সাক্ষাৎকার: প্লেবয় প্রতিনিধি
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
ভূমিকা
মেটালিকা যখন চুপ থাকে, তখনো তারা ঠিকই নয়েজ তৈরি করে ফেলতে পারে। (২০০১ সালের) মধ্য জানুয়ারির এক সকালে, নিজেদের ট্যুর ও রেকর্ডিং ব্যস্ততা থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতি নেওয়ার মাঝখানে, একটি সংক্ষিপ্ত অথচ আবেগভরা প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে ব্যান্ডটি, যেখানে ‘একান্ত ও ব্যক্তিগত কারণে এবং বছরের পর বছর ধরে নিজের শারীরিক যে ক্ষতি করেছি’ সেটি দেখিয়ে গ্রুপ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বেজিস্ট জেসন নিউস্টেড।
এর কয়েক ঘণ্টা পর, মেটালিকার ঘনিষ্ঠ এক সূত্র প্লেবয়কে জানায়, এর ঠিক আগের দিনই স্যান ফ্র্যান্সিস্কোর রিৎস-কার্লটন হোটেলে সাড়ে নয় ঘণ্টার দীর্ঘ মিটিং শেষে নিউস্টেডের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়েছে; আর এ রকম ম্যারাথন মিটিং এক সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকবারই করেছেন ব্যান্ডটির সদস্যরা। সূত্রটি বলেছে, নিউস্টেডের পদত্যাগ নিয়ে ব্যান্ডটি নিজেদের মধ্যে ‘বেশ ভালো ধরনের আলোচনা’ই করেছে।
কোনো না কোনোভাবে এই ঘটনা মেটালিকার জন্য স্রেফ এক অভ্যস্ত বিশৃঙ্খলা; কেননা, গত বছর [২০০০] তারা ন্যাপস্টারের [মিউজিক্যাল ওয়েবসাইট] বিরুদ্ধে ভয়ানক আক্রমণ করেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছে, কিংবা হয়তো সেটিকে তারা একটা কাউন্টারওফেন্সিভ বা প্রত্যাক্রমণই বলবে।
ওই ওয়েবসাইট কোনো রকম অর্থের লেনদেন ছাড়াই তার ব্যবহারকারীদের কাছে সাউন্ড ফাইল বিক্রি করছিল, আর তা প্রথম ১৮ মাসে করেছিল প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর কাছে; এক কথায় বললে, বিনামূল্যে মিউজিক বিলি করছিল ওয়েবসাইটটি। কপিরাইট লঙ্ঘণ ও কালোবাজারির অভিযোগে ওয়েবসাইটটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয় মেটালিকা; আর ১১ জুলাই ড্রামার লার্স উলরিক– ন্যাপস্টারের বিরুদ্ধে যার প্রেস ক্যাম্পেইন ছিল টিপিক্যাল দাপটে ভরা– তিনি ওয়েবসাইটটির বিরুদ্ধে ইউএস সিনেটে সাক্ষ্য দেন।

সেইসব রাজনীতি ও প্রেস কনফারেন্সের মাঝে, মেটালিকা কিন্তু সমানে গান-বাজনাও করে গেছে। মিশন ইম্পসিবল: টু সিনেমার সাউন্ডট্র্যাক হিসেবে তৈরি করা নতুন গান আই ডিজেস্পেয়ার পেয়েছিল এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে পাঁচটি নমিনেশন। স্যান ফ্র্যান্সিস্কো সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সঙ্গে রেকর্ড করা একটি টু-ডিস্ক কনসার্ট অ্যালবাম– এসঅ্যান্ডএম প্রকাশ করেছে ব্যান্ডটি। (আমেরিকান র্যাপার) কিড রকের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ট্যুর করেছে তারা, এ সময়ে এক জেট স্কি দুর্ঘটনায় ভোকালিস্ট জেমস হেটফিল্ড তিনটি শোতে অনুপস্থিত থাকায় বেশ কয়েকজন লিড ভোকাল নিয়ে সামলাতে হয়েছে তাদের। এমনকি কুখ্যাত ‘বিইন্ড দ্য মিউজিক’ শোর অন্তরালে এ সময়ে ব্যান্ডটির পিঠে চাবুক চালিয়েছে ‘ভিএইচওয়ান’ [টিভি স্টেশন]।
২০০০ সালকে বেজিস্ট জেসন নিউস্টেড অভিহিত করেছেন, ‘মেটালিকার জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে কর্মব্যস্ত সময়’ হিসেবে।
রিহার্সাল গ্যারেজ থেকে রেকর্ডিং স্টুডিওগুলোতে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়া হাজারও ব্যান্ডের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে মেটালিকার চেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে মাত্র সাতটির। এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে দীর্ঘদিন আগেই ভেঙে যাওয়া দুটি কিংবদন্তি [দ্য বিটলস ও লেড জেপলিন] এবং চলমান অন্যগুলো– পিংক ফ্লয়েড, দ্য ঈগলস, এরোস্মিথ, দ্য রোলিং স্টোনস ও ভ্যান হেলেন— তাদের স্মৃতিকাতরতাময় কর্মকাণ্ড, দূর অতীতেই উত্তীর্ণ হওয়া মেয়াদ কিংবা সাংস্কৃতিকভাবে ধারাবাহিকতাহীনতা সহকারে।
রকের সবচেয়ে এপিক গ্রুপগুলোর মধ্যে একমাত্র মেটালিকাই এখনো ট্যুর করছে, এখনো অতি গুরুত্ববাহী, এবং এখনই থেমে যেতে নারাজ।
১৯৮১ সালের বসন্তে, লস অ্যাঞ্জেলেসে, স্থানীয় এক রক ম্যাগাজিনের একটি বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে হেটফিল্ড ও উলরিকের যখন দেখা হয়, রকের সবচেয়ে চরম পরিব্যাপ্তির প্রতি অভিন্ন উন্মত্ততা ছাড়া তাদের মধ্যে মিল ছিল সামান্যই। লার্সের বাবা টর্বেন উলরিক ছিলেন একাধারে একজন অসাধারণ টেনিস প্লেয়ার, বোহেমিয়ান ও জ্যাজ-ভক্ত; লার্সের গডফাদার ছিলেন জ্যাজ গ্রেট– ডেক্সটার গর্ডন। তুমুল ঘোরাঘুরি ও স্বাধীনতায় ভরা এক বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুপ্রসারিত শৈশব ছিল লার্সের।
…
এক
ভেঙে যাওয়া
ঘরের সন্তান হেটফিল্ড
…
অন্যদিকে, এক ভেঙে যাওয়া ঘরের সন্তান হেটফিল্ড; ওই ঘরের নেতৃত্ব তার বাবার হাতে, যিনি রক্ষণশীল ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স’ ধর্ম পালন করতেন, আর করতেন ডেড-এন্ড ডে জব– মানে যার ছিল না কোনো ভরসা বা উন্নতি, এবং লস অ্যাঞ্জেলেস শহরতলির বাইরে পা ফেলতেন কালেভদ্রে।
ব্যান্ডটির একদম শুরুর ভার্সনে উলরিক ও হেটফিল্ড এটিকে স্যান ফ্র্যান্সিস্কোতে সরিয়ে নেন, যেন বেজ অধিপতি ক্লিফ বার্টনের ‘সেবা’ পাওয়ার নিশ্চয়তা হয়, এবং তারা গিটারিস্ট কার্ক হ্যামেটকে ব্যান্ডভুক্ত করেন– বে এরিয়া অঞ্চলের যে মানুষটির কৈশোর উদ্বাস্তু হয়ে হেটফিল্ডের মতোই চরম দুর্দশায় কেটেছে।
…
অভিভূতকারী ভোদকা– ভাইকিংসের
মতো শহর থেকে শহরে ভেসে
বেড়াতে বেড়াতে তাদের
ডাকনাম হয়ে উঠেছিল
‘অ্যালকোহলিকা’
…
মেটালিকাকে যে ব্যান্ডগুলো প্রেরণা জুগিয়েছে, সেগুলো একেবারেই অখ্যাত, যদি না ডায়মন্ড হেড ও ব্লিটজক্রিগ-এর মতো ইউরোপিয়ান থ্র্যাশ পাইয়নিয়ারগুলোর কথা আপনার জানা থাকে। তবে মেইনস্ট্রিমে পিওর মেটাল ছড়িয়ে দিয়েছে মেটালিকাই। তারা এ কাজ করেছে একেবারেই উন্মত্ত দৃঢ়তা নিয়ে ট্যুর করে; অভিভূতকারী ভোদকা– ভাইকিংসের মতো শহর থেকে শহরে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে তাদের ডাকনাম হয়ে উঠেছিল ‘অ্যালকোহলিকা’। নারী ও যৌনতা নিয়ে চলতি মেটাল ক্লিশে গান এড়িয়ে তারা বরং কণ্ঠ দিয়ে ছুড়ে দিয়েছে গর্জন, অনেকটাই বাইবেলীয় প্যারাবলের মতো গেয়েছে যুদ্ধবিগ্রহ ও বর্বরতার গান।
১৯৯১ সালের মেটালিকা (নিরলঙ্কার কাভার ডিজাইনের জন্য এটি ব্ল্যাক অ্যালবাম নামেও পরিচিত) অ্যালবাম দিয়ে শুরু করে, বন জোভির প্রডিউসার বব রকের সঙ্গে কাজ করেছে নিজেদের মিউজিকে এক্সপেরিমেন্টেশন ও মেলোডিক অ্যাপিল জুড়ে নেওয়ার জন্য। ‘আজকের দিনের যেকোনো কিছুর চেয়ে জোরে বাজা’ কণ্ঠের [ব্যান্ডটির কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া কিল ‘এম অল ডেব্যু ট্র্যাকের উদ্দেশ্যে এ অভিমত] জন্য একদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হেটফিল্ড এ বেলা উদ্ঘাটন করতে শুরু করেন সেই ভঙুরতা– ক্রোধের আড়ালেই যেটির নিত্য বসবাস।
ওই অ্যালবামের এন্টার স্যান্ডম্যান গানে তিনি গাইলেন এক শিশুর রাত্রিকালীন আতঙ্কের, তার নিজেরই বেড়ে ওঠার আক্ষেপজনক দিনগুলোর ইঙ্গিত রাখা গান। আনফরগিভেন টু গানে তিনি আশাবাদের বার্তা গাইলেন– ‘এখন আমি সূর্য দেখতে পাচ্ছি’ [‘নাউ আই সি দ্য সান’]। আর, ব্যালেড ট্র্যাক নাথিং এলস ম্যাটারস তো মেটালিকাকে এমন এক সাম্রাজ্যে হাজির করল, যেটি এর আগে তারা কোনোদিনই উদ্ঘাটন করেনি: ভালোবাসা ও পরিতৃপ্তি।
বিগ রক ব্যান্ডের এই শেষ প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নিতে আমরা ফ্রিল্যান্স রাইটার রব ট্যানেনবামকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি দেখলেন, যদিও এই ফাঁটলের কালে ব্যান্ড সদস্যদের একের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ নেই; তবু একে অন্যের ভাবনাজগতের বাইরে নন।
তিনি এসে জানালেন, “জেসন নিউস্টেডের মেটালিকা ছাড়া আমাকে অবাক করেনি। মাত্র দু’মাস আগেই একদিন সারাদিন আমি ব্যান্ডটির চার সদস্যের প্রত্যেকের সঙ্গে কাটিয়েছি। এ রকম ঝগড়াটে আর বদমেজাজি ব্যান্ড আমি জীবনেও দেখিনি। বেশিরভাগ কথার বাণের আড়ালেই ছিল হিউমার– হেটফিল্ডের গায়কী নকল করছিলেন নিউস্টেড, উলরিকের ড্রামিং ভেঙাচ্ছিলেন হেটফিল্ড, আর যার সাক্ষাৎকার আমি সবার শেষে নিয়েছি, সেই উলরিক তো হেটফিল্ডের কিছু উদ্ধৃতির জবাব দিয়েছেন বেশ অবজ্ঞার সঙ্গে।
“তবে এইসব সাক্ষাৎকারে– যেখানে এই লাইনআপে শেষবারের মতো পাওয়া গেছে মেটালিকাকে– তাতে নিখাদ উত্তেজনার সাক্ষ্য ছিল; কেননা, তারা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছিলেন: নিউস্টেডের নির্জনতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন প্রত্যেকে। পরিহাসের বিষয়, এটি নিসঃঙ্গ কয়েকজন মানুষের ব্যান্ড, এবং একতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মধ্যকার সংঘাতটি ছিল একেবারেই স্পষ্ট। কেননা, তারা আসলে কথা বলেননি; বরং আমিই পরিণত হয়েছিলাম একজন তথ্য নিষ্কাষণকারীর ভূমিকায়। ‘জেসনের মানসিকতা কেমন?’– স্যান ফ্র্যান্সিস্কোর প্যাসিফিক হেইটস সেকশনে, বৈঠকখানায় স্টাফ করে রাখা একটি দুই মাথাওয়ালা ভেড়া-সহ কালো বৃক্ষ ও ক্রুশবিদ্ধ যিশমূর্তিতে ভরা এক আধিভৌতিক গোথিক ম্যানশনে, ৩৮ বছর বয়সী কার্ক হ্যামেটের বাসায় গিয়ে তাকে এ প্রশ্নই করেছিলাম আমি। ‘আর, জেমসের?’

“৩৭ বছর বয়সী হেটফিল্ড আমাকে স্যান ফ্র্যান্সিস্কোর উত্তরাঞ্চলে এক ঘণ্টারও কম যাত্রাপথের এক শহরের একটি নিরাপত্তাবেষ্টিত গেটের পেছনে থাকা তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এ রকম একটি কুখ্যাত রকমের কোমল– ম্যারিন কাউন্টি শহরে তিনি থাকেন, ব্যাপারটা বেশ বেমানান; তবু হেটফিল্ড আমাকে সরাসরি তার প্রতিবেশ সম্পর্কে জানালেন। ‘এটা অনেকটাই এক ধরনের লোজারটাউনের মতো,’ গভীর মৃদুহাস্যে তিনি বললেন। ‘এই আবহ আমাকে আরও চাঙ্গা রাখে।’
“যে রুমে বসে আমরা কথা বলছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন কোনো গ্রাম্য কুটীর– উপরে একটা ফায়ারপ্লেস, দেয়ালে সাজানো রয়েছে তার শিকার করা নয়টি প্রাণীর মাথা– যার মধ্যে রয়েছে একটি বন্য শূকর, একটি কৃষ্ণসারমৃগ আর একটি ১৬০০ পাউন্ড ওজনের বুনোমহিষ– যেটিকে তিনি রাইফেলের চারটি গুলিতে কুপোকাৎ করেছিলেন। ব্যান্ডটিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ‘ড. নো’ ডাকনাম পাওয়া হেটফিল্ড অহর্নিশই প্রাণীর রূপক ধরে কথা বলেন, যা তিনি ভেবেচিন্তেই ডারউইনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মস্থ করেছেন। ‘সময়টা এখন আমাদের জন্য সত্যি খুব কঠিন,’ বললেন এক বিরল নিরানন্দ মুহূর্তে। কিন্তু যখনই তার স্ত্রী ফ্র্যান্সেস্কা ও তিন বছরের কন্যা ক্যালি এলো রুমে, সিক অ্যান্ড ডেস্ট্রয় গানের এই গীতিকার তখনই লাফিয়ে ওঠে চিৎকার দিলেন, ‘বিগ হাগ!’
সিক অ্যান্ড ডেস্ট্রয়
“৩৭ বছর বয়সী লার্স উলরিকের সঙ্গে যখন দেখা করলাম, তিনি তখন স্ত্রী স্কাইলার ও তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা থাকেন; নিউইয়র্কের একটি শহরতলির হোটেল স্যুটে তার বসবাস। সেখানে নিজের লেবেল– টিএমসির একটি অ্যালবামের মিক্সিং কাজে ব্যস্ত। উলরিক এই ব্যান্ডের সদাব্যস্ত ব্যবসায়ী– তিনি যখন কথা বলছিলেন ও উপহাস করছিলেন, তার সেলফোন নিরন্তর বেজে যাচ্ছিল– এ যেন নন-মেটাল দুনিয়ার কোনো গুপ্তচর: ম্যাট ডেমন ও কোর্টনি লাভের সঙ্গে বন্ধুত্ব তার, জন ম্যাকএনরোর সঙ্গে খেলেন টেনিস। ব্যান্ড সার্কেলে কারও কারও কাছে আদুরে ‘দ্য ডেনিস মিডগেট’ নামে খ্যাত উলরিক একইসঙ্গে বন্ধুত্ব ও কলহ সামলাতে জানেন; কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে অন্য কাউকে বলতে জানেন– ‘হ্যালো’।
…
‘যাক বাবা,
চিৎকারবাজ
কিংবা হুঙ্কারবাজ
না বলে তাকে এতদিনে
আমরা অন্তত গায়ক বলতে পারছি’
…
“মেটালিকানদের মধ্যে সবচেয়ে অসুখী মানুষ– ৩৮ বছর বয়সী নিউস্টেডের সঙ্গে আমি দেখা করেছি ম্যারিন কাউন্টির একটি রেকর্ডিং স্টুডিওতে। ১৯৮৬ সালে ব্যান্ডটির সুইডেন ট্যুরের সময় এক বাস দুর্ঘটনায় ক্লিফ বার্টন মারা গেলে তার জায়গায় যোগ দেওয়া নিউস্টেড যেন হেটফিল্ডের আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধে পিষ্ঠ; এ কারণে সলো অ্যালবাম বের করতে পারছেন না তিনি। ঠাট্টাচ্ছলে হেটফিল্ডের গায়কী উড়িয়ে দিতে দিতে তিনি বললেন, ‘যাক বাবা, চিৎকারবাজ কিংবা হুঙ্কারবাজ না বলে তাকে এতদিনে আমরা অন্তত গায়ক বলতে পারছি। পাঁচ-ছয় বছর আগে তো লোকে তাকে একজন চিৎকারবাজ বলে ডাকত।’
“নিউস্টেড কথায় কথায় স্বীকার করলেন, মেটালিকায় নিজেকে ‘অনেকটাই কণ্ঠরুদ্ধ’ অনুভব করেন। তবে যখনই বললাম, এতই যদি অসুখী হোন, ব্যান্ড ছাড়ছেন না কেন– কণ্ঠ ভারি হয়ে এলো তার: ‘অন্য কোনো ব্যান্ডের জন্য মেটালিকা ছাড়ব না আমি। যদি সেই পথ কোনোদিন বেছে নিতেই হয়, তাহলে সেটা নিজের জীবনের প্রয়োজনে করব, অন্য কোনো ব্যান্ডে বাজানোর উদ্দেশে ছেড়ে যাব না।’
“মেটালিকা ক্যাম্পেরই একটি সূত্র আমাকে জানিয়েছে, নিউস্টেড ‘শারীরিকভাবে শতভাগ সুস্থ নন; গিটার বাজাতে কষ্ট হয় তার’– এই বেজিস্ট নিজেও প্লেবয়কে নিজস্ব দাপটের সঙ্গে বলেছেন, ‘যেদিন দেখব পারফর্ম করতে পারছি না আর, সেদিন’ সরে যাবেন।
ওই সূত্রের খবর অনুযায়ী, নিউস্টেড [যিনি এ প্রসঙ্গে এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ] বলেছেন, তিনি মন্টানায় চলে যাওয়ার এবং দুই বছর বেজ স্পর্শ না করার কথা ভাবছেন; ‘যদি আমি মাত্র ছয়দিনও কারও সঙ্গে মিউজিক না বাজিয়ে কাটানোর চেষ্টা করি,’ তাহলে এনজাইটি অ্যাটাকে ভুগতে থাকা এমন এক মানুষের ওরকম নিষ্ক্রিয় জীবন ভাবা আসলেই কঠিন অবশ্য।
স্বাস্থ্যগত কারণেই হয়তো নিউস্টেড সরে দাঁড়িয়েছেন, তবে ওই সূত্র স্বীকার করেছে, হেটফিল্ডের সঙ্গে এই বেজিস্টের সংঘাতটি ‘একটি দ্বিগুণ বেগ’ হয়ে তার সরে যাওয়াকে ত্বরাণ্বিত করেছে।
“সহসাই এইসব বিচ্ছেদের শেষ টেনে মেটালিকা আবার স্টুডিওতে ফিরে আসবে, আর এর তিন সদস্য শুরু করবেন নতুন অ্যালবামের রেকর্ডিং। মেটাল ব্যান্ডগুলো আর বিবর্ধিত হচ্ছে বলে মনে হয় না: এসি/ডিসি, ব্ল্যাক স্যাবাথ ও মোটরহেড তাদের প্রথম রেকর্ড থেকে সর্বশেষ রেকর্ড পর্যন্ত মূলত একই রকম মিউজিক করে যাচ্ছে। কিন্তু ‘পুনরাবৃত্তির ভীতি’ থেকে নিজেদের নিরন্তর মোটিভেট করে চলে মেটালিকা।
“উলরিক আমাকে বলেছেন, তাদের পরের কাজ খুব ইন্টারেস্টিং শোনাবে। তারা নতুন একজন বেজিস্ট ভাড়া করে নেবেন এবং রোড-ট্যুরে নেমে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি আওয়াজ তুলবেন।”

সাক্ষাৎকার
প্লেবয় :: গত বছরের বেশিরভাগ সময় ন্যাপস্টারের বিরুদ্ধে লড়াই করেই কেটেছে আপনাদের। ব্যাপারটি এখন বিএমজি’র [ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক কোম্পানি] সঙ্গে ব্যবসা করার; ফ্রি সার্ভিস থেকে পে সার্ভিস হয়ে উঠছে। সেই হুমকির কি যবনিকা হলো? নাকি একই রকম ওয়েবসাইট হিসেবে আবির্ভূত হবে?
লার্স উলরিক :: সবগুলোই এক ধরনের মিনি-ন্যাপস্টার। তবে ন্যাপস্টার সফল হওয়ার কারণ এটির ‘কম্পিউটার ১০১’; আরও কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে সফটওয়ারটি সত্যিকারঅর্থেই জটিল হয়ে উঠেছে। ন্যাপস্টারের মতো তারাও এ রাস্তা থেকে বের হচ্ছে না। এখন অবশ্য সবাই নিজ নিজ সুরক্ষা দাঁড় করিয়েছে।
যেকোনো নতুন প্রযুক্তিই ১৯ বছরের শিশুও সামলাতে পারে; তার ওপর কেউ পাঁচ মিনিট নজর রাখলেই ব্লক করেও দিতে পারে। তবে এটিকে পুরোপুরি সরানো সম্ভব নয়। তবে আমি মনে করি এমন একটা পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যেখানে বুটলেগিং ও পাইরেসির সঙ্গে তুলনা করলে এটি বরং এক ধরনের উপদ্রবে পরিণত হবে।
প্লেবয় :: ন্যাপস্টারের পিছু নিয়ে আপনারা কী পেলেন?
উলরিক :: আমরা যা পেয়েছি, তার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো– আমেরিকান লোকজনের মাঝে সচেতনতা জাগানো। এটি একবিংশ শতকের প্রথম বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্টাল বিষয়আশয়ের চেয়েও বরং এ বিষয়ে মানুষকে বেশি প্যাসোনেট বলে মনে হয়েছে।
নিশ্চয়ই, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি নিয়ে কাজ করা যে কারও জন্য এই সহস্রাব্দের একটি ফাকিং-ওয়েক-আপ-কল [ব্যাপক জাগরণের বার্তা] হয়ে উঠেছে এটি। ধরুন, যারা সেলাইয়ের নকশা করেন, সেই বুড়ো নারীদের পুরো চক্রটি এখানে রয়েছে। আচমকাই সেই নকশার সবগুলোই চুরি করে কেউ ইন্টারনেটে বেচে দিলো। আর ওই বেচারি বুড়ি ভদ্রমহিলারা তাদের রয়্যালিটি পাচ্ছেন না।
প্লেবয় :: তার মানে, মেটালিকা এখন একদল বুড়ো নারীর সঙ্গে জোট বেঁধেছে!
উলরিক :: [চোখ ঘুরিয়ে–] আপনার কথাটা কানে লাগছে!
প্লেবয় :: আপনাদের কিছু ভক্ত মেটালিকার বদলে বরং ন্যাপস্টারের পক্ষ নিয়েছে।

জেমস হেটফিল্ড :: [বিদ্রূপের অট্টহাসি দিয়ে–] কারণ, তারা সব অলস বেজন্মা; তারা সবকিছুই ফ্রি পেতে চায়। আমার ধারণা, প্রেস ওয়ারে নেপস্টারই জিতেছে। এটি আমাদের সম্পর্কে ভক্তদের ধারণাকে আহত করেছে; তারা দেখেছে, মেটালিকা আসলে কতগুলো বড় বুড়োদের দল– যারা তাদের কাছ থেকে তাদের ফ্রি পাওনা কেড়ে নিতে চায়।
আমি মিউজিক করতে ভালোবাসি, কারণ এটা ভালোভাবে বাঁচার পন্থা এবং এটা আমাকে পরিতৃপ্তি দেয়। কিন্তু সেই সন্তুষ্টি দিয়ে তো আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারব না।
প্লেবয় :: তার মানে, নেপস্টার মেটালিকার সর্বনাশ করে দিয়েছে?
হেটফিল্ড :: ‘ন্যাপস্টার মেটালিকার সর্বনাশ করে দিয়েছে’– এমন খবর আমি পড়তে চাই না। আমাদের আঘাত করা বেশ কঠিন। আমাদের সম্পর্কে মেটালিকা ফ্যানদের মনোভাবকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
উলরিক :: আমি একমত নই। একদম শুরুর দিন থেকেই আমরা একের পর এক আঘাত পেয়েছি: আমাদের হেয়ারকাট এবং লোলাপালুজায় [মিউজিক ফেস্ট, যুক্তরাষ্ট্র] উপস্থাপনের জন্য একটি সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সঙ্গে রেকর্ডিংয়ের উদ্দেশে ব্যালেড লিখতে মটলি ক্রু ও বন জোভির প্রডিউসার বব রক’কে ব্যবহারের কারণে। একইসঙ্গে উস্কানিদাতা ও অগ্রদূত হয়ে ওঠার অংশ এটি।
প্লেবয় :: সহজাতভাবেই কথা বেশি বলতে পছন্দ করা লার্স কেন ন্যাপস্টারের বিরুদ্ধে ব্যান্ডটির মুখপাত্র হয়ে ওঠলেন?
হেটফিল্ড :: আমার স্ত্রী আর আমি তখন আমাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম [তাদের ছেলে ক্যাস্টরের জন্ম ২০০০ সালের মে মাসে]। পরিবারের গুরুত্ব তো সবার আগে। এ কারণে আলো জ্বেলে ছোটার দায়িত্বটা লার্সকেই নিতে হয়েছিল। আর সেখানে কিছু গোলমাল ঘটে যায়। দেখুন, লার্স আসলেই বাচাল প্রকৃতির; সব সময়ই নাক গলাতে পছন্দ করা একটা ‘বাচ্চা’ সে। কোনো কোনো সাক্ষাৎকারে তো আমি গজগজ করে ওকে বলিও: ‘ওহ ডুড, এমন কথা বইলো না!’
উলরিক :: আমি এমন কিছু কথাও বলেছি, যেগুলো আসলেই হাস্যকর। লিম্প বিজকিট [রক ব্যান্ড] যখন ন্যাপস্টারের সঙ্গে জোট বাঁধল, এবং এই ‘ফ্রি ট্যুরে’ পারফর্মের জন্য ২ মিলিয়ন ডলার নিলো– স্পন্সরশিপের টাকা না নিয়েই ফ্রি শোগুলোতে পারফর্ম করা সম্ভব; কেননা, ‘আমরা’ সেটি করি– তাই আমি বলেছিলাম, এটা একেবারেই বুলশিট ব্যাপার হয়েছে। আমি জানি, (লিম্প বিজকিট-এর ফ্রন্টম্যান) ফ্রেড ডার্স্টকে অনেকেই অপছন্দ করে; তবে তাকে আমার সত্যিকার অর্থেই যা-তা লেবেলের মেধাবী বলে মনে হয়। আমি আর ফ্রেড পরস্পরকে ‘চুমু’ খেলাম আর এক হয়ে গেলাম।
…
যখন আমি মুখ খুলি,
বেশিরভাগ
সময়ই
কোনো
না
কোনোভাবে
বাচাল হয়ে উঠি
…
যখন আমি মুখ খুলি, বেশিরভাগ সময়ই কোনো না কোনোভাবে বাচাল হয়ে উঠি; প্রচুর ফালতু বকতে থাকি। এ কথা আমি নিজেও জানি।
প্লেবয় :: আপনাদের মুখের ওপর ভক্তরা কী ধরনের কথা ছুড়ে দেয়?
হেটফিল্ড :: কেউ কেউ বলে, ‘ন্যাপস্টার নিয়ে ভাবার দরকার নেই, ডুড’, যেন তারা আত্মঘাতি… হা-হা-হা! তবে এর পরপরই বলে, ‘মেটালিকা রকস, ডুড।’ তার মানে, ‘ধন্যবাদ’ বলতে চেয়ে ‘ফাক ইউ’ চলে আসে মুখে। এ নিয়ে ‘আলোচনা’ করতে চাওয়া ভক্তদের সঙ্গে বহুবার আমার তর্ক হয়েছে। অ্যাটলান্টার এক বেচারি বালিকাকে আমি একবার কাঁদিয়ে ছেড়েছিলাম। তার ধারণা, টাকাই সব নষ্টের মূল। তাহলে আপনি কেন কানাডা কিংবা কোনো সমাজতান্ত্রিক দেশে গিয়ে থাকছেন না?
উলরিক :: আপনি যদি আর মেটালিকার ফ্যান হয়ে থাকতে না চান, তাহলে আপনাকে আমি আমার মিউজিক বিনা পয়সায় শোনাব না; আপনি বরং চোদা খেতে পারেন! আপনাকে মেটালিকার ফ্যান হিসেবে চাই না আমি।

কার্ক হ্যামেট :: লোকজনের প্রতিক্রিয়া আমাকে এখনো হতভম্ব করে। এমনটাই হওয়ার কথা, ভাবি আমি: লোকেরা আমাদের মিউজিক নিয়ে যাচ্ছে, অথচ সেগুলো করা উচিত নয় তাদের; আমরা তাদের থামাতে চাই। কম্পিউটারের কারণে মনে হচ্ছে, এটা যেন চুরি নয়; কারণ, স্রেফ একটা বাটনে চাপ দিয়েই আপনি সবকিছু পেয়ে যাচ্ছেন। আসল কথা হচ্ছে, চুরি কোনো অধিকার হতে পারে না।
প্লেবয় :: আপনাদের দেখছি বহু লোকদের নিয়েই ঝামেলা আছে। মেটালিকা ইউজনেট গ্রুপে ‘কার্ক আর লার্স তো সমকামী’– এমন কথাও ঘুরছে।
হ্যামেট :: এটি স্রেফ সৃজনশীলতার ঘাটতিরও উদাহরণ। ব্যাপারটি কাউকে ‘ফ্যাটসো’ [‘মোটকো’] বলে ডাকার মতো।
প্লেবয় :: আপনারা আপনাদের মেধার প্রশ্নে হয়তো ঠিকই ছিলেন। তবে ধনীদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করা লোকেদের পক্ষে বেশ কঠিনই।
উলরিক :: হ্যাঁ; ঠিক বলেছেন। ফলে এসবই ‘এইসব অর্থলিপ্সু রকস্টার’ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু খেয়াল করুন, ৮০ মিলিয়ন রেকর্ড বিক্রি হওয়ার পর আমি আসলেই বুঝি না, যত টাকার মালিক হয়েছি– এগুলো দিয়ে করবটা কী? তাই আমরা এখন আলাপ তুলতে পারি– আসল সমস্যাটা কোথায়? আমার কাছে আসল ঘটনা হলো, বেছে নেওয়া। আমার মিউজিকের ঘটনা কী– সেটা নিজেই বেছে নিতে চাই।
একটা ব্যাপার একদম পরিষ্কার: ভবিষ্যতে আপনার মিউজিক অনলাইনে বিক্রি হবে। তবে সাধারণ বোধবুদ্ধিই আপনাকে বলে দেবে, পাশের বাড়ির লোকটা যদি সেটি বিনামূল্যে নিয়ে যায়, তাহলে মিউজিক আপনি চালিয়ে যেতে পারবেন না।
প্লেবয় :: ন্যাপস্টারের বিরুদ্ধে যখন প্রচারণরা শুরু করলেন, ব্যাপারটি এত দূর গড়াবে– ভাবতে পেরেছিলেন?
উলরিক :: দূরতম কল্পনায়ও তা ছিল না। ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির প্রশ্নে লার্স উলরিকের পোস্টারবয় হয়ে ওঠা– স্রেফ এ উদ্দেশ্যে আওয়াজ তুলিনি আমি।
প্লেবয় :: গত সেপ্টেম্বরে এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ধুয়োধ্বনি পেলেন, চমকে গিয়েছিলেন?
উলরিক :: মঞ্চে থাকাকালে ব্যাপারটি ধরতে পারিনি। স্টেজ থেকে নামার পর লোকেরা বলাবলি করছিল, ‘আরে, ধুয়োধ্বনি তো বেশ দারুণভাবে সামলিয়েছেন!’ আমি ভাবলাম, ‘কিসের ধুয়োধ্বনি’র কথা বলছে তারা?
প্লেবয় :: আজব তো! অথচ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিল, আসলেই অস্বস্তিতে রয়েছেন।
উলরিক :: আমি আসলে একটু মাতাল ছিলাম। অ্যাওয়ার্ড শো’টা খুবই ফালতু ছিল; এমন শো আমি আর কখনো করিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ডিনার সেরেছি; খানিকটা ককটেল পান করেছি।
প্লেবয় :: ন্যাপস্টারের ক্রিয়েটর শন ফ্যানিং যখন মেটালিকার একটি টিশার্ট পরে হাজির হলেন, আপনাকে দর্শকদের সামনে ডাকা হলো, সেই মুহূর্তে দেখতে আপনাকে বেশ ভীতসন্ত্রস্ত লাগছিল।
উলরিক :: আপনাকে বুঝতে হবে, পুরো ব্যাপারটি পরিকল্পিত ছিল। তারা আমাকে বলল, আমি যেন শন ফ্যানিংয়ের হাতে একটি অ্যাওয়ার্ড তুলে দিই। ওই শোয়ের ঠিক আগের দিন ন্যাপস্টারের আইনজীবীরা তাকে এই পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, আমি হয়তো তার প্রতি কোনো রূঢ় কিংবা আপত্তিকর আচরণ করে বসব।
এমটিভি বলল, ‘তিনি মেটালিকার টিশার্ট পরে এলে আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?’ আমার ভাব ছিল, ‘তাতে কী আসে-যায়!’ এ সবই আমি জানতাম; তাই স্রেফ ঘুমিয়ে পড়ার ভান করেছিলাম। হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মাথা নাড়ছিলাম। এটা এক ধরনের পরিকল্পিতই ছিল।
প্লেবয় :: ন্যাপস্টারের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী আপনাকে তাগাদা দিয়েছে?
উলরিক :: তারা মীমাংসার চেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর আমাদের কাছে একমাত্র কাজ ছিল, নিজেদের আইনজীবীদের পারিশ্রমিক পাওয়ার ব্যবস্থা করা। আমরা বিশ্বাস করি, অ্যাকসেজের ক্ষেত্রে ব্যান্ড যা ব্লক করতে চায়, তা ব্লক করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

হ্যামেট :: সমালোচনা আমাদের নিত্যসঙ্গী, একদম শুরুর দিন থেকেই। যখন কিল ’এম অল প্রকাশ পেল, এর আগে এ ধরনের কোনো অ্যালবাম ছিল না। আমাদের দ্বিতীয় অ্যালবামটি প্রকাশের সময় ঈশ্বরের দোহাইয়ে গানগুলো আমাদের ‘স্লো’ করে নিতে হয়েছিল! এমনকি ফ্যানেরাও আমাদের যাচ্ছেতাই রকমের নিন্দা করে। সমালোচনা সামলানোর জন্য আমরা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে থাকি! সত্য হলো, এর ওপরই খাবার জুটে আমাদের।
হেটফিল্ড :: ঘৃণিত হতে ভালোবাসে মেটালিকা।
হ্যামেট :: ঘৃণিত হতে ভালোবাসি, নিশ্চিতভাবেই। এমনকি যখন আমরা এই ব্যান্ডে ছিলাম না, যখন ছিলাম বহিরাগত, তখনো আমাদের মধ্যে এই মানসিকতা ছিল।
প্লেবয় :: আপনারা এখন সুপারস্টার, তা শুধু এমটিভিতেই নয়, ভিএইচওয়ানেও; তাই শুরুতে আপনারা কত যে অপ্রিয় ছিলেন, সে কথা ভুলে যাওয়া সহজ।
হেটফিল্ড :: লার্স আর আমি যখন একজোঁট হলাম, আমরা এমন এক ধরনের মিউজিক পছন্দ করতাম, যেটির গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, বিশেষত লস অ্যাঞ্জেলেসে। আমাদের মিউজিক ছিল খুবই ফাস্ট ও হেভি। লস অ্যাঞ্জেলেসে তখন ছিল শর্ট, ক্যাচি গানের জোয়ার: মটলি ক্রু, র্যাট, ভ্যান হেলেন। আপনাদের দেখতেও তেমনই লাগতে হবে। শুধু আমাদেরই বিদঘুটে দেখাত তখন।
প্লেবয় :: কিন্তু আপনারা তো লস অ্যাঞ্জেলেস স্টাইলে সাজার ব্যাপারটি রুখে দেননি।
হেটফিল্ড :: স্প্যানডেক্স নিয়ে আমাদের লড়াই নিশ্চিতভাবেই ছিল। আপনি আপনার প্যাকেজ দেখিয়ে বেড়াতে পারবেন: ‘স্প্যানডেক্স পরো, ডুড! তাহলে মেয়েরা তোমার ওপর হামলে পড়বে!’
আমাদের প্রথম আমেরিকা ট্যুরে আমার স্প্যানডেক্স… আরে, ‘আমার স্প্যানডেক্স’ বলছি কেন! এটা একটা একেবারেই শয়তানি বুলি… যাইহোক, সেগুলো রাতের বেলা আগে থেকেই ভেজা থাকত, আমি হিটার দিয়ে শুকাতাম। সেই স্প্যানডেক্সে উরুর মাঝ বরাবর জায়গায় একটা বিরাট ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ‘আরে, এগুলো তো আসলে প্যান্ট না, তাই না? এগুলো তো প্যান্টিহোজের মতো।’ আমি জিন্স পরা চালিয়ে গেলাম।

সেটি ছিল এ পর্যন্ত সেরা ঘটনা। ব্ল্যাক অ্যালবাম ট্যুরজুড়ে স্প্যানডেক্স পরা চালিয়ে গেল লার্স, যদিও সে হয়তো আপনাকে ভিন্ন কথাই বলবে!
উলরিক :: লস অ্যাঞ্জেলেসে (রক মিউজিক সিনারিওতে) আমরা ছিলাম একেবারেই সমাজচ্যূত ধরনের। প্রথম বছর বা ও রকম সময়গুলোতে ছিলাম একেবারেই নিঃসঙ্গ।
…
এমন শো’ও করেছি, যেখানে
আমাদের প্রেমিকাদের
কথা বাদ দিলে
বার্টেন্ডারের
পাশে কোনো দর্শকই ছিল না
…
হেটফিল্ড :: আমরা এমন শো’ও করেছি, যেখানে আমাদের প্রেমিকাদের কথা বাদ দিলে বার্টেন্ডারের পাশে কোনো দর্শকই ছিল না। এরপর অল্প কয়েকজন ডাইহার্ড ফ্যান আমাদের অনুসরণ করতে শুরু করল, এবং তারা আমাদের ক্রু মেম্বার হয়ে ওঠল: ‘ওই লোকটা কিছু (মিউজিক্যাল) বাদ্যযন্ত্র টেনে নিতে চায়, যেন সেগুলো আমাকে টানতে না হয়।’
প্লেবয় :: আপনাদের প্রথম দিকের রেকর্ডগুলোতে মধ্যযুগীয় ‘ডাঙ্গিয়নস-অ্যান্ড-ড্রাগনস’ থিমের আবির্ভাব ঘটেছিল কোত্থেকে?
হেটফিল্ড :: জুডাস প্রিস্টকে আমরা ভেতর থেকে খুঁড়ে দেখেছিলাম: ‘আরে, তিনি ওটা নিয়ে লিখেছেন। আচ্ছা, ঠিক আছে। এটাকে মেটালে রূপ দেওয়া যাক।’ তারপর এর ভেতর আরও বেশিকিছু জুড়ে দিয়েছি, ‘চলো, আমরা যা করি– তা-ই লেখা যাক: হুইপল্যাশ, হিট দ্য লাইটস ও সিক অ্যান্ড ডেস্ট্রয়— এই গানগুলো ছিল স্রেফ ভাঙচুরের ফসল।
দিনের বেলা কাজ করতাম আমরা। তারপর পার্টি দিতাম। বাড়ি থেকে ফার্নিচার বের করতাম, আর জয়েন্ট [গাঁজাবিশেষ] খেতাম। ড্রেসিং রুমগুলো তছনছ করে দিয়েছিলাম; এর কারণ স্রেফ, এমনটা হওয়ারই ছিল। তারপর বিল হাতে পেয়ে ভাবতাম, ‘ওয়াও! আমি জানিই না, নিজের ল্যাম্প ভাঙার জরিমানা পিট টাউনশেন্ড’ [ব্রিটিশ গিটারিস্ট] ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছেন!’
ট্যুর থেকে ফিরে এসেছি, অথচ কোনো টাকা কামাই করতে পারিনি। একদল প্রমোটরকে ফার্নিচার কিনে দিতে হলো!
হ্যামেট :: দিন-রাত মদ খেয়ে কাটাতে পারতাম আমরা; খোলা বাতাসে একদম না দাঁড়িয়ে। লোকজনকে আমাদের চারপাশে মাছির মতো ভনভন করাতে পারতাম; কিন্তু নিজেদের গড়ে তোলার সহনশীলতা আমাদের দেখানোরই ছিল। আমরা খ্যাতিমান হয়ে ওঠতে শুরু করেছিলাম।
‘কিল ’এম অল ফর ওয়ান’ ট্যুরের কথা আমি ঠিকঠাক মনেই করতে পারি না; কারণ, আমরা বিকেল তিনটা-চারটায় মদ খেতে শুরু করতাম তখন।
হেটফিল্ড :: ড্রেসিংরুমে ভাঙচুর চালানো ছিল পুরোটাই মাতলামির অংশ। সবচেয়ে বাজে ঘটনা ঘটেছে ‘অ্যা ডে অন দ্য গ্রিন’-এ [কনসার্ট, ক্যালিফোর্নিয়া]। আমি আর একটা সহচর পুরোপুরি বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম জেগারমিস্টারে [জার্মান পানীয়বিশেষ]; বোতলটিকে ডেলি ট্রেতে করে মাথায় তুলে নিয়েছিলাম, আর ছোট্ট ছিঁপির ভেতর ঢোকাতে চেয়েছিলাম ফল। ‘ছিঁপিটি যথেষ্ট বড় নয়! চলো, ছিদ্র করা যাক!’ সে এক যাচ্ছেতাই কাণ্ড!
আমাদের প্রমোটর ছিলেন বিল গ্রাহাম; তিনি আর বেঁচে নেই। আমাকে তার অফিসে ডাকা হলো। ব্যাপারটি এমন, যেন কলেজে ক্লাসরুমে নোটিশ এসেছে, ‘প্রিন্সিপাল তোমাকে এক্ষুনি ডেকে পাঠিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘তোমার এই আচার-আচরণ, এ নিয়ে সিড ভিসিয়াস [সেক্স পিস্তলস] ও কিথ মুনের [দ্য হু] সঙ্গে আমাকে আগে একই কথা বলতে হয়েছে।’ ব্যাপারটি এমন, ‘বুঝলে না? শোনো, তারা আর বেঁচে নেই। তার মানে, ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার নয়। তোমাকেও জীবন দিয়ে এসবের খেসারত দিতে হবে।’
…
লোকজনকে অহেতুক জ্বালাতন
আর হরদম খেয়ালখুশিমতো
হাঙ্গামা করার চেয়ে বরং
একটি ব্যান্ড হয়ে
ওঠা বেশি
জরুরি
…
এক পর্যায়ে আমি বুঝে গেলাম, লোকজনকে অহেতুক জ্বালাতন আর হরদম খেয়ালখুশিমতো হাঙ্গামা করার চেয়ে বরং একটি ব্যান্ড হয়ে ওঠা বেশি জরুরি।
প্লেবয় :: জেমস, সেই প্রথম জ্যাম সেশনের পর লার্স সম্পর্কে আপনার কী ধারণা তৈরি হয়েছিল?
হেটফিল্ড :: লার্সের একটা দারুণ ক্র্যাপি ড্রাম কিট ছিল, একটি সিমবল সহকারে। সিমবলটি বারবার পড়ে যেত। তাই আমাদের বাজনা থামাতে হতো। আর সে সেটি তুলে আবার ঠিকঠাক করত। খুব একটা ভালোমানের ড্রামার সে ছিল না আসলে। আজকের দিনে ‘বর্ষসেরা ড্রামার’ সে নয়। আমরা সবাই সেটা জানি।
আমরা যখন জ্যামিং করছিলাম, ব্যাপারটি ছিল এমন– ‘আরে, কী ফালতু ব্যাপার এটা?’ স্টুডিওর বিল দেওয়ার জন্য আমরা ওকে চাপও দিয়েছিলাম, হা-হা-হা…। ওকে নিয়ে বহু ধরনের ব্যাপার ছিল আসলে। ওর বাচালতা, ওর চেহারা, ওর উচ্চারণ, ওর আচরণ, ওর গন্ধ…।
আমার ধারণা, ওর গায়ে ডেনমার্কের গন্ধ। গোসল নিয়ে ওদের ভাবনা-চিন্তা ভিন্ন। আমরা আমেরিকায় (গোসলে) সাবান ব্যবহার করি।
উলরিক :: আমেরিকান নাবালকদের মধ্যে দিনে চারবার গোসল করার এই ধরনের জোরজবরদস্তি ছিল।
প্লেবয় :: আচ্ছা, আপনি শরীর ধৌত করতেন?
উলরিক :: নিজের জন্য যতটুকু দরকার; বুঝলেন?
হেটফিল্ড :: আমরা ম্যাকডোনাল্ড খেতাম; সে খেত হেরিং [সামুদ্রিক মৎসবিশেষ]। একটা আলাদা দুনিয়া থেকে আসা মানুষ সে। ওর বাবা ছিলেন বিখ্যাত মানুষ। বেশ টাকা-পয়সা ছিল। ধনী। সে একমাত্র সন্তান। অথচ, বখে যাওয়া। এ কারণেই ওর মুখ থামতে চায় না। কী চায়, তা সে জানে; সেটার পেছনেই ছোটে; আর সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে নেয়।

উলরিক :: বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। এমন এক স্বাধীন পরিবেশে বড় হয়েছি, যা আপনারা ভাবতেও পারবেন না। বাবার সঙ্গে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছি। ফলে, হ্যাঁ, জেমস হেটফিল্ড আর আমার ব্যাকগ্রাউন্ড একেবারেই আলাদা। আর, যতই বয়স বাড়ছে, আমরা বোধহয় ততই একে অন্যের চেয়ে আরও বেশি আলাদা হয়ে উঠছি।
হেটফিল্ড :: প্রচুর পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মিউজিকের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছে সে। সেগুলো শোনার জন্য ওর বাড়িতে আমি প্রচুর সময় কাটিয়েছি। ওর রেকর্ড কালেকশন দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না; আমার পক্ষে সপ্তাহে হয়তো একটি রেকর্ড কেনা সম্ভব ছিল, আর সে একবার দোকানে ঢুকলে ২০টা রেকর্ড কিনে বের হতো। ডেনমার্কে থাকাকালে যেসব ব্যান্ডের গান শুনেছে, যেমন– স্টিক্স ও আরইও স্পিডওয়েগন— এদের রেকর্ড কিনত সে। আমি দেখে বলতাম, ‘হোয়াট দ্য ফাক? স্টিক্স-এর (রেকর্ড) কিনেছ কেন?’
উলরিক :: আমার একটা মুগ্ধ হওয়ার ব্যক্তিত্ব রয়েছে। যখন কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠি, সেটি সম্পর্ক সবটুকু জানতে আমাকে হবেই– হোক সেটি ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যকার তুখোড় আধুনিক যুগের কোনো ডেনিশ চেয়ার, কিংবা হোক জন-মিশেল বাস্কোয়াট [আমেরিকান আর্টিস্ট] কিংবা ওয়েসিস [রক ব্যান্ড]।
আমার যখন ৯ বছর বয়স, ডিপ পার্পেল-এর প্রতি প্রবল কৌতুহল ছিল। কোপেনহেগেনে তাদের হোটেলের বাইরে সারাক্ষণ অপেক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছি, যদি রিচি ব্ল্যাকমোর একবার বের হন, তাহলে রাস্তায় তার পিছু নিতে পারব ভেবে।
উৎস: প্লেবয়, এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা