আর্টসেল ভিকটিম কারা?

0
164
আর্টসেল
মূল ছবি: চৌধুরী সিফাত/আর্টসেল ফেসবুক পেজ

লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আল কেমি

এক টাইপের মানুষদের ‘আর্টসেল ভিকটিম’ কেন বলতে যাচ্ছি, তা হালকা ব্যাখ্যা করে তারপর বলব তারা আসলে কারা। নাহলে অনেকে বিষয়টা না বুঝেই রেগে যাবে।

প্রথমে বলব, রিয়েল আর্টসেল জেনারেশনটা কাদের নিয়ে কীভাবে হলো। পরে কিছু কম্পারিজনের মাধ্যমে তাদের থেকে ভিকটিমদের আলাদা করি, চলেন…।

প্রোগ্রেসিভ রক-মেটাল, হেভি মেটাল মিলিয়ে প্রোগ্রেসিভ মেইন জনরা ধরে ২০০২ সালে আর্টসেল প্রথম অ্যালবাম বের করে অন্যসময় নামে। ইনিশিয়ালি, পথচলা গানটা ব্যাপক হিট হয়। এরপর, অবশ অনুভূতির দেয়াল, ভুল জন্ম, অন্যসময় (টাইটেল সং), মুখোশ, রাহুর গ্রাস-এ মানুষের ভালোলাগা বাড়তে থাকে।


তখনো
আমাদের
দেশের অধিকাংশ
লিসেনার ওয়ারফেজদের
হেভি রিফের গানগুলোতে
নেক্সট বাটন
চাপে

তখন, আর্টসেল-এর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু মজার ব্যাপারটা হলো, তখনো আমাদের দেশের অধিকাংশ লিসেনার ওয়ারফেজদের হেভি রিফের গানগুলোতে নেক্সট বাটন চাপে! একটু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটায় আর্টসেল। প্রায় সব গানেই হেভি রিফ থাকা সত্ত্বেও আর্টসেল শোনে সেই একই লিসেনার। তাইলে আর্টসেল-এর কম্পিটেটিভ অ্যাডভান্টেজ কী ছিল, তাই তো?

আর্টসেল
আর্টসেল । ছবি: বার্নার্ড রসি রয়/আর্টসেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

হ্যাঁ, নতুন জনরা পরিচয় করিয়ে দেওয়া একটা কারণ। এবং আরেকটা অবশ্যই লিরিকস। আর্টসেল কঠিন ও ইউনিক শব্দ দিয়ে শ্রুতিমধুর লাইন বানাতে পারছে। যার অধিকাংশ রূপক অর্থবহ। এদিকে, জনরার ডিম্যান্ডে তালের যেই ব্যাপক নতুনত্ব তার বিশদ প্রভাব দেখা যায় তাদের ভোকালে। এই ব্যাপারটা সহজে বুঝতে চাইলে, লিরিক দেখে আর্টসেল-এর গান শুনবেন। দেখবেন, লিরিকে কোথাও অর্ধেক লাইনে আছেন, অন্যদিকে গানের ভোকালে মনে হচ্ছে এখানে গানের একটা লাইন শেষ হলো, বা এর উল্টাটাও হতে পারে।

যাহোক, এভাবে আমরা লিসেনাররা তখনের অন্যতম হেভি একটা ব্যান্ডকে মেইনস্ট্রিমে রাজত্ব করার সুযোগ দেওয়া স্টার্ট করি। আর্টসেল জায়েন্ট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটা নতুন জেনারেশন। যেই জেনারেশনে প্রধানত দুই ধরনের মানুষ দেখা যায়। এক, মেটালহেড। দুই মেটাল-টেটাল বোঝে না, বাট আর্টসেল-এর গান বোঝে। এই জেনারেশনটাকে রিয়েল আর্টসেল জেনারেশন বলতেছি।

দুঃখ বিলাশ । আর্টসেল । অফিসিয়াল লিরিক্যাল ভিডিও

২০০২ সালেই অনুশীলন নামের একটা মিক্সড অ্যালবামে দুঃখ বিলাশ নামে একটা গান রিলিজ করে আর্টসেল। মূলত এখান থেকেই প্যাঁচটা লাগে। নিঃসন্দেহে এই গানটা ব্যাপক হিট, ভালো গান। কিন্তু অসুবিধা অন্য জায়গায়। বলব সেই অন্য জায়গার কথা। তার আগে ২০০৬ সালে রিলিজ হওয়া অনিকেত প্রান্তর অ্যালবামের কথা একটু মনে করিয়ে দেই। ধূসর সময়, লীন, তোমাকে, ঘুণে খাওয়া রোদ, স্মৃতি স্মারক— এ সবই জনপ্রিয় গান সেই অ্যালবামের। কিন্তু টাইটেল সং অনিকেত প্রান্তর রীতিমতো আখেরি হিট।

যা যা ইনফরমেশন দরকার ছিল, নিয়ে আসছি; এখন, কম্পারিজন করি চলেন। জাস্ট জলের গান ব্যান্ডের এক্স ভোকালিস্ট কনক দা’র একটা কথা একটু বলি। উনি একবার আড্ডায় আমাকে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে আসলে বাণীপ্রধান গান চলে। মানে, এখানে বেশিরভাগ লিসেনারই গানের লিরিকটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। পরে আসে ইন্সট্রুমেন্টের সাউন্ড।’


আর্টসেল জেনারেশনের প্রধান
দুই ধরনের দ্বিতীয় ধরন,
মানে মেটাল-টেটাল
বোঝে না বাট
আর্টসেল-এর
গান বোঝে, তাদের
মধ্যে কিছু মানুষ ওই
দুঃখ বিলাশ আর অনিকেত
প্রান্তর নিয়ে বেশিই সেন্টি খেয়ে বসে

এদিকে, আর্টসেল জেনারেশনের প্রধান দুই ধরনের দ্বিতীয় ধরন, মানে মেটাল-টেটাল বোঝে না বাট আর্টসেল-এর গান বোঝে, তাদের মধ্যে কিছু মানুষ ওই দুঃখ বিলাশ আর অনিকেত প্রান্তর নিয়ে বেশিই সেন্টি খেয়ে বসে। তাই, কনক দা’র কথা সত্যি হওয়ার কারণে বাণী প্রাধান্য দেওয়া কিছু নতুন লিসেনার এই দুই গানের লিরিক্যাল ট্র্যাপে পড়ে। যাদের অনেককে আমি দেখেছি, আর্টসেলকে চিনে না, কিন্তু অনিকেত প্রান্তরকে ব্যান্ডের মতো করে মানে; আর্টসেল চিনে না, কিন্তু দুঃখ বিলাশ গান শুনতে শুনতে আসলেই দুঃখ বিলাস করতে জানে। আপনিও পাবেন আশেপাশে এদের। ফেসবুকে খুঁজলেই পাবেন।

আচ্ছা, অনিকেত প্রান্তর কি কোনো রোমান্টিক গান? কিংবা ছ্যাঁকা খাওয়ার গান?

আর্টসেল
আর্টসেল । ছবি: আর্টসেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

না রে ভাই! এত কনফিডেন্টলি কেন বলতেছি? এই যে, ‘আর্টসেল কি ভবিষ্যত বলেছিল!!’অনিকেত প্রান্তর নিয়ে এ রকম একটা লেখা লিখছিলাম চার বছর আগে। যেটা পুরোটায় লিরিকের রূপকতাকে রোহিঙ্গাদের সাথে মিলিয়েছি এবং আর্টসেল-এর অফিশিয়াল পেজ থেকেও শেয়ার করেছিল। তাই বলাই যায়, আর্টসেল থেকেই স্বীকৃত এটা যে, এই গানের রূপক অর্থ অনেকভাবেই ভাবা যায়। সেক্ষেত্রে সরাসরি এটাকে রোমান্টিক বা ছ্যাঁকা খাওয়ার গান বলা যাচ্ছে না।

এখন বলেন, তাইলে এই গান নিয়ে ভুলভাল হাইপার হওয়ার কারণ কী? কারণ নাই আসলে।

অনিকেত প্রান্তর । আর্টসেল । অফিসিয়াল লিরিক্যাল ভিডিও

রিয়েল আর্টসেল ফ্যানদের সাথে শুধু দুঃখ বিলাশ বা অনিকেত প্রান্তর ফ্যানদের পার্থক্য এভাবে চোখে পড়ে। এখন এদের কেন ‘আর্টসেল ভিকটিম’ বলতে চাচ্ছি? কারণ, ‘ফ্যাশন ভিকটিম’ একটা টার্ম আছে। যে আসলে কোনো একটা ফ্যাশনের অরিজিনালিটি না বুঝে, ইভেন পারপাস বা আপ্লাই না বুঝেই ঐ ফ্যাশন ফলো করা শুরু করে এবং এতে তার পার্সোনালিটির মন্দা ও আনস্মার্টনেসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, সে ফ্যাশন ভিকটিম।

দুঃখ বিলাশ বা অনিকেত প্রান্তর ফ্যানদের ‘আর্টসেল ভিকটিম’ বলার কারণও একই। ফ্যাশনের জায়গায় আর্টসেল রিপ্লেস করার সাহস করেছি ফ্যাশনের অর্থ থেকে। ফ্যাশন হলো তাই, যা কিছু নিজস্বতা নিয়ে বড় জনগোষ্ঠীর কাছে পপুলার হয়। আর্টসেল-এর পপুলারিটি আমরা সবাই জানি।

কনসার্টে আর্টসেল-এর অডিয়েন্স। ছবি: আর্টসেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

যাহোক, আর্টসেল বেঁচে থাকুক রিয়েল জেনারেশনের মাঝে।


১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
Print Friendly, PDF & Email