লিখেছেন: মার্ক এলিয়ট
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
১৯৭০-এর দশকের গ্রেট ব্রিটেনকে হয়তো একটি একেঘেমিতায় ভরা, একরঙা জায়গা হিসেবে ধরা যেতে পারে। ‘দ্য সামার অব লাভ’ ফেনোমেনার আওয়াজ মিলিয়ে গেছে বহুদিন। সে জায়গা দখল করে নিয়েছিল সম্ভবত উত্তর আয়ারল্যান্ডে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, এবং একদিক থেকে, পুরো জাতি খুইয়ে ফেলেছিল নিজস্ব মুহূর্ত। সেই পরিস্থিতিতে ‘গ্ল্যাম রক’ [কিংবা ‘গ্লিটার রক’– এ নামেই যুক্তরাজ্যে বেশি পরিচিত] জুড়ে দিয়েছিল রঙের এক বিরল বিচ্ছুরণ, আর একটি একেবারেই ভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ছড়িয়েছিল স্ফুলিঙ্গ।
এটি অংশত ছিল সে সময়ের সেই স্ফীত যুগচেতনাটির প্রতি একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে; আর অংশত ছিল মিউজিকের এখনো কিছু নিরেট সীমারেখা পেরিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে– সেই সাক্ষ্য আরও দিতে, গ্ল্যাম রকের পেছনে আরও জোরাল শক্তি নিহিতের জন্য, আরও বেশি কৈশোরক রোমাঞ্চ ছড়ানোর উদ্দেশে।
এ ছিল নিশ্চিতভাবেই মিউজিককে রোমাঞ্চিত করে তোলার ব্যাপার; তবে এ ক্ষেত্রে জমকালো পোশাক পরার নেপথ্যে যেমন ছিল আত্মপরিচয়কে দর্শণীয় করে তোলা; একইসঙ্গে তা ছিল প্রলুব্ধকারী যৌন উত্তেজনার একটি রোমাঞ্চের মহাগুরুত্বপূর্ণ উপাদানও।
…
আধিপত্য
ছিল সেইসব
ব্যগ্র তরুণের–
যাদের পরনে ডেনিম,
মাথায় লম্বা চুল, অথচ
নিজেদের মিউজিক্যাল
সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যারা
যারপরনাই
সিরিয়াস
…
গ্ল্যামের উৎপাদন ক্ষেত্র নিহিত ছিল একটি পরিপক্ক রক মার্কেটে– যেখানে কর্তৃত্বের আবির্ভাব ঘটেছিল আরও বেশি কুটনীতিবিদসুলভ ও সিরিয়াস মেজাজে। আধিপত্য ছিল সেইসব ব্যগ্র তরুণের– যাদের পরনে ডেনিম, মাথায় লম্বা চুল, অথচ নিজেদের মিউজিক্যাল সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যারা যারপরনাই সিরিয়াস। এই মনোভাবের বিবর্তন ঘটেছিল সম্ভবত ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগের ‘ফ্লাওয়ার পাওয়ার’ মুভমেন্ট থেকে। তবে সেই মুভমেন্ট ততদিনে হারিয়েছিল নিজের সব তেজ।
গ্ল্যাম রকারেরা অবশ্য সেই আন্দোলন কিংবা এমনকি পূর্বসুরি হিপিদের বিপরীতে দুনিয়াকে পাল্টে দেওয়ার কোনো চাওয়া নিয়ে আসেননি; তারা বরং সেটা থেকে পালিয়ে বেঁচে, এমন একটি ঋদ্ধ ও নাটুকে দুনিয়া সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন– যেটি পারফরম্যান্স আর্ট সাম্রাজ্যের খুব কাছাকাছি ধরনের রোমাঞ্চকর।
মার্ক বোলেন ও ‘টি. রেক্স’, গ্ল্যাম সুপারস্টারগণ…
চাক বেরি ও লিটল রিচার্ডের মতো শিল্পীদের জাঁকজমক কাণ্ডকীর্তিই সম্ভবত গ্ল্যাম মুভমেন্টের সৃষ্টি-উৎস; তবে দ্য রোলিং স্টোনস-এর মিক জ্যাগার ১৯৫০-এর দশকের এইসব আইকনের স্টাইলকে ভীষণভাবে আপন করে নিলেও মার্ক বোল্যানই এটির সঙ্গে সত্যিকারের বোঝাপড়া করতে পেরেছেন এবং হয়ে উঠেছেন গ্ল্যাম রকের প্রথম সত্যিকারের তারকা। লন্ডনবাসী মার্ক ফিল্ড ১৯৬০-এর দশকের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন মিউজিক ব্যবসায় একটি ব্রেকের সন্ধান চালিয়ে, অথচ ১৯৭০ সালে তার ধারে-কাছেই একটি নতুন নাম ও একটি ব্যান্ড গড়ে উঠে ছড়াতে শুরু করেছিল আলো– বোল্যান ও টি. রেক্স।

এ ব্যান্ডের রাইড অ্যা হোয়াইট সোয়ান গানটি ইউকে চার্টে জায়গা করে নেয় শরৎকালে, আর ‘নম্বর ২’তে উঠে পড়ে। এর ফলে পরের বছর আশেপাশের অন্যান্য টপচার্টেও পা বাড়ায় গানটি। পরের সিঙ্গেল হট লাভ লেখা হয়েছিল মাত্র ১০ মিনিটে। সেটি ব্রিটিশ চার্টের শীর্ষে জায়গা করে নেয় টানা ৬ সপ্তাহ, এবং গ্ল্যাম রক সাউন্ডের সত্যিকারের জ্বলজ্বলে স্বাক্ষর হয়ে ওঠে।
অংশত অস্কার ওয়াইল্ডের ফুলবাবু এবং অংশত শ্রমিক শ্রেণির বুনো বালক– এই দুইয়ের মিশেলে তৈরি বোল্যানের ইলেকট্রিফাইং স্টাইলটি বিবিসির টপ অব দ্য পপস অনুষ্ঠানের দর্শকদের মুহূর্তেই মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলে, এবং রাতারাতি তাকে পরিণত করে একজন জন্মগত সুপারস্টারে। গেট ইট অন বোল্যানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক হিট গান], জিপস্টার, টেলিগ্রাম স্যাম, ব্যাং অ্যা গং (গেট ইট অন), মেটাল গুরু ও চিলড্রেন অব দ্য রেভোলুশন হয়ে ওঠে ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের প্রাত্যহিক সাউন্ডট্র্যাক।
যুক্তরাষ্ট্রে খুব বেশি সাফল্য না পেলেও আন্তর্জাতিক স্তুতিতে ভেসে যেতে থাকেন বোল্যান, এবং ১৯৭২ সালের সিনেমা বর্ন টু বুগিসহ [পরিচালক: রিঙ্গো স্টার] একের পর এক ট্যুর ও প্রমোশনাল প্রজেক্টের সঙ্গে বিরামহীন রেকর্ডিং সিডিউলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।
এ জায়গাই আগুন জ্বালিয়ে দেবে এবং দশকটির মাঝামাঝি সময়ে হিট গানগুলোর দাপট কমতে থাকবে– এমনটা যেন অনিবার্যই ছিল; কেননা, এ সময়ে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন বোল্যান। ১৯৭৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকারের অকাল সমাপ্তি ঘটে; তার বয়স তখনো ৩০ হয়নি।
ডেভিড বোয়ি ও জিগি স্টারডাস্ট
গ্ল্যাম রক মুভমেন্টের কেন্দ্রস্থলে অল্পকালের জন্য জায়গা করে নেন আরেকজন বহুরঙা মিউজিশিয়ান– ডেভিড বোয়ি। তার মতো এমন এক বিস্ময়কর প্রতিভা নিজেকে সহসাই ভিন্ন কোনো পথে পরিচালিত করবেন– সেটি নিশ্চিতভাবেই অনিবার্য ছিল; তবে নিজের ‘জিগি স্টারডাস্ট’ [এই ছদ্মনামেও কাজ করেছেন তিনি] সত্তাটি তিনি এমন এক ক্যারিকেচারে সৃষ্টি করেছিলন– যেটির ভেতর দিয়ে সেই সময়কালকে সম্পূর্ণভাবে অনুভব করা সম্ভব।
…
তার রিফ-হেভি পপ-রক ব্লেন্ড
বিশেষত কিশোর-কিশোরী
এবং আরও বেশি
প্রথানুসারী
ও
পরিপক্ক
মিউজিক অনুরাগীদের
মধ্যে তৈরি করেছিল আবেদন
…
নিউইয়র্কভিত্তিক আর্টিস্ট অ্যান্ডি ওয়ারহোলের আভাঁ-গার্দ সৃষ্টিকর্মে দারুণভাবে প্রভাবিত বোয়ি নিজেকে একজন ‘নানা জিনিস কুড়িয়ে চলা স্পর্শযোগ্য চিন্তক’ হিসেবে অভিহীত করতেন, এবং তার এই থিয়েট্রিক্যাল ছদ্মনামের আড়ালেই ১৯৭২ সালে স্টারম্যান ও দ্য জ্যঁ জেনির মতো গান প্রকাশ করেছেন; আর তা সে বছরজুড়ে যত গ্ল্যাম স্টারের আনাগোনা ছিল– তাদের তুলনায় অনেক বেশি বৃহত্তর অর্থেই। তাকে দেখতে লাগত উভলিঙ্গের মতো, তবে তার রিফ-হেভি পপ-রক ব্লেন্ড বিশেষত কিশোর-কিশোরী এবং আরও বেশি প্রথানুসারী ও পরিপক্ক মিউজিক অনুরাগীদের মধ্যে তৈরি করেছিল আবেদন।
১৯৭৩ সালের গ্রীষ্মে নিজেকে গ্ল্যাম রক থেকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত হন বোয়ি, আর জিগি অবসর নেন হ্যামারস্মিথ ওডিয়নের এক কিংবদন্তিতুল্য গিগ থেকে। কয়েক দশক পর টপ অব দ্য পপস অনুষ্ঠানে নিজের গিটারিস্ট মিক রনসনকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে একটি মেকি যৌন উৎপীড়নের ভঙ্গিমায় স্টারম্যান-এর যে পারফর্ম করেন বোয়ি, সেটি পুরো যুগের একটি সাংস্কৃতি স্পর্শবিন্দু হয়ে রয়ে গেছে। এ ছিল নিশ্চিতভাবেই প্রলুব্ধকর কর্মকাণ্ড।
বোল্যানের বন্ধু বোয়ি দাবি করেছেন, জিগি চরিত্রটিতে ১৯৫০-এর দশকের রকস্টার ভিন্স টেইলরের প্রভাবই বেশি; তবে বোল্যানের টি. রেক্সও যে সেই ব্যক্তিত্বের রূপধারণে সাহায্য করেছে, সেটি স্পষ্ট করে বলা সম্ভব। বলে রাখা ভালো, কিংবদন্তি প্রডিউসার এবং বোয়ির সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন সহযোদ্ধাদের একজন– টনি ভিসকোন্তি সেই সময়ে তাদের উভয়ের সঙ্গেই কাজ করেছেন।

ফলে বোয়ি যখন অন্যদের চেয়ে নিজের মহিমা বাড়িয়ে তুলেছিলেন, তাতে তার নিজের প্রভাব ছিল অবিসংবাদিত। ব্রিটিশ কাল্ট ব্যান্ড মট দ্য হুপল-এর প্রতি দীর্ঘকালের মুগ্ধতা ছিল তার। তিনি যখন জানলেন, ১৯৭২ সালের মার্চে সুইজারল্যান্ডে একটি শো শেষে ব্যান্ডটি ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে, তখন সেই ভাঙন রোধে নিজের একটি নতুন গান তাদের দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তার সেই উপহার সাময়িকভাবে কাজে লেগেছিল; আর ব্যান্ডটি একটি নতুন রেকর্ড লেবেলের সঙ্গে হয়েছিল চুক্তিবদ্ধ: বোয়ি-প্রযোজিত অল দ্য ইয়ং ডুডস হয়ে ওঠে একটি বড় ধরনের সফল গান এবং একইসঙ্গে একটি গ্ল্যাম রক ক্ল্যাসিক। ইউকে সিঙ্গেলস চার্টে ‘নম্বর ৩’-এ জায়গা করে নেয় এটি, এবং এর ফলে একই নামে একটি বোয়ি ও রনসন প্রযোজিত অ্যালবামের জন্ম দেয় ব্যান্ডটি।
লাইভ কনসার্টে মট দ্য হুপল বরাবরই ছিল হিংস্র রকমের দাপুটে ব্যান্ড হিসেবে সুখ্যাত; কিন্তু ব্যান্ডটির ভেতর ভাঙন চলতে থাকে, আর তারা পরিণত হয় প্রতিনিয়ত সদস্য বদল ঘটতে থাকা একটি ব্যান্ডে। এভাবে আরও ৬টি হিট ট্র্যাক উপহার দেওয়ার পর অবশেষে ১৯৭৪ সালের শেষদিকে এই ব্যান্ড পুরোপুরি ভেঙে যায়।
স্লেড
হিট গানের স্কোরকার্ডে গ্ল্যাম রকের আধিপত্য বাড়তে থাকে, এবং ব্রিটিশ চার্টগুলোতে এই সাউন্ড দ্রুতই জায়গা করে নেয়। ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক তালিকাগুলো উপচে পড়তে থাকে এ ধারার গানের ছড়াছড়িতে।
১৯৬৯ সালের শেষদিকে স্লেড ছিল একটি স্কিনহেড ব্যান্ড; অথচ ১৯৭১ সালের শেষে তাদের কজ আই লাভ ইউ ইউকে চার্টের শীর্ষে জায়গা করে নেয় এবং সদস্যদের গায়ে চাপে সিল্কের জ্যাকেট, মাথায় কাঁধ পর্যন্ত চুল। যথাযোগ্যভাবেই, চার সদস্যের এই ব্যান্ডের আগের গানগুলোর মধ্যে হিট ছিল খুবই কম, এর মধ্যে ছিল লিটল রিচার্ডের একটি গানের কাভারও; তবে নতুন অবয়বে তাদের ভাবমূর্তি পুরোদস্তুর ভিন্ন হয়ে ওঠে।

এখন হয়তো কল্পনা করাও কঠিন, তবে স্লেড ছিল একটি ডোমেস্টিক পপ ফেনোমেনা। প্রথম ব্যান্ড হিসেবে তাদের তিনটি সিঙ্গেল জায়গা করে নেয় ইউকে চার্টের ‘নম্বর ১’-এ। স্কুল-শিক্ষকদের খেপানোর মতো ইচ্ছেকৃতভাবেই ‘অশিক্ষিত’ [ভুল বানান ও উচ্চারণে] ধরনের জ্যামগুলোর মধ্যে ছিল– টেক মি ব্যাক ’ওম, মামা ওইয়ার অল ক্রেজি নাউ, কাম অন ফিল দ্য নয়েজ, [পরে, ১৯৮৩ সালে ইউএস রকার্স কোয়াইট রাউট এবং ১৯৯৫ সালে ব্রিটপপ ব্যাড বয়েজ ওয়েসিস এটির কাভার করেছিল] এবং স্কুইজ মি প্লিজ মি— এই ব্যান্ডের এ গানগুলো ব্রিটিশ চার্টে মাত্র ২৪ মাসের মধ্যেই শীর্ষে জায়গা করে নেয়।
গান যত হিট হতে থাকে, সদস্যদের পোশাক হতে থাকে তত বর্ণিল; তবে ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া বহুবর্ষজীবী ক্রিসমাস ক্লাসিক মেরি এক্সমাস এভরিবডি ব্যান্ডটির শ্রেষ্ঠ সময়ের প্রমাণ দেয়: অল্প কয়েক বছর পরে আবির্ভূত হতে যাওয়া পাংক ধারার ওপর এ গানের বেশ বড় ধরনের প্রভাব পড়েছিল।
এই ব্যান্ডের এমন সুখের মৌসুম অবশ্য খুব বেশিদিন টিকেনি: ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে একটি বলিষ্ঠ চার্টের পুনরুত্থান ঘটে, এবং তারপর থেকে স্লেড-এর রেকর্ডিং ও ট্যুর সিডিউল চলতে থাকে বিক্ষিপ্তভাবে।
সুইট
স্লেড-এর তাৎপর্যের প্রমাণ সুইট— মেকআপের প্রশ্নে, এমনকি পরবর্তীকালের চার্টের পরিসংখ্যানের সঙ্গে যথেষ্ট মানিয়ে নিতে না পারা সত্ত্বেও। চার সদস্যের এই ব্যান্ডের টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে টপ অব দ্য পপস-এর পাল্টাপাল্টি আইটিভি’র আয়োজন লিফট অফ-এ। তাদের হিট গানের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে ১৯৭১ সালে, কো-কো ও ফানি ফানির মতো অসার বুলির জয়গানে। তবে এই ব্যান্ডকে চূড়ায় তুলে দেয় তাদের অ্যানথেমিক গান– ব্লকবাস্টার: ১৯৭৩ সালের শুরুতে ব্রিটিশ চার্টের শীর্ষে টানা ৫ সপ্তাহ জায়গা ধরে রাখে এটি।

সাধারণত সিঙ্গেল অ্যাক্টেই আনাগোনা করা ব্যান্ডটি সেই নিকি চিন ও মাইক চ্যাপম্যানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়– যারা গ্ল্যাম-পপ সাউন্ডকে ব্রিটিশ হিট প্যারেডে কর্তৃত্ব করার মতো নিখুঁত করে তোলেন। ব্লকবাস্টারও চিন-চ্যাপম্যানের লেখা; এটির সাউন্ড এ ব্যান্ডের আগের হিট গানগুলোর তুলনায় খানিকটা হার্ডার রকের, আর এটিই প্রথমবারের মতো নিজস্ব রেকর্ডসে বাজানো প্রথম ঘটনা হয়ে ওঠে ব্যান্ডটির জন্য।
হেল রেইজার, বলরুম ব্লিটজ ও টিনেজ র্যাম্পেজ— টানা তিনটি ইউকে ‘নম্বর ২’ সাফল্যের পর রক অ্যাক্টে অনিবার্য টেনশন ছড়িয়ে পড়ে, এবং তাদের রাইটিং-অ্যান্ড-প্রোডাকশন টিমের মধ্যে সম্পর্ক হয়ে ওঠে তিক্ত। ব্যান্ডটির বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতার লালসায় অংশীদারিত্ব ভেঙে পড়ে, এবং ১৯৭৫ সালে ফক্স অন দ্য রান দিয়ে একটি দারুণ সূচনা সত্ত্বেও হিট গানের সংখ্যা কমতে থাকে। যদিও ইউরোপে বেশ ভালোই চলছিল, তবু ১৯৭৮ সালের লাভ ইজ লাইক অক্সিজেনই এই ব্যান্ডের সর্বশেষ ঝঙ্কার।
গ্ল্যাম রকের সঙ্গে ‘নষ্টামি’: এলটন জন
এখন ভাবতে হয়তো অবাক লাগবে, তবে সত্য হলো, এলটন জনের শুরুর দিকের ক্যারিয়ার আসলে গ্ল্যাম রকের সাউন্ড ও অবয়বের সঙ্গে খানিকটা ‘ফ্লার্ট’ করেছে। তার ক্যারিয়ারের শেষ কয়েকটি বছর রাজত্ব করা সফটার ব্যালেডধর্মিতার প্রাধান্যের সঙ্গে তার সেই যুগের হিট গানগুলোর– যেমন স্যাটারডে নাইট’স অলরাইট (ফর ফাইটিং) ও নিশ্চিতভাবেই ক্রোকোডাইল রক-এর সম্পর্ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গ্ল্যাম রক মুভমেন্টটির বিধ্বংসী মনোভাবের সঙ্গে একাত্ম হতে এবং সেটি নিয়ে নিজের মতো খেলা করতে চেয়েছিলেন এলটন।
দ্য হুর মাস্টারপিস রক অপেরা টমির শুট হয়েছিল ১৯৭৫ সালের একটি ফিচার ফিল্মের জন্য, এবং সেখানে (এলটনের) রকেট ম্যানকে পিনবল উইজার্ড হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিরাট প্লেহাউসে অতিকায় ডক মার্টেন বুটস, ব্রেস এবং অত্যুজ্জ্বল পোশাকে এলটনের অবিস্মরণী উপস্থিতি– দেখতে লাগছিল দুর্ধর্ষ। ছিল এই তারকার ট্রেডমার্ক চশমা– ওভারসাইজড, এবং স্টেজ লাইটের আলোয় জ্বাজ্বল্যমান; এই রূপে তার ক্লাসিক ভাবমূর্তির আরেকটি অবয়ব তৈরি হয়েছিল।
একই বছরের ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক অ্যান্ড দ্য ব্রাউন ডার্ট কাউবয় অ্যালবামেও জায়গা পেয়েছে গানগুলো। অ্যালবামটির কাভার ডিজাইন দেখতে একেবারেই সুইট ও স্লেড-এর কাভার ডিজাইনগুলোর মতো।
আরএকে লেবেল
ফর্মুলাকে যখন একেবারেই সিম্পল মনে হয়, জনরা’র সংগ্রাহকরা আপনাকে তখন হয়তো বলবেন, এতসব সাফল্যের জন্য প্রচুর ব্যর্থ অ্যালবাম প্রকাশেরও প্রয়োজন রয়েছে। আরএকে’র মতো লেবেল কোম্পানিগুলো আয়রন ভার্জিন, স্ক্রিমার ও জিমি জুকবক্স-এর মতো ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে– যেগুলো নিজেদের গান দিয়ে চার্টে জায়গা পেতে হয়েছে ব্যর্থ, যেগুলোকে এখন সাধারণত ‘জাংকশপ গ্ল্যাম’ বলে ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়।
অন্যদিকে, হ্যালো— যাদের দুটি হিট গান ছিল– এমন ব্যান্ড ছিল একদল কিশোরের, যারা তাদের লস্ট অ্যানথেম এনাদার স্কুল ডের মতো হারিয়ে গেছে সে সময়ের আরেকটি অসাধারণ গ্ল্যাম রেকর্ড লেবেল– বেলে’র সঙ্গে।
চিন-চ্যাপম্যান জুটি একজন আরএকে তারকার জন্ম দিয়েছিল– সুজি কোয়াট্রো– যার ক্যান দ্য ক্যান গানটি ১৯৭৩ সালে ইউকে চার্টে জায়গা করে নেয়। সুজির প্রথমদিকের কাজগুলো মূলত রক ধারার। এরমধ্যে একটি প্রগ্রেসিভ অ্যাক্টও রয়েছে– ক্রেডল।
এইসব রকঘেঁষা লোকজন কীভাবে গ্ল্যাম রকের ছায়ায় বিরাট সাফল্য অর্জনের মতো সাউন্ডের জন্ম দিয়েছিলেন, সেটি বেশ বিস্ময়করই। সাফল্যটি প্রথমত ছিল ইউরোপজুড়ে; যদিও ১৯৭৪ সালে অল শক আপ কাভার করে নিজ দেশে ছোটখাট হিট হলেও এলভিস প্রিসলির কাছ থেকে দারুণ প্রশংসা পেয়েছিলেন সুজি।
সুজির দ্বিতীয় ইউকে চার্ট-টপার– ডেভিল গেট ড্রাইভ ছিল চার্টে জায়গা করে নেওয়া তার সর্বশেষ গান; তবে তার ক্যারিয়ার তাতে থেমে থাকেনি এবং এখনো তিনি এ মাধ্যমের একটি দাপুটে ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেছেন।
চিন-চ্যাপম্যান জুটির সুফল নিয়ে সেই দশকে আরও সফল হয়েছিল মিডাস; ছিল মাড আর স্মোকিও। তবে এসব ব্যান্ডের কর্মকাণ্ড ছিল মূলত পপ ধারার। একইভাবে, মাইক লিন্ডারের সঙ্গে গ্যারি গ্লিটারের পার্টনারশিপ তাকে ও দ্য গ্লিটার ব্যান্ডকে বেশ কিছু হিট গান এনে দিয়েছে। ১৯৭৪ সালে তাদের অ্যাঞ্জেল ফেস টপ চার্টে ‘নম্বর ৪’। পরের দুই বছর ইউকে টপ টেন হিটসে আরও পাঁচবার জায়গা করে নেয় এটি।
গ্ল্যাম রকের প্রভাব
সে যুগের অন্যান্য পপ অ্যাক্টেও গ্ল্যামের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে স্কটিশ বয়-ব্যান্ড বে সিটি রোলারস ও স্লিক— ভবিষ্যৎ আল্ট্রাভক্স ফ্রন্টম্যান মিজ উরের একটি প্রাথমিক উদ্যোগ। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউকে সিঙ্গেলস চার্টের শীর্ষে জায়গা করে নেয় ফরেভার অ্যান্ড এভার। এই ব্রুডিং ব্যালাডটি উরে লিখেননি; তবে ভিয়েনার অর্কেস্ট্রার কিছু চিহ্ন এখানে নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। উইজার্ড, অ্যালভিন স্টারডাস্ট এবং দ্য রাবেটস-এরও কিছু গ্ল্যামধর্মী পপ গান বেশ হিট হয়, যার মধ্যে রয়েছে– অ্যাঞ্জেল ফিঙ্গারস (অ্যা টিন ব্যালেড), মাই কু কা চু ও সুগার বেবি লাভ।

একটা অ্যাক্ট দৃঢ়ভাবেই পপ-ঘেঁষা ছিল না– রক্সি মিউজিক। ফাইন আর্টসে স্নাতক ব্রায়ার ফেরির নেতৃত্বে, সিন্থ উইজার্ড ব্রায়ান ইনোর সঙ্গে তার অংশীদারিত্বে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ডটি। পরের বছরের শেষদিকে তাদের ভার্জিনিয়া প্লেইন জায়গা করে নেয় ইউকে ‘নম্বর ৪’-এ। গণমাধ্যমে বেশ প্রশংসাও পায়। বিকাশের বছরগুলোতে ব্যান্ডের সদস্যদের আগমন-প্রস্থান যদিও ব্যাপকভাবে চলছিল, তবু সেলফ টাইটেলড অভিষেক অ্যালবাম এবং এরপর ফর ইউর প্লিজার অ্যালবামটি তাদের জন্য সলিড বাণিজ্যিক ও ক্রিটিক্যাল মোমেন্টাম ধরে রাখে।
…
প্রাপ্তবয়স্ক
শ্রোতাদের জন্য
গ্ল্যাম সৃষ্টি করেছিল
রক্সি মিউজিক, আর
তাদের দর্শক-শ্রোতারা
ছিল দৃঢ়ভাবেই
বিশ্বস্ত
…
ফেরি আরেকটু নিরুত্তেজ একক ক্যারিয়ারের দিকে পা বাড়ালেও আর্ট-স্কুল যোগ্যতার প্রমাণ ব্যান্ডটিতে বাড়তে থাকে, এবং সময়ে সময়ে এটি বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করে নেয়। পুরো দশকের পরিক্রমায় এই ব্যান্ড হয়ে ওঠে পরিপক্ক, এবং এরপর অ্যাভালন-এর গান মুক্তি দেয়– যেটি রক্সি মিউজিক-এর প্রথমদিকের স্কার্ফ-অব-দ্য-নেক স্টম্পারের চেয়ে বহু মাইল দূরের এবং একটি ঋদ্ধ সৃষ্টি হিসেবে অনুরাগীদের মধ্যে ব্যান্ডটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। প্রাপ্তবয়স্ক শ্রোতাদের জন্য গ্ল্যাম সৃষ্টি করেছিল রক্সি মিউজিক, আর তাদের দর্শক-শ্রোতারা ছিল দৃঢ়ভাবেই বিশ্বস্ত।
পারফরম্যান্সের শিল্পরাজ্যে প্লাবিত হওয়া আরেকটি ব্যান্ড– স্পার্কস। দুই ভাই রন ও রাসেল মায়েল আমেরিকার ওয়েস্ট কোট থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন ১৯৭৩ সালে; পরের বছর মুক্তি পাওয়া তাদের কিমোনো মাই হাউস অ্যালবামটি ছিল একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ইলেকট্রিক বেমানান সৃষ্টি, যেটির দিস টাউন আইন্ট বিগ এনাফ ফর দ্য বোথ অব আস হিট হয়।
স্বতন্ত্র স্টাইলিং সহকারে এই জুটি টিভি প্রোগ্রামগুলোতে স্বতঃস্ফূর্ততার প্রমাণ রেখেছে; সিনেমার দুনিয়াকেও আকৃষ্ট করেছেন এই দুই ভাই। রোলারকোস্টারসহ কিছু সিনেমায় রয়েছে তাদের গান। অ্যামেচার আওয়ার ও গেট ইন দ্য সুইংসহ আরও কিছু হিট গান উপহার দেওয়া এই ব্যান্ড এই ময়দানে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল কাল্ট ব্যান্ডগুলোর একটি হয়েই রয়ে গেছে।
অ্যালিস কুপার, লু রিড ও নিউইয়র্ক ডলস
স্পার্কস ও রক্সি মিউজিক যদি নিজেদের ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন স্রেফ রুচির জালে বন্দি রেখে থাকে, অ্যালিস কুপার করেছেন ঠিক তার উল্টো। প্রচারপ্রবণ, ওটিটি যুগ তার ‘কুখ্যাত’ গর্জনকে জ্যান্ত রেখেছে। ফ্রিক শোয়ের চেয়েও বেশি কিছু যারা দেখতে চান, তাদের জন্য কুপার ছিলেন একজন কনজিউমেট শোম্যান– যার পক্ষে স্রেফ একটি কলম দিয়েও দারুণ একটি সুর বানিয়ে ফেলা সম্ভব।
…
লন্ডনে
স্পার্কস-এর
মতো তিনি শহরটির
আওয়াজি তল্লাটগুলোতে
দাবড়ে বেড়াতে
থাকেন
…
তার পঞ্চম অ্যালবামে মুক্তি পাওয়া স্কুল’স আউট গানটি তাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে একটি ব্রেকথ্রু এনে দেয়; জায়গা করে নেয় চার্টের শীর্ষে। এরপর হ্যালো হারি ও নো মোর মি. নাইস গাই-এর মতো হিট গানগুলো দেখিয়ে দেয়, স্কুল’স আউটই একমাত্র নয়, তার পক্ষে আরও ভালো অ্যানথেম সৃষ্টি করা সম্ভব। আমেরিকান গ্ল্যাম সাফল্যের দৃশ্যপটে কুপার ছিলেন তুলনামূলক বেমানান, তবে লন্ডনে স্পার্কস-এর মতো তিনি শহরটির আওয়াজি তল্লাটগুলোতে দাবড়ে বেড়াতে থাকেন।
প্রয়াত লু রিড– যিনি ১৯৭০ সালের আগস্ট দ্য ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে ‘আরসিএ’র [লেবেল কোম্পানি] সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে তিনি এসেছিলেন নিজের সেলফ-টাইটেলড সলো অভিষেক অ্যালবামের রেকর্ড করতে। যদিও সেটি খুব একটা কাজে দেয়নি; তবে বোয়ি-অ্যান্ড-রনসন প্রযোজিত পরবর্তী অ্যালবাম ট্রান্সফরমার ছিল মাস্টারপিস– ক্লাসিক হিট ওয়াক অন দ্য ওয়াইল্ড সাইড সহকারে।
অ্যাটলান্টিকের ওপারে, জোব্রিয়াথ নিজের রেকর্ডিং ক্যারিয়ার শুরুর পথে ব্যাপক প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিলেন; অথচ সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই গ্ল্যাম তারকার অভিষেক অ্যালবামটি হয়েছিল সুপার ফ্লপ। ১৯৭৫ সালে অবসরের ঘোষণা দেব জোব্রিয়াথ। এ সময়ে তিনি দুটি অ্যালবামের রেকর্ড করেন; যদিও সেগুলোর দারুণ পুনরাবির্ভাব ঘটে নতুন শতাব্দিতে। এতকাল পরে এসে এখন এগুলোকে ‘লস্ট’ গ্ল্যাম ক্লাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়।
…
যৌন রাজনীতির কারণে
শহুরে অঞ্চলে
গ্ল্যামের
পথচলা
সবসময়ই ছিল কঠিন
…
যৌন রাজনীতির কারণে শহুরে অঞ্চলে গ্ল্যামের পথচলা সবসময়ই ছিল কঠিন; তবে পূর্ব উপকূল অঞ্চলের এ ধারার মিউজিকের জন্য উর্বর ভূমি বলে মনে হয়, যেখানে বেশ স্বাধীনভাবে ভাবতে পেরেছিলেন এর স্রষ্টারা।

নিউইয়র্ক ডলস গড়ে ওঠে ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে; গ্ল্যামের স্বভাবজাত যাত্রার সঙ্গে জুড়ে যায় আরও বেশি চরম গীতিমালা। তাদের ১৯৭৩ সালের সেলফ-টাইটেলড অভিষেক অ্যালবামটি সমালোচকদের মাঝে ব্যাপাক সাফল্য অর্জন করে। সেটির প্রডিউসার ছিলেন টড রান্ডগ্রেন। ২০১০ সালে একে নিজের সর্বকালের প্রিয় অ্যালবাম বলে ঘোষণা করেন মরিসি।
মেইনস্ট্রিমে গ্ল্যাম রকের প্রতিধ্বনি
দ্য স্টুজেস-এর কাজ এবং দ্য কিংকস-এর জেন্ডার-সুইচিং লোলার মতো হিট গানকে গ্ল্যামের প্রজ্বলিত ক্যাটালগের ওপেনিং চ্যাপ্টার হিসেবে যদি চিহ্নিত করা হয়, তাহলে কোনো ধরনের পরিপাটি উপসংহার টানা আসলেই কঠিন হবে। নিশ্চিতভাবেই ওই যুগের পপ-ঘেঁষা হিট গানগুলো [যেমন ধরুন, ডেভিড এসেক্সের রক অন ও এলটন জনের বেনি অ্যান্ড দ্য জেটস] সেই সাউন্ডের প্রতি কোনো না কোনোভাবে ঋণী; অন্যদিকে, দ্য রকি হরর পিকচার শো— যেটি কি না জীবন শুরু করেছিল মিউজিক্যাল থিয়েটারের একটি কাল্ট পিস হিসেবে, ওয়েস্ট এন্ডে সেটির অভিষেক ঘটে ১৯৭৩ সালে; আর সম্ভবত সেই মুহূর্তেই মেইনস্ট্রিমের ভেতর নিবিড়ভাবে জুড়ে যায় গ্ল্যাম, এবং এর আত্মপরিচয়ের ক্ষয় ঘটতে থাকে। ১৯৭৫ সালে ওই স্টেজ শো’কে রূপালি পর্দায় রূপান্তর করা হয়েছিল।
সে সময়ে, পপ স্পষ্টতই সামনে বেড়েছিল আর গ্ল্যাম রকের প্রভাব চুইয়ে পড়েছিল কাউন্টারকালচার মুভমেন্ট– পাংকের ভেতর, যেটি সহসাই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে চিরতরে রূপান্তরিত করে ফেলেছিল। ব্লন্ডির প্রথমদিকের সিঙ্গেল রিপ হার টু শ্রেডস নিশ্চিতভাবেই পাংক-গ্ল্যাম হাইব্রিডের একটি জোরাল উদাহরণ।
এ ব্যান্ডের ফেলো আমেরিকান দ্য রানঅ্যাওয়েস গ্ল্যামকে জাহির করে তাদের ক্যারিশম্যাটিক অভিষেক অ্যালবাম চেরি বোম্ব-এ। এর ভোকাল জোয়ান জেট সেই স্মৃতিচারণায় জানিয়েছেন, স্লেড ও টি. রেক্স-এর মতো ব্যান্ডের সিঙ্গেলগুলো তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্লাব– দ্য ইংলিশ ডিস্কোতে শুনেছেন। গ্লাম রক সাউন্ডকে জ্যান্ত রাখার উত্তরাধিকারী হয়ে উঠতে সেগুলো তাকে ব্যাপক প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে ধরে নেওয়াই যায়।
সেই যুগের আরও কিছু তুখোড় সিঙ্গেলের মধ্যেও গ্লামের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়; যেমন, র্যামোনস-এর শিনা ইজ অ্যা পাংক রকার। ব্রিটেনে বিলি আইডলের জেনারেশন এক্স বস্তুত পাংক-গ্ল্যাম হাইব্রিডে নিয়োজিত করেছিল নিজেদের; অন্যদিকে, এই ধারার সবচেয়ে সুনিশ্চিত উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠে মেটাল– জুডাস প্রিস্ট ও পরবর্তীকালে ডেফ লিপার্ড ও হ্যানোয় রকস-এর মতো ব্যান্ডের হাত ধরে; আর তাতে গ্ল্যাম সাউন্ডের স্পষ্টতই প্রভাব পড়েছিল।
অ্যাডাম অ্যান্ড দ্য অ্যান্টস-এর ক্লাসিক অ্যালবামগুলো, কিংবা যারা নিজেদের শুরুর দিকের সিঙ্গেল হিসেবে মাইক লিন্ডারের রক এন’ রোলের কাভার করেছে– সেই দ্য হিউম্যান লিগ-এর মতো সিন্থ-পপের কাজেও গ্লামের থিয়েট্রিক্যালের নজির খুঁজে পাওয়া দুরূহ কিছু নয়।
গ্ল্যাম রকের প্রলম্বিত প্রভাব
সিগে সিগে স্পুটনিক-এর লাভ মিসাইল এফ১-১১-এর মতো ট্র্যাকগুলো যেখানে ১৯৮০-এর দশকের অকেশনাল পপ হিটে জায়গা করে নিত, সেখানে গ্ল্যামের প্রথম বড় রেনেসাঁ ঘটে এর পরের দশকে– আগের দশকের বক্স অব ট্রিকগুলোর কাছ থেকে ব্যাপক প্রেরণা নেয় সুড ও পাল্প-এর মতো ব্রিটপপ ব্যান্ডগুলো। সুড-এর মেটাল মিকি ১৯৯২ সালে ইউকে চার্টে ‘নম্বর ১৭’তে জায়গা করে নিয়ে ব্যান্ডটিকে ‘টপ ৪০’ ব্রেকথ্রু এনে দেয়। অন্যদিকে, ১৯৭০-এর দশকের একজন গ্ল্যাম স্টারের কাহিনিকে কল্পিত করে টড হায়েন্সের ১৯৯৮ সালের কাল্ট ফিল্ম ভেলভেট গোল্ডমাইন-এর জন্য পাল্প সৃষ্টি করে উই আর দ্য বয়েজ।
এই শতাব্দির শুরুর দিকে নিউইয়র্ক নৈশজীবনে আবারও পুনরুজ্জীবন ঘটতে শুরু করে গ্ল্যামের। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া বোয়ি-বল ইভেন্টটি পরিণত হয় একটি বিরাট বার্ষিক অনুষ্ঠানে। ২০০৩ সালে আই বিলিভ ইন অ্যা থিং কলড লাভ-এর মতো বিরাট ইউকে হিট গানের সৃষ্টিকারী ব্যান্ড– যেটির ফ্রন্টম্যান জাস্টিন হকিংস বছর দুয়েক পরে স্পার্কস-এর দিস টাউন আইন্ট বিগ এনাফ ফর দ্য বোথ অব আস-এর কাভার করেছেন– সেই দ্য ডার্কনেস-এর মতো ব্যান্ডগুলো যেন টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে ফিরে গেছে; অন্যদিকে, গোল্ডফ্র্যাপ জুড়ে দিয়েছে গ্ল্যাম রক সাউন্ডে একটি অপেক্ষাকৃত অধিক সমকালীন ইলেক্ট্রো জেল্লা।
এমনকি এ যুগের পপ দৃশ্যপটে, র্যাচেল স্টিভেন্স আরও অনেকের মতো চিন-চ্যাপম্যানের ভঙ্গিমা ফিরিয়ে এনেছেন আই সেইড নেভার অ্যাগেইন (বাট হেয়ার উই আর)-এর মতো গানের মাধ্যমে। আজকের দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ– উভয় পারেই গ্ল্যাম রক নিশীতের দেখা পাবেন আপনি।
১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া গ্ল্যাম রকের সংক্ষিপ্ত রাজত্বকাল সম্ভবত বেশ দ্রুতই শেষ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক যেমনটা ঘটেছে জগতের সেরা সব পপ মুভমেন্টের ক্ষেত্রে; তবে সেইসব ঝিকিমিকি বুটের একটা ছাপ গভীরভাবেই পড়ে গেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মিউজিশিয়ানদের কল্পলোকে। স্লেড-এর পারফরম্যান্স দেখে টপ অব দ্য পপস স্টুডিওতে ঢুকে পড়েছিল যে কিশোরেরা, তাদের একটা বড় অংশই এখন এর পেনশনভোগী। ‘সেই সময়ে আপনি যে তরুণ ছিলেন, তখন আসলে কী করতেন?’ তাদের নাতি-নাতনিরা আজকে তাদের এমন প্রশ্ন করে।
শুনুন, তারা নাচতেন, ঝলমলে পোশাক পরতেন, স্থবিরতাকে করতেন প্রশ্নবিদ্ধ, এবং অগুণতি ফূর্তিতে মেতে থাকতেন। আপনার যদি মনে হয়, অতীতের ওপর যেকোনো ধরনের বিবৃতি রাখা সাউন্ডগুলোকে শুনতে ভবিষ্যতের কোনো ইউটোপিয়ান ম্যানিফেস্টোর মতো লাগছে, তাহলে জেনে রাখুন, এই দলে আপনি একা নন।
মার্ক এলিয়ট: লেখক, যুক্তরাজ্য
সূত্র: ইউ ডিসকোভার মিউজিক; যুক্তরাজ্য। ১৮ অক্টোবর ২০২১