সিস্টেম অব অ্যা ডাউনের ‘চপ স্যুয়ে!’: জন্মকথা ও প্রভাব

0
147
সিস্টেম অব অ্যা ডাউন

লিখেছেন: ডেভ এভারলি
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

৯/১১-এর দিনকয়েক পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সংঘ ‘ক্লিয়ার চ্যানেল’ নিজ মালিকানাধীন ১,১০০ রেডিও স্টেশনের প্রত্যেকটিতে একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল। সেখানে ‘লিরিক আপত্তিজনক’– এমন ১৬০টিরও বেশি গানের একটি তালিকা জুড়ে দিয়ে বলে হয়েছিল, টুইন টাওয়ারস আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষুব্ধ ওই সময়ে প্রোগ্রামার ও ডিজে’রা যেন সেগুলো না বাজান।

ড্রাউনিং পুল-এর বডিস ছিল সেই তালিকায়; ছিল এসি/ডিসিশট ডাউন ইন ফ্লেমস; ছিল রেইজ অ্যাগেইনস্ট দ্য মেশিন ব্যান্ডের সবগুলো গান! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন! ছিল (কানাডিয়ান-আমেরিকান শিল্পী) অ্যালানিস মরিসেটের আয়রনিক। আরও ছিল সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর সেই চপ স্যুয়ে!— যেটি লস অ্যাঞ্জেলেসের ব্যান্ডটির দ্বিতীয় অ্যালবাম টক্সিসিটির প্রথম গান; যে অ্যালবাম ৯/১১-এর ঘটনা যে সপ্তাহের, ঠিক সেই সপ্তাহেই প্রকাশ পেয়েছিল।

‘আই ডোন্ট থিংক ইউ ট্রাস্ট ইন মাই সেলফ-রাইচেস সুইসাইড/ আই ক্রাই হোয়েন অ্যাঞ্জেলস ডিজার্ভ টু ডাই’ [আমার স্বধার্মিক আত্মহননে তোমার আস্থা নেই, জানি; দেবদূতের যখন মৃত্যুই প্রাপ্য হয়ে ওঠে, আমি কাঁদতে থাকি’]– গানের এ কথাগুলো ৯/১১-পরবর্তী আমেরিকার প্রেক্ষাপটে ভীষণ অর্থবহ হয়ে ধরা দিয়েছিল; এবং গানটিকে ক্লিয়ার চ্যানেল নেটওয়ার্ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নীরবে।

‘মিউজিকে এ এক মর্যাদার পালক,’ বলেছেন সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর গিটারিস্ট ড্যারন ম্যালাকিয়ান। “অনেকগুলো গ্রেট রক ব্যান্ডই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। ব্যাপারটা এমন, দুয়েকবার যদি নিষিদ্ধই না হলেন, তাহলে ‘কুল গ্রুপে’র মধ্যে পড়ার যোগ্যতা নেই আপনাদের! আমার ধারণা, এটি [নিষেধাজ্ঞা] গানটিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করেছে।”

চপ স্যুয়ে! পারফর্ম করছে সিস্টেম অব অ্যা ডাউন

সত্যি কথা বলতে, তার ধারণা ভুল ছিল! চপ স্যুয়ে!কে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে শুরুতেই নিষেধাজ্ঞার মতো এমন দমন প্রচেষ্টা সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর ট্র্যাকগুলোর প্রতি উৎসাহকে মেরে ফেলে ব্যান্ডটির দ্রুত বেগবান ক্যারিয়ার থামিয়ে দিতে পারত। উল্টো বরং, এটি এ গানের মোমেন্টামের আদতে তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। ক্ষণে ক্ষণে ঝাঁকুনি দেওয়া, স্নিগ্ধতা ছড়ানো, প্রলাপ বকার ভঙ্গিমা ও বিভ্রান্তিকর পন্থার ভেতর ক্রমাগত আসা-যাওয়া হাজির করা এ গান আমেরিকার একেবারেই সেই বিশেষ সময়কালের মেজাজের ভাঙা আয়নার প্রতিফলন ঘটিয়েছে; সেইসব বিভ্রম ছড়ানো দিনগুলোর এক নিখুঁত সাউন্ডট্র্যাক এটি।



গান
ইউটিউবে
১ বিলিয়ন ভিউয়ের
মাইলফলক স্পর্শ করেছে

আজকের দিনে, চপ স্যুয়ে! দাঁড়িয়ে আছে সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে। একইসঙ্গে এটি একুশ শতকের একটি মেটাল ল্যান্ডমার্ক। স্পোটিফাইয়ে এটি ৬০০ মিলিয়নেরও বেশিবার বাজানো হয়েছে, যা কি না মেটালিকার যেকোনো সিঙ্গেলের চেয়ে বেশিবার, এবং স্লিপনট-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি গানের মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। গত বছর [২০২০] এ গান ইউটিউবে ১ বিলিয়ন ভিউয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে; এই প্রথম কোনো মেটাল গান এমন মাইলফলকে পৌছাল, লিংকিন পার্ক-এর ইন দ্য এন্ডকে ছাপিয়ে।

‘লেখার সময় আমি ভাবতেও পারিনি, চপ স্যুয়ে! আমাদের অন্য যেকোনো গানের চেয়ে কোনোভাবে আলাদা হয়ে উঠবে,’ বলেন ড্যারন। ‘তবে এ গানই আমাদের জন্য সাফল্যের দরজা খুলে দিয়েছে।’

৯/১১-এর আশু আগে ও পরের সময়কালটিতে লোকেরা চপ স্যুয়ে!র সঙ্গে ওই সময়কালের সংযোগ উপলব্ধি করেছে। এরপর প্রায় ২০ বছর কেটে গেলেও সেই সংযোগে কোনো ধরনের ঘটেনি বিঘ্ন!

***

আধুনিক মেটালের এই শ্রেষ্ঠতম গানের জন্ম সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর অভিষেক অ্যালবামের প্রচারণামূলক মিউজিক্যাল ট্যুর চলাকালে, ট্যুর বাসের ভেতর, কোনো এক অজ্ঞাত হাইওয়েতে।

‘বিছানায় হেলান দিয়ে আমি স্রেফ আনমনে বসে ছিলাম,’ বলেন ড্যারন। ‘নিজের সঙ্গে সবসময় রাখি, এমন একটি অ্যাকুয়েস্টিক গিটার ছিল হাতে। আমি সেটি বাজাতে শুরু করলাম, আর আনমনেই যেন লিখতে শুরু করলাম– চপ স্যুয়ে!

পুরোটা একবারে লিখেননি তিনি; কিংবা সে সময়ে তার মাথায় যে শুধু এই গানই ঘুরছিল, তা-ও নয়। এটি ছিল এই গিটারিস্টের পক্ষে টক্সিসিটির জন্য নিজ ব্যান্ডমেটদের ও প্রডিউসার রিক রিক রুবিনের কাছে হাজির করার আগে একান্তই নিজের মনে দিনের পর দিন ঝালিয়ে নেওয়ার এক বছরের সেরা প্রচেষ্টার একগুচ্ছ আইডিয়ার একটি।

সিস্টেম অব অ্যা ডাউন। বাঁ থেকে– জন ডলমায়ান [ড্রামার], শাভো ওদাদজিয়ান [বেজিস্ট], ড্যারন ম্যালাকিয়ান [গিটারিস্ট], সার্জ টানকিয়ান [ভোকাল]

সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর প্রথম অ্যালবামের গানগুলো যেখানে রক কনসার্টগুলোর সর্বত্র বেশ গভীর ছাপ ফেলার উদ্দেশ্যে তৈরি, সেখানে এই নতুন গানটি ছিল একইসঙ্গে তুলনামূলকভাবে আরও বেশি এক্সপেরিমেন্টাল এবং আরও বেশি মেলোডিক। এটি ব্রোকেন-গ্লাস রিফ থেকে কোয়াজাই-র‍্যাপড মিউট্যান্ট-ফাঙ্ক শ্লোক হয়ে একটি সাদামাটা দুই লাইনের কোরাসে উদ্ভাসিত হয়েছে। এমনকি প্রথম পর্যায়ে এটির পক্ষে স্রেফ আরেকটি সিস্টেম অব অ্যা ডাউন গানের চেয়ে আলাদা কিছু মনে হয়নি।

গানটির প্রাথমিক ভার্সনটি মোটামুটি একটা রূপ দেওয়া হলে, সেখানে থাকা ড্যারনের অরিজিনাল লিরিকটি ছিল একেবারেই ভিন্ন: ‘টেল মি/ টেল মি হোয়াট ইউ থিংক অ্যাবাউট টুমরো/ ইজ দেয়ার গন্না বি অ্যা পেইন অ্যান্ড স্যরো/ টেল মি হোয়াট ইউ থিংক অ্যাবাউট দ্য পিপল/ ইজ দেয়ার গন্না বি অ্যানাদার সিকুয়েল?’ [‘বলো, বলো, কালকের কথা ভাবছ কী? আবারও আসবে বেদনা ও দুঃখের দিন? বলো শুনি, মানুষের কথা কী ভাবছ? আরেকটা পরিণতি আসছে কি?’]


‘ওয়েক
আপ/ গ্র্যাব
অ্যা ব্রাশ অ্যান্ড
পুট অ্যা লিটল মেকআপ’

সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর গায়ক সার্জ টানকিয়ান পরবর্তীকালে গানটির শুরুর কথাগুলো পালটে দিয়ে করে পরিণত করলেন এক অবিস্মরণীয় তূরীয় ডাকে: ‘ওয়েক আপ/ গ্র্যাব অ্যা ব্রাশ অ্যান্ড পুট অ্যা লিটল মেকআপ’ [‘জেগে ওঠো, হাতে নাও ব্রাশ, মুখে করো মেকআপ’]।

সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর আরও অনেক গানের মতো এ গানের কথাগুলোরও শেষ টানা হয়েছে প্রাণবন্ত অথচ অস্পষ্ট বার্তায়; যেন অর্থ না বুঝলেও চিৎকার করে গলা মেলাতে পারে শ্রোতা। ঠিক যেমন, “হোয়াই’ড ইউ লিভ দ্য কীজ আপোন দ্য টেবিল?/ হেয়ার ইউ গো ক্রিয়েট অ্যানাদার ফেবল’ [‘টেবিলের ওপর কেন তুমি ফেলে যাচ্ছ চাবি? এখানে গড়ে তোলো আরেক উপকথা’]– এসব কথার মর্ম ‘গ্র্যাব’ করতে বা ধরতে পারা আজও মুশকিল!

‘আমার কাছে একে মনে হয়েছে, মানুষের ব্যাপারে আমরা কত বেশি জাজমেন্টাল, এমনকি মৃত্যু নিয়েও,’ ব্যাখ্যা দেন ড্যারন। “কেউ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমরা বলি, ‘আহা, বেচারা!’ আবার, কেউ যদি মাতাল অবস্থায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়, সেই খবর আপনার মনোভাব একদম উল্টে দেবে। তার মৃত্যুকে আপনি অন্যভাবে বিচার করতে শুরু করবেন। আমার কাছে ব্যাপারটা উদ্ভট লাগছিল। আমি বোধহয় গাঁজা কিংবা এ রকম কিছু টানছিলাম…।”

গানটির অর্থ যদি কিঞ্চিৎ বেতাল হয়েও থাকে, এটির স্তবকগুলোর শক্তিকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না: ‘ট্রাস্ট ইন মাই সেলফ-রাইচেস সুইসাইড।’ এই লাইনটিই এ গানের বাঁধ খুলে দেয়, এবং গানটি বানানোর সময় এর শিরোনামও রাখা হয়েছিল এ লাইন থেকে: ‘সুইসাইড’।

হলিউডের সেলো স্টুডিওতে অ্যালবামটির কাজ করেছেন এ ব্যান্ড ও রিক রুবিন। ‘রাত, ভোর রাত পর্যন্ত কাজ করেছি আমরা,’ ড্যারন সেই সেশনের স্মৃতিচারণায় বলেছেন। ‘আমার বয়স তখন ২০-এর শুরুর দিকে, বহু কিছু নিয়ে নিরীক্ষা করেছিলাম। সেসব আলাপ বরং না করাই ভালো…।’

অ্যালবামের প্রথম গান কোনটি হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা যখন এলো, সর্বসম্মতভাবে ঠিক হলো, চপ স্যুয়ে!। ‘সুইসাইড’ শিরোনামটি পাল্টানোর দরকার ছিলই তাদের। ‘কেননা, গানটি আসলে সুইসাইড নিয়ে নয়। শিরোনামটি একটু বিভ্রান্তিকর ছিল,’ বলেন ড্যারন।

টক্সিসিটি অ্যালবামের প্রচ্ছদ

হ্যাঁ, বিভ্রান্তিকর ও বহুবিধ অর্থ উস্কে দেওয়ার মতো। শোনা যায়, শিরোনামের কারণে গানটি হয়তো রেডিওগুলো বাজাবে না, এমন আশঙ্কায় শিরোনাম পাল্টে দেওয়ার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল লেবেল কোম্পানি। ড্যারন অবশ্য এমন প্রচারণা উড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘কেউ আমাদের ওপর চাপ দেয়নি। বরং আমাদেরই মনে হলো, এটি অ্যালবামের প্রথম গান, এটি না বাজানোর কোনো অজুহাত দেওয়ার সুযোগ কেন আমরা রেডিওকে দেব?’

তিনি ইতোমধ্যেই শিরোনাম পাল্টে চপ স্যুয়ে! রেখে দিয়েছিলেন। এটি অংশত ‘সুইসাইড’কে অর্ধেক টুকরো করে ফেলল, আর অংশত ছোটবেলায় দেখা সাদাকালো গ্যাংস্টার সিনেমাগুলো থেকে অনুপ্রাণিত। “সেখানে এমনতর কথাই তারা বলত: ‘আমরা ওকে চপ স্যুয়ে [খাদ্যবিশেষ] বানিয়ে ফেলব!’ তার মানে, ‘আমরা ওকে মেরে ফেলব।’ কথাটি পুরোপুরিই মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত।”

***

চপ স্যুয়ে! মুক্তি পায় ২০০১ সালের ১৩ আগস্ট, টক্সিসিটি অ্যালবামটি মুক্তির তিন সপ্তাহ আগে। এটির তুমুল গতিময় ভিডিওর শুটিং করা হয়েছিল এক সময়কার ঝোঁপ-ঝাড়ে ঢাকা একটি সানসেট স্ট্রিপ হোটেলের আঙিনায়, যেখানে ড্যারন ও বেজিস্ট শাভো ওদাদজিয়ান তাদের শৈশবে হুকার ও জাঙ্কিদের সঙ্গে হামাগুড়ি দিতেন। আর সেই স্মৃতিই গানটির ব্যক্তিত্বকে বারবার পাল্টে দিয়েছে, যেখানে গিটারিস্টের বিস্ফারিত চোখের উদ্বেগ ও মেহেদির উল্কি আঁকা ‘মস্তকবিহীন’ অবয়ব যেন চিৎকার করে ওঠে, ‘উদ্ভট লোকগুলোর কাছ থেকে দূরে থাকো!’

চপ স্যুয়ে! মিউজিক ভিডিও

এ গানের মিউজিক ও ভিজুয়ালে ন্যু মেটালের অরিজিনাল ফ্রিকস-অন-অয়া-লিশের মেজাজ থাকলেও কর্নলিম্প বিস্কিট ব্যান্ডের জন্য মেগা সাফল্যের জোয়ার এনে দেওয়া ওয়ালেট-চেইনড-হুক আর্মির চেয়ে এ ছিল বহু দূরের ব্যাপার। ভিডিওটি এমটিভিতে ব্যাপক হিট হয়, আর যারা সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর অভিষেক অ্যালবাম সংগ্রহ করেননি, তাদের কাছেও ব্যান্ডটিকে দাপটের সঙ্গে পৌঁছে দেয়। তখনই প্রথমবার ড্যারন বুঝতে পারেন, তিনি একটা হিট গান লিখে ফেলেছেন!

‘ভিডিও যখন প্রকাশ পায়, আমরা তখন একটা ট্যুরে,’ বলেন তিনি। “তখনো সেটি দেখিনি; তবে একটা শপিংমলে যাওয়ার পর লোকজন হুট করেই আমাদের চিনে ফেলল: ‘আপনাদের সঙ্গে ছবি তুলতে পারি?’ এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনোই আমাদের সঙ্গে ঘটেনি।”


টক্সিসিটি
প্রকাশের ঠিক
এক সপ্তাহ পর ওয়ার্ল্ড
ট্রেড সেন্টারে দুটি বিমান
নিয়ে আক্রমণ করে আল কায়েদা,
আর আগে ‘সুইসাইড’ নামে
পরিচিত চপ স্যুয়ে!
গানটির সম্প্রচারে
রাশ টেনে ধরায়
ওই ঘটনা

কথিত আছে, ৭২টা আইডিয়া ধরা দিলে সেখান থেকে একটা ব্যবহার করাই ভালো! টক্সিসিটির কার্যকর প্রথম পাঠ হিসেবে চপ স্যুয়ে! হয়ে উঠেছিল এ কথার দারুণ উদাহরণ। এ গানের সাফল্য ওই অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার প্রথম সপ্তাহেই শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ কপি বিক্রি হওয়ার সৌভাগ্য এনে দেয়। তবে টক্সিসিটি প্রকাশের ঠিক এক সপ্তাহ পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দুটি বিমান নিয়ে আক্রমণ করে আল কায়েদা, আর আগে ‘সুইসাইড’ নামে পরিচিত চপ স্যুয়ে! গানটির সম্প্রচারে রাশ টেনে ধরায় ওই ঘটনা।

তখনই সবকিছু উদ্ভট হয়ে উঠতে শুরু করে। তাদের ফ্যানবেজের টিনফয়েল-হেটের ডানা যেন উড়াল দিতে থাকে ‘সেল-রাইচেস সুইসাইডে’র দিকে। চপ স্যুয়ে!র জন্য কী ধরনের ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছিল, সেটি এ ব্যান্ডের সদস্যরা তখন জ্বরগ্রস্ত কল্পনাও ভাবতে পারেননি!

“ভক্তরা বলতে শুরু করল, ‘আরে, এই লোকগুলো তো পয়গম্বর! ঘটনা ঘটার আগেই বলে দিতে পারে,'” বলেন ড্যারন। “‘সেলফ রাইচেস সুইসাইড,’ ‘অ্যারিয়েলস ইন দ্য স্কাই’ [টক্সিসিটিঅ্যারিয়েলস ট্র্যাক থেকে], ‘জেট পাইলট’…। আমার মনে হলো, ‘বাহ, দারুণ তো, তারা তাহলে এমনটাই ভাবে! আমরা আসলে এ কাজই করেছি, সে কথা তাদের কাছে তাহলে বিশ্বাসযোগ্য করানো যাক।”


৯/১১-এর ঘটনা সত্ত্বেও, কিংবা
বরং এ কারণেই হয়তো,
গানটি আমেরিকার
আত্মার গভীরে
জায়গা করে
নেয়

মেটালের ইন্ডাস্ট্রিয়াল-কন্সপাইরেসি কমপ্লেক্স নিশ্চিতভাবেই ছিল। ছিল ক্লিয়ার চ্যানেলের ঝামেলা বাঁধানোও; তবু তাদের মৌন নিষেধাজ্ঞা চপ স্যুয়ে!র উত্থান আটকাতে পারেনি। ৯/১১-এর ঘটনা সত্ত্বেও, কিংবা বরং এ কারণেই হয়তো, গানটি আমেরিকার আত্মার গভীরে জায়গা করে নেয়।

***

‘সে সময়ে রেডিওতে বাজানো যেকোনো গানের চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিল এ গানের ভীষণ রকমের এক্সপেরিমেন্টাল দিকটি; তবে এর একটি সত্যিকারের মেলোডিক দিকও রয়েছে– যেটি মানুষকে আকৃষ্ট করেছে,’ বলেন ড্যারন। ‘আমি লিখতে বসলে এ ব্যাপারটি একেবারে সহজাতভাবে ধরা দেয় আমার কাছে। তা শুধু চপ স্যুয়ে!র বেলায়ই ঘটেনি। বিওয়াইওবি, টক্সিসিটি কিংবা রেডিওতে সুপারহিট হওয়া সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর অন্যান্য গানের ক্ষেত্রেও আমি এর বিস্তার ঘটিয়েছি।’

সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর সুপারস্টার পর্যায়কালের সূচনা ঘটানো বারুদে আগুনটি জ্বালিয়েছে চপ স্যুয়ে!; আর তা টক্সিসিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের টপচার্টে ১ নম্বর অ্যালবাম হওয়ার পথে এগিয়ে দিয়েছে, এবং এর স্রষ্টাদের সংবাদপত্রের শিরোনাম হওয়া থেকে শুরু করে আরও বেশি মর্যাদার অধিকারী হতে করেছে সাহায্য। শুধু তা-ই নয়, এটি ন্যু মেটালের শেষ উল্লাসেরও ঘোষক হয়ে উঠেছে: টক্সিসিটি ছিল এই মাধ্যমের সর্বশেষ সত্যিকারের ব্লকবাস্টার অ্যালবাম।

‘ন্যু মেটাল ক্যাটাগরির প্রতি আমাদের কি আসলেই কোনো টান ছিল?’ বলেন ড্যারন। ‘আমার মনে হয় না, আমাদের মিউজিক আসলে ওই ধরনের ব্যান্ডগুলোর মতো। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের মিউজিক স্রেফ সিস্টেম অব অ্যা ডাউন-এর মতোই।’

চপ স্যুয়ে! আগস্ট বার্নস রেড-এর কাভার

জনরা নিয়ে হয়তো মতবিরোধ থাকতে পারে, তবে চপ স্যুয়ে!র সাফল্য নিয়ে তা নেই। ডিজিটাল পরিসংখ্যানই সেই সাক্ষ্য দেয়: ইউটিউবে ১ বিলিয়ন ভিউ, স্পোটিফাইয়ে ৬২৩ মিলিয় স্ট্রিম! সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এটির সাংস্কৃতিক প্রভাব। জগতের নানা প্রান্তে এ গানের নানা রকম কাভার হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে: মেটাল ভার্সন (এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মোশনলেস ইন হোয়াইট ব্যান্ডেরটি), ক্ল্যাসিক্যাল ভার্সন, সেলো ভার্সন, টিনি ড্রাম ভার্সন, চিল-আউট ভার্সন– ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ অনুষ্ঠানে যে ভার্সন উপস্থাপন করেছিলেন কমেডিয়ান টিনা ফে, এবং অনিবার্যভাবে, কৈশোরপূর্ব বয়সী ইন্টারনেট ড্রাম বিস্ময়প্রতিভা ন্যান্ডি বুশেলের ভার্সন। অতি সাম্প্রতিক হিসেবে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে, লকডাউন চলাকালে আমেরিকান মেটালকোর ব্যান্ড আগস্ট বার্নস রেড এ গানের কাভার করেছে।



এমনই
একটি ট্র্যাক–
যেটি রক মিউজিকের
একটি যুগের পরিচয়বাহী

‘এটি লিভিং অন অ্যা প্রেয়ার [বন জোভি] কিংবা ডোন্ট স্টপ বিলিভিং-এর [জার্নি] মতোই একটি গান,’ বলেছেন আগস্ট বার্নস রেড-এর গিটারিস্ট জেবি ব্রুবেকার– যিনি সেই ২০০১ সালেই, একজন পাংকপ্রেমী শিশু হিসেবে এ গানের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। ‘এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে রয়েছে, আর পরিণত হয়েছে সেই গুটিকয়েক গানের একটিতে– যেগুলো সবারই শোনা। আমার কাছে এ এমনই একটি ট্র্যাক– যেটি রক মিউজিকের একটি যুগের পরিচয়বাহী।’

চপ স্যুয়ে! বোধহয় নিজের জীবন নিজেই এমন এক পন্থায় বেছে নিয়েছিল, যেটি হয়তো সিস্টেম অব অ্যা ডাউন কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি; তবে মিউজিক্যাল ট্যুরের গাড়িতে, নিজ বিছানায় শুয়ে যে মানুষ এ গান লিখেছিলেন দুই দশকেরও বেশিকাল আগে, তার কাছে এটি একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে রয়েছে।

ড্যারন ম্যালাকিয়ান

‘এখনো আমরা এ গান গাই, লোকে এখনো এ গানের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অনুভব করে– ব্যাপারটি আমাকে গর্বের অনুভূতি দেয়,’ বলেন ড্যারন। ‘তবে মজার ব্যাপার হলো, ভ্রমণবাসে থাকাকালে একদমই ছোট্ট একটি মুহূর্তে আমার মাথায় আসা এই ছোট্ট গান এত বড় কিছু হয়ে উঠতে পারে, সেটি এরসঙ্গে নিজে সম্পৃক্ত না থাকলে ভাবাও সম্ভব না। বিশেষ করে, আমার পক্ষে।’


ডেভ এভারলি: সিনিয়র প্রিন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল মিউজিক এডিটর; লন্ডন, ইংল্যান্ড
সূত্র: মেটাল হ্যামার; মাসিক হেভি মেটাল ও রক মিউজিক ম্যাগাজিন; যুক্তরাজ্য। এপ্রিল ২০২১
Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: লালগান । ঢাকা, বাংলাদেশ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল: সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো : প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৩ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; বেলা তার; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান