পাংক রক: ইতিহাস ও বিবর্তন

0
61
পাংক রক

লিখেছেন: ক্যাসি ব্রেনান
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

পাংক রকের আদি উৎসের তর্ক ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই, তবে একটি বিষয় নিশ্চিত করেই বলা হয়: বাস্তব আদর্শ থেকেই এর উৎপত্তি। পাংক রক জনরা’টির আবির্ভাব ঘটেছে রক অ্যান্ড রোলের উত্থান এবং এর পূর্ববর্তী হিপি মুভমেন্টের প্রতি তাচ্ছিল্যবোধ নিয়ে অর্থের স্ফীতি ও গানের দৈর্ঘ্য– উভয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানানোর বৈপ্লবিক আদর্শ থেকেই। হতোদ্যমভাবে বাণিজ্যিকীকৃত রক মিউজিকের প্রতি একটি ঘৃণা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে পাংক শিল্পীদের লক্ষ্য ছিল মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মেদ মুছে ফেলা এবং শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া।

পাংক উৎপত্তির ইতিহাস

নিউইয়র্ক সিটির কিংবদন্তিতুল্য ক্লাব ‘সিবিজিবি’র জন্ম আসলে যুক্তরাষ্ট্র পাংক রকের জন্মস্থান হয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে ঘটেনি। ১৯৭৩ সালে (আমেরিকান মিউজিশিয়ান) হিলি ক্রিস্টাল প্রতিষ্ঠিত ‘সিবিজিবি’ মূলত কান্ট্রি, ব্লুগ্র্যাস ও ব্লুজ জনরার মিউজিক লক্ষ্য করেই পথচলা শুরু করে। র‍্যামোনস, ব্লন্ডিটকিং হেডস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যান্ডগুলোর আবির্ভাব ঘটেছে এই ব্লুগ্র্যাস ক্লাব থেকেই। ব্লন্ডিটকিং হেডস যখন নিজস্ব স্টাইল তৈরির প্রতি মনোযোগী, র‍্যামোনস তখন প্রতিভাধর পাংক রকের এই ঢেউয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল।

তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে বলা যায়, ইতিহাসের প্রথম পাংক রক ব্যান্ড হিসেবে র‍্যামোনস দ্রুততার সঙ্গে দুই-তিনটি কর্ড বাজানোর দক্ষতা দেখিয়ে একটি রিপিটিটিভ ডাউনওয়ার্ড মোশনে নিজস্ব স্বরের জানান দিয়েছিল। পাংক ব্যান্ডগুলোর চলার পথটি গড়ে দিয়েছে র‍্যামোনস, যে পথ রকস্টারদের মহিমান্বিত করে তোলার বদলে বরং প্রমাণ করে, (মিউজিশিয়ান হিসেবে) আপনি প্রতিভাধর কিংবা দেখতে সুন্দর কি না– পাংক ব্যান্ডে সেসবের কোনো গুরুত্ব নেই।

র‍্যামোনস
র‍্যামোনস

(র‍্যামোনস ব্যান্ডের গিটারিস্ট) জনি র‍্যামোন [ওরফে, জন কামিংস] ‘রোলিং স্টোন’ ম্যাগাজিনে ব্যান্ডটির সূচনাকালের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছিলেন: ‘আমরা [ব্যান্ড সদস্যরা] একসঙ্গে জড়ো হওয়ার কারণ আসলে, আমাদের কারও ভাগ্যেই কোনো প্রেমিকা জুটেনি; ছাদে উঠে নেশাপাতি করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। মেয়েরা শুধু দামি গাড়িওয়ালা ছেলেদেরই পছন্দ করত।’

একইসময়ে দুনিয়ার অন্য জায়গাগুলোতেও আক্ষরিক অর্থেই পাংক রক জ্বলে ওঠতে শুরু করে। বর্ণিল পাংক ব্যান্ড সেক্স পিস্টলস তাদের প্রথম শো পারফর্ম করে যুক্তরাজ্যের লেজার ফ্রি ট্রেড হলে; সেটিকেই যুক্তরাজ্যে পাংক ব্যান্ডের জন্ম বলে গণ্য করেন অনেকেই। ১৯৭৫ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়া ও লন্ডন– উভয় জায়গাতেই নতুন নতুন পাংক ব্যান্ডের আবির্ভাব ঘটে; অন্যদিকে, অনেকটা একইসময়ে নিউইয়র্কের ‘সিবিজিবি’তে হেরোইনের নেশায় বুঁদ হয়ে যেতে থাকেন পাংক রকের নতুন অনুরাগীরা।

হেরোইনের প্রতি সবগুলো পাংক ব্যান্ডেরই গভীরতর প্রেম ছিল; পাংক রকের প্রথমদিকের দৃশ্যপটগুলোতে এই মাদকের ছিল অনেক বড় ধরনের প্রভাব। হেরোইনেই প্রতি তাদের ভালোবাসা তাদেরকে সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। সে সময়ে হেরোইনকে বড় ধরনের মাদক হিসেবে গণ্য করা হতো না; বরং ক্লাবে হেরোইন নেওয়া লোকজন প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে জাহির করত।

কারমেলিটা। জিনি অ্যালিন

ওয়ারেন জিভনের কারমেলিটা গানটি পাংক জনরার লেবেল দিয়ে কাভার করেছেন আমেরিকান গায়ক-গীতিকার জিজি অ্যালিন; এই গানে হেরোইন ব্যবহারের বিষয়টি রয়েছে: ‘কারমেলিটা আমাকে শক্ত করে ধরো, আমি বোধহয় যাচ্ছি ডুবে অতলে, আর শহরের উপকণ্ঠে আমি আকণ্ঠ বুঁদ– হেরোইনে।’ [“কারমেলিটা হোল্ড মি টাইটার/ আই থিংক আ’ম সিংকিং ডাউন/ অ্যান্ড আ’ম অল স্ট্রাং আউট অন হেরোইন/ অন দ্য আউটস্কার্টস অব টাউন।”]

‘নিজে নিজে করে দেখা’র [‘ডু-ইট-ইউরসেল্ফ’] একটি অতুলনীয় মনোভাব নিয়ে এমন এক পথে পথচলা শুরু পাংক রকের, যে পথে তারা ভীষণ ফুলেফেঁপে ওঠা ও কর্তৃত্ব দেখানো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রতি নিজেদের ঘৃণা প্রকাশ করতে সক্ষম। পাংক আর্টিস্ট ও ফ্যান– উভয়পক্ষই এই জনরার পণদ্রব্য এড়িয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন, যেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এই জনরাকে তাদের ‘আগামীর বড় পণ্য’ হিসেবে তকমা দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

‘নিজে নিজে করে দেখা’র মনোভাব নিয়েই স্টুডিওতে এসে ব্যবহৃত, পুরনো, পড়ে থাকা মিউজিক গিয়ার ব্যবহার করতেন পাংকরা, আর নিজে-নিজেই গড়ে তুলতেন ব্যান্ড, আবার নিজেরাই প্রযোজনা করতেন নিজেদের ফ্যাক্টরি রেকর্ডস।

এই ‘নিজে নিজে করে দেখা’র প্রথম ইপি হলো– বাজককস-এর স্পাইরাল স্ক্র্যাচ, যেটি দেখিয়ে দিয়েছে– চাইলে যে কোনো ব্যান্ডই নিজেদের অ্যালবাম নিজেরা প্রকাশ করতে পারে; শুধু তাই নয়, কীভাবে ‘নিজে নিজে করা’ যায়, সেটির ব্যাখ্যাসহ নির্দেশনাও ছেপে দেওয়া হয়েছিল ওই অ্যালবামে। ব্রিটিশ পাংক ব্যান্ড বাজককস আসলে ‘নিজে নিজে করে দেখা’ আদর্শবাণীর একটি বিপ্লবের সূচনা করেছিল; মুনাফাকেন্দ্রিক রেকর্ড কোম্পানিগুলোর বাইরে যেন পাংক টিকে থাকতে পেরে, সেই পথ দেখিয়েছিল এটি।


বেশির
ভাগ পাংক
রক রেকর্ডই বিক্রি
হতো প্লাস্টিকে ব্যাগে পুরে

পাংকের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টাইলের প্রতি বড় ম্যাগাজিনগুলোর এড়িয়ে চলার মনোভাবকে পাত্তা না দিয়ে, ‘জাইন্স’-এর মতো স্বাধীনভাবে স্বপ্রকাশিত ও স্বনির্মিত ম্যাগাজিনগুলো ১৯৭০-এর দশকে পাংক মিউজিকের প্রচারণা চালিয়ে গেছে। এইসব ফ্যান-মেড জাইন্সের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তারা আসন্ন ‘চোরাগোপ্তা’ পাংক ব্যান্ডের বিভিন্নগুলোর ৪৫টি রেকর্ডের [অ্যালবাম] খোঁজ পেয়েছিলেন। সেইসব রেকর্ডের গায়ে ট্রেডিশনাল স্লিভ থাকতেই হবে– এমন কোনো ব্যাপার ছিল না; বরং বেশির ভাগ পাংক রক রেকর্ডই বিক্রি হতো প্লাস্টিকে ব্যাগে পুরে।

যুক্তরাজ্যজুড়ে থাকা ইনডিপেনডেন্ট রেকর্ড স্টোরগুলো এইসব ‘নিজে নিজে করে দেখা’ পাংক রেকর্ডগুলোর ক্ষেত্রে রেকর্ড ডিস্ট্রিবিউটরের ভূমিকা রেখেছিল। পাংক মিউজিকের প্রোডাকশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সামলানোর এই নতুন পন্থা ছিল এর নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই এবং তা স্বাধীনচিত্তেই।

‘ডু-ইট-ইউরসেল্ফ’ মুভমেন্টের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বড় বড় ‘খেলারাম’রা চলে এসে বহু পাংক ব্যান্ডের ধারণ করে রাখা স্বাধীনতাকে বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। ব্রিটিশ রেকর্ড লেবেল কোম্পানি ‘পলিডর’-এর কাছে হাজির হয় দ্য ডেমনড, আর বাজককস হাজির হয় মার্কিন রেকর্ড লেবেল কোম্পানি ‘ইউনাইটেড আর্টিস্টস রেকর্ডস’-এর কাছে। বাকি পাংক ব্যান্ডগুলো হয় ‘ছিনতাই’ হয়ে গিয়ে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ লুফে নেয়, নয়তো আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য ধরে রাখে।

সেক্স পিস্টলস
সেক্স পিস্টলস

পাংকের বিবর্তন

সেক্স পিস্টলস-এর ফ্রন্টম্যান সিড ভিসিয়াস ১৯৭৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হেরোইনের ওভারডোজে মারা যান। এই ট্রাজেডিকে অনেকেই পাংকের সমাপ্তি বিন্দু হিসেবে গণ্য করেন। ভিসিয়াসের মৃত্যুর পর পাংক স্পষ্টতই যাত্রা অব্যাহত রাখলেও নিঃসন্দেহে অন্য কিছু একটাতে রূপান্তর ঘটে এটির। পাংকের মৌলিক ও রূঢ় ফর্মটি এরপর টিকে থাকে মাত্র তিন-চার বছর।

ট্রেডিশনাল পাংক এমন একটি জনরায় রূপান্তরিত হয়, যেটি ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত পাংকের চেয়ে আরও বেশি ক্রোধের ঘটায় প্রদর্শন। হার্ডকোর পাংকের জন্ম ঘটে সেইসব কঠোর বিধিমালা ও প্রবণতার কারণে, যেগুলো ট্রেডিশনাল পাংক জনরার মধ্যে জায়গা তৈরি করে নিয়েছিল; এবং, হার্ডকোর স্পষ্টতই এইসব ট্রেডিশনাল পাংক রক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ছিল বেমানান।

১৯৮০-এর দশকে হার্ডকোর পার্ক বস্তুত পাংকের এমন এক সাউন্ড দিয়ে রক-জাতিকে মাতিয়ে তোলে, যা এর আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল অধিক দ্রুতগতি ও ক্রোধের সমাহার। যুক্তরাষ্ট্রে পৌরুষদীপ্ত হার্ডকোর পাংকের নতুন দৃশ্যপটের দেখা মেলে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে। ১৯৭৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে চারজন আফ্রিকান-আমেরিকান গড়ে তোলেন ব্যাড ব্রেনস; এই ব্যান্ড হয়ে ওঠে ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকের হার্ডকোর পাংক ব্যান্ডগুলোর অন্যতম স্বতন্ত্র উদাহরণ।

ব্যাড ব্রেনস
ব্যাড ব্রেনস

ব্যাড ব্রেনস-এর ব্যানড ইন ডিসি অ্যালবামের গানগুলোর কথায়, পল ‘এইচ.আর.’ হাডসনের কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে– যদি ওয়াশিংটনে তাদের বিদ্রোহী সত্তাকে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়, তাহলে নিজেদের ইচ্ছেমতো যেকোনো জায়গায় ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার মতো স্বাধীনতার বার্তা। ওই জাতির রাজধানীতে নিষিদ্ধ হওয়া ব্যান্ডটিকে কী শক্তি জোগাবে, টাইটেল সংয়ে সেই আলোচনাও জারি রাখেন এর ভোকাল ‘এইচ.আর.’: ‘ডি.সি.তে নিষিদ্ধ হলে যাওয়ার আছে আরও হাজারও জায়গা/ সাঁতরে পাড়ি দেবো আটলান্টিক, কেননা একমাত্র সেখানেই যেতে পারি আমি/ তুমি, তুমি আমাকে পারবে না করতে আঘাত/ কারণ? ডি.সি.তে নিষিদ্ধ আমি…’ [“ব্যানড ইন ডি.সি. উইথ অ্যা থাউজেন্ড মোর প্লেসড টু গো/ গন্না সুইম অ্যাক্রোস দ্য আটলান্টিক, কজ দ্যাট’স দ্য অনলি প্লেস আই ক্যান গো/ ইউ, ইউ কান্ট হার্ট মি/ হোয়াই? আ’ম ব্যানড ইন ডি.সি….”]।

হার্ডকোর পাংক এক সময় পরিণত হয় পোস্ট-পাংকে, আর সেটিই আহ্বান জানায় গ্রাঞ্জ জনরার। পোস্ট-পাংক টার্মটি সেক্স পিস্টলস থেকে শুরু করে সিম্পল মাউন্ডস পর্যন্ত যেকোনো পরিসীমার এক ধরনের একটি ড্রেন ক্যাচার হয়ে ওঠে।


পাংক,
পোস্ট-পাংক
ও গ্রাঞ্জ– এই সবগুলো
জনরাই ট্রেডিশনাল রকের
শিল্পরুচিকে প্রত্যাখ্যান করেছে

হার্ডকোর পাংক কখন পোস্ট-পাংক ও গ্রাঞ্জ জনরায় পরিণত হলো, সেই টাইমফ্রেম ও লেবেলগুলো এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একটি ব্যাপার স্পষ্ট: এই জনরাগুলোর আদর্শগুলো পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। পাংক, পোস্ট-পাংক ও গ্রাঞ্জ– এই সবগুলো জনরাই ট্রেডিশনাল রকের শিল্পরুচিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বস্তুত, এই জনরা-ত্রয়ী সেইসব রকিস্ট বা রকবাদীদের ধারণ করেছে, যারা নিরীক্ষামূলক টেকনিক ও নন-রক মিউজিক্যাল স্টাইলের পক্ষপাতী।

পাংক ফ্যাশন

নিজস্ব উচ্ছৃঙ্খল ও অসঙ্গতিপূর্ণ স্টাইল ছিল পাংক জনরার। বেকারত্বের কারণে টাকার টানাটানি কিংবা শিক্ষার্থী বলে উপার্জন কম থাকার সঙ্গে মানানসই লাইফস্টাইলই হয়ে উঠেছিল পাংক ফ্যাশন।

এখন যেটিকে মহিমান্বিত রিপড-জিন্স লুক বলা হয়, যেটির আবির্ভাব ঘটেছিল র‍্যামোনস-এর হাত ধরে; পাংকের আগে এইসব পোশাক দেখলে ধরে নেওয়া হতো– আপনি আসলে গরিব, আপনার তেমন কাপড়চোপড় নেই। জনি র‍্যামোনের ক্ষেত্রে অবশ্য এটি একেবারেই ছিল সত্য; শতচ্ছিন্ন এক জোড়া জিন্স ছাড়া পরার মতো আর কিছু ছিল না বলেই তিনি ওই রিপড-জিন্স পরতেন।

বাজককস
বাজককস

পাংক ফ্যাশনের একটি প্রোটোটাইপ বা আদিরূপ হয়ে ওঠা– সেফটি পিন ও মোহক লুকের প্রবর্তন করেছিল ব্রিটিশ পাংক রক ব্যান্ড বাজককস। যে ফ্যাশনকে এক সময় অতি দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হতো, পাংক ব্যান্ডের কারণে সেটির পুনর্জন্ম ঘটে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে চলেছে।


অজান্তেই পাংকের প্রতীকগুলো
পরিধানের মাধ্যমে পাংক
দর্শনের অবমাননা
করছেন এক
শ্রেণির
দর্শক-শ্রোতা

আজকের দিকে, উৎকৃষ্ট পাংক ফ্যাশন আসলে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বাজারে টাকার ছড়াছড়ি এনে দিয়েছে। ‘আরবান আউটফিটারস’ ও ‘ফরেভার২১’-এর মতো মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিগুলো বিপুলসংখ্যক দর্শক-শ্রোতার কাছে বিক্রি করতে তাদের ভার্সনের ‘পাংক’ ফ্যাশন। এই ‘পাংক’ শিল্পরুচির সন্ধানরত যারা, তারা খুব সহজেই এইসব পরিধেয় আইটেম– শতচ্ছিন্ন জামাকাপড় কিংবা পাংক-অনুপ্রাণিত স্লোগান বা ব্যান্ড কিনে নিচ্ছেন। এর ফলে নিজের অজান্তেই পাংকের প্রতীকগুলো পরিধানের মাধ্যমে পাংক দর্শনের অবমাননা করছেন এক শ্রেণির দর্শক-শ্রোতা।

পাংক কি এখনো অস্তিত্বমান?

পাংক মরেনি। যুক্তরাষ্ট্রে যদিও এটির ভাবমূর্তি তেমন বড় আকারে হয়তো চোখে পড়ছে না, তবে দুনিয়াজুড়ে পাংক বেশ বড় পরিসরেই টিকে রয়েছে। আজকের দিনে জাপান, ইসলামি রাষ্ট্রগুলো ও মেক্সিকোতে সবচেয়ে বড় পরিসরের পাংকের দেখা মেলে।

অন্যান্য বড় ধরনের পাংক দৃশ্যপটের মধ্যে রয়েছে রায়ট গর্ল ফেমিনিস্ট পাংক– যে আন্ডারগ্রাউন্ড ফেমিনিস্ট পাংক মুভমেন্টের সূচনা ঘটেছিল ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন রাজ্যে, সেটি এখন ২৬টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীবাদী সচেতনতা, পাংক স্টাইল ও রাজনৈতিক চেতনার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই সাবকালচার মুভমেন্ট।

অন্যদিকে ইস্টার্ন ব্লক পাংক দৃশ্যপটও এখনো টিকে রয়েছে; যদিও স্বয়ং পাংক অনুরাগীদের কাছেও এটি হয়তো একটি ব্লাইন্ড স্পট, তবে চেকোস্লোভাকিয়া ও ইস্টার্ন জার্মানির তরুণদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার মাধ্যমে পাংকের আদর্শগুলোকে এটি প্রবাহমান রেখেছে।


নোংরা
রাজনীতির
বিরুদ্ধে পাংকের
গর্জে ওঠার সাক্ষ্য
দেয় স্বয়ং ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রে পাংকের পুনরুত্থান যে আবারও ঘটবে, আমেরিকান রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে পাংকের গর্জে ওঠার সাক্ষ্য দেয় স্বয়ং ইতিহাস; যতদিন পর্যন্ত দেশটিতে বর্তমান রাজনৈতিক আবহমণ্ডল উত্তাল থাকবে, আমেরিকান পাংক রক মিউজিকের পুনরাবির্ভাব ততদিন ঘটবেই।


ক্যাসি ব্রেনান: সিনিয়র স্টাফ রাইটার, অ্যাচোনা। ২ ডিসেম্বর ২০১৯
[অ্যাচোনা: শিক্ষার্থীচালিত স্কুল নিউজপেপার; অ্যাকাডেমি অব দ্য হলি নেমস; গার্লস স্কুল, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র]
Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: লালগান । ঢাকা, বাংলাদেশ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল: সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো : প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৩ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; বেলা তার; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান