম, এটা আরেকটা মেইডেন ট্যুর।’ এদিকে, দিনে দিনে নীরবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে (ব্যান্ড হিসেবে) আরও অনেক বেশি বড় হয়ে উঠছিলাম আমরা।

কিন্তু কোভিডের দিনগুলোতে লোকে যখন গৃহবন্দি, তখন তারা এই ‘এডি’ সহকারে [আয়রন মেইডেন-এর মাসকট] বিরাট ও দানবীয় ব্যান্ডকে দেখতে পায়নি। তারা ভেবে নিয়েছে, ‘আমার জীবনে এই জিনিসের দরকার কী?’ তারপর আমরা যখন সেনজুৎসুর মতো অ্যালবাম নিয়ে হাজির হলাম, যে অ্যালবামের রেকর্ডিং কোভিডের আগেই করা হয়ে গিয়েছিল, তখন সেই শূন্যতাটি ভরে উঠল।
…
যতই
বয়স বেড়েছে,
ততই বৈচিত্র্যময় ও
ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠেছি
…
লোকে অ্যালবামটা লুফে নিয়েছে– এ বড়ই হৃদয়গ্রাহী কাণ্ড। মিউজিকের দিক থেকে এটি এক বিস্ময়কর অ্যালবাম: এর জটিল, এর আবেগাত্মক অনুষঙ্গ একে একটি বহুস্তরি রূপ দিয়েছে। লোকে বলছে: ‘এটা তো ১৯৮৩’র সাউন্ডের মতো লাগছে না।’ না, নিশ্চয় লাগছে না; আমরা সবদিক থেকেই (আগের চেয়ে) খানিকটা সরে এসেছি। যতই বয়স বেড়েছে, ততই বৈচিত্র্যময় ও ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠেছি। এ অনেকটা নিল ইয়ংয়ের মতো। মিউজিকে তিনি বহুকাল ধরেই আছেন, তবু এখনো প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ঘষে মেজে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার মতো জাদু দেখাতে সক্ষম।
আমাদের কাছে নিজেদের ছোট্ট একটি অ্যানিমেটেড গোপনাস্ত্র ইতোমধ্যেই ছিল, সেটি (এই অ্যালবামের প্রথম সিঙ্গেল) দ্য রাইটিং অন দ্য ওয়াল-এর ভিডিও। আমি জানতাম, কিছুকাল আমরা কোথাও (ট্যুরে) যেতে পারব না; আর, আয়রন মেইডেন নিশ্চিতভাবেই কোনো রিহার্সাল স্টুডিওতে গিয়ে নিজেদের গিয়ারের সেটআপ করে ভান ধরবে না যে– আমরা বিরাট কোনো লাইভ গিগে পারফর্ম করছি; কেননা, আমরা দেখতে স্রেফ একদল বুড়ো গর্দভের মতো!
তাই আমি বলেছিলাম, ‘একটি দুর্দান্ত ভিডিও বানানোর জন্য নিজেদের রিসোর্সগুলো ব্যবহার করব।’ এর জন্য আমার কাছে পরিমাপক ছিল রামস্টাইন-এর (ডয়চেল্যান্ড) ভিডিওটি, যেটি আসলেই দারুণ এক শিল্পকর্ম। রামস্টাইন আর আয়রন মেইডেন-এর স্টাইলের কোনো মিল নেই; তবু ওই ভিডিওতে থাকা আবেগাত্মক ছাপটি আমি আমাদের (ভিডিওর) মধ্যে পেতে চেয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস, সেই আবেগাত্মক ছাপ আমরা ধরতে পেরেছি।

তারপর আমরা টিজারও বানিয়েছি। এর ক্রেডিট আমি নিতে পারব না; এটা পুরোটাই সারার কাজ: সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট ম্যাজিকে সকল চমক তারই হাজির করা। তিনি এবং তার টিম যখন কাজটা নিয়ে এলো, আমি বলেছিলাম: ‘এতে কি আসলেই কোনো কাজ হবে? এটা দেখে লোকে সত্যি মুগ্ধ হবে? নাকি এটা স্রেফ একদল ক্ষ্যাপা বুড়ো মেইডেন-এর লম্ফঝম্পই ভাববে!’ আমার তেমনটাই মনে হয়েছিল।
…
যে
সময়ে
বেঁচে রয়েছি,
সেই সময়কে কোনো
রকম পাশ না কাটানো
এক দল ক্ষ্যাপাটে বুড়ো
এই অ্যালবামে সত্যিকারের
মিউজিক বাজাতে
পেরেছে
…
অ্যালবামটি রিলিজ পাওয়ার সপ্তাহে আমরা (র্যাপার) ড্রেকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে টক্কর দিয়েছি [অতি সামান্য ব্যবধানে মেইডেনকে হারিয়ে টপ চার্টের ১ নম্বরে জায়গা নিয়েছেন ওই র্যাপার]। তিনি আসলে কী কাজ করেছেন, আমি জানি না, যদিও প্রচুর লোকে তা জানে; তবে তার সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে গিয়ে মনে হয়েছিল: ‘না, আমরা যে সময়ে বেঁচে রয়েছি, সেই সময়কে কোনো রকম পাশ না কাটানো এক দল ক্ষ্যাপাটে বুড়ো এই অ্যালবামে সত্যিকারের মিউজিক বাজাতে পেরেছে।’
লোকে আমাদের বলে, ‘আপনারা তো ডায়নোসর!’ জবাবে বলি, ‘হ্যাঁ; দুনিয়ায় আমাদের মতো খুব বেশিজন আর টিকে নেই।’
এই হলাম আমরা। এই আমাদের কাজ। তবে আমাদের বৃহত্তর দর্শক-শ্রোতা এ কাজে বেশ উদ্বেলিত হয়েছে। মেইডেন-এর অডিয়েন্স হলো প্লাইউডে বানানো এক টেবিলের মতো: প্রতি বছর আপনি একটা নতুন পরত যুক্ত করবেন, আর টেবিলটা স্রেফ বড় থেকে আরও বড় হয়ে উঠবে। কোনো সোস্যাল মিডিয়া কিংবা এমন কোনো কিছুর সাহায্যে নয়; বরং আমরা অর্গানিক্যালি বড় হয়েছি। লোকেদের সামনে গিয়ে, সাক্ষাতে পারফর্ম করে বড় হয়েছি আমরা।

আবারও তাদের সামনে গিয়ে পারফর্ম করতে পারার তর সইছে না আমার। আমরা এখনো আগুন; এখনো একটা রুমে একসঙ্গে ঢুকে স্রেফ এমনতর নতুন নতুন মিউজিক বাজিয়ে যেতে চাই– যেগুলোর কথা হয়তো আপনি ভাবতেও পারবেন না। হাঙ্গেরিতে (ডিপ পার্পল-এর) কনসার্টো ফর গ্রুপ অ্যান্ড অর্কেস্ট্রার একটা গিগে (ডিপ পার্পল বেজিস্ট) রজার গ্লোভারের সঙ্গে সম্প্রতি এমন কাণ্ডই করেছি। এ ছিল কয়েক বছরের মধ্যে সরাসরি দর্শকের সামনে আমার প্রথম মিউজিক বাজানো। সে এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রজার। আর, দশের শক্তি একের মধ্যে জাহির করার সেই ক্ষমতা মেইডেন-এর এখনো আছে।
সূত্র: ক্লাসিক রক। মিউজিক ম্যাগাজিন; যুক্তরাজ্য। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২