সাক্ষাৎকার: প্লেবয় প্রতিনিধি
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
আগের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন
প্লেবয় :: ডেনমার্ক যদি এতই প্রিয় আপনার, তাহলে লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকছেন কেন?
উলরিক :: আমি স্কুলের পাঠ শেষ করেছি ডেনমার্কে; তারপর টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাই। বেভারলি হিলসের কথা বাদ দিলে লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে ঘিনঘিনে শহর– নিউপোর্ট বিচে এসে আমরা জড়ো হই। সেখানকার ফালতু পোলাপানগুলো সব লাকোস্টের [ব্র্যান্ড] গোলাপি রঙা শার্ট [পোলোশার্ট] পরত; আর আমি পরতাম আয়রন মেইডেন-এর টিশার্ট। আমার ধারণা, ব্যাপারটা সবাই ঘৃণার চোখেই দেখত; এ ছিল খানিকটা জনবিচ্ছিন্নতার ব্যাপার। জেমস হেটফিল্ড ছিল জনবিচ্ছিন্নতার রাজা। তাই আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠার পেছনে খানিকটা ভ্রাতৃত্ববোধের ব্যাপার ছিল।
প্লেবয় :: জেমসের সঙ্গে আপনার যখন দেখা, তিনি তখন কতটুকু জনবিচ্ছিন্ন [অ্যালিয়েনেটেড] ছিলেন?
উলরিক :: এত লাজুক আর কোনো মানুষের সঙ্গে কখনোই পরিচয় হয়নি আমার। সে আসলে নিজেকে পুরোদস্তুর গুটিয়ে নিয়েছিল; যেকোনো ধরনের সামাজিক যোগাযোগের প্রতিই অনেকটা ভীতি ছিল তার। তাছাড়া, ব্রণরোগের বিশ্রি এক ঝামেলায়ও ভুগছিল সে।

হেটফিল্ড :: বলার মতো কিছুই ছিল না, আমার ধারণা। লার্সের সঙ্গে যখন দেখা হয়, সদ্যই আমার মা মারা গেছেন। তখন সবাইকেই আমার শত্রু মনে হতো। কথা বলতে খুব একটা স্বস্তি পেতাম না; কেননা, এক ধরনের জনবিচ্ছিন্নতার পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলাম। আমি আমার ধর্মীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলাম। ব্যান্ডটি গঠন হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম, আমার আর কারও সঙ্গে কথা বলার দরকার পড়বে না। কথা বলার জন্য লার্সই যথেষ্ট। সেসময় অবশ্য বুঝতেই পারিনি, কথাই যদি না বলি, গান গাইব কী করে… হা-হা-হা!
প্লেবয় :: আপনার ধর্মীয় অবস্থান কী ছিল?
হেটফিল্ড :: আমি একজন ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্টিস্ট হিসেবে বেড়ে উঠেছি। এ এক আজব ধর্ম। মূল নিয়ম হলো: ঈশ্বরই সবকিছু ঠিকঠাক করে দেবেন। শরীর হলো স্রেফ একটি খোলস; আপনার কোনো চিকিৎসকের দরকার নেই। ব্যাপারটি আমার পক্ষে বোঝা কঠিন ছিল; আমাকে জনবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। ফুটবল খেলার মতো শারীরিক কাঠামো আমি তৈরি করতে পারিনি। স্কুলে পড়ার সময় হেলথ ক্লাস করার অনুমতি আমার ছিল না। অন্য বাচ্চারা বলত, ‘ক্লাস করো না কেন? তোমার কি মাথানষ্ট?’ শিশু হিসেবে আমিও চাইতাম ওদের দলে ভিড়তে। আমি উদ্ভট– এমন গুঞ্জন সবসময় কানে আসত; আর নিজেকে উদ্ভটই ভাবতাম। ব্যাপারটি আমার জন্য খুবই মনোযাতনার ছিল।
বাবা আমাকে সানডে স্কুলে পড়াতেন; সেখানেই কাজ করতেন তিনি। ব্যাপারটি আমার ওপর যথেষ্ট জবরদস্তির ছিল। ছোটখাট কিছু টেস্টিমোনিয়াল ছিল আমাদের; সেখানে এক বালিকা ছিল– যার হাত ছিল ভাঙা। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল: ‘আমার হাত ভেঙে গেছে; অথচ দেখ, মনে হচ্ছে– কিছুই হয়নি।’ অথচ বিশ্রি দেখাচ্ছিল ওর ভাঙা হাতটি। এখন সে কথা ভাবতে গেলে আমার যথেষ্ট ‘ডিস্টার্বিং’ লাগে।
প্লেবয় :: কখনো বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন?
হেটফিল্ড :: একবার আমি আর আমার বোন পালিয়ে গিয়েছিলাম। বাবা-মা মাত্র চার ব্লক দূরেই আমাদের ধরে ফেলেছিলেন। তারপর আমাদের আচ্ছামতো মেরে পাছার চামড়া তুলে নিয়েছিলেন।
প্লেবয় :: বলি, আপনি আপনার সন্তানদের পাছায় চড় মারতে চান?
হেটফিল্ড :: আমার বন্ধু ও তাদের বউদের পাছায় চড় মারতে চাই! হ্যাঁ, সেটি শেষ উপায় হিসেবে। তবে পাছায় চড় মারার একটা বড় কারণও জানিয়ে রাখা চাই।
প্লেবয় :: আপনার বাবা-মায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল?
হেটফিল্ড :: এটা ছিল আমার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে। দুটি বড় সৎভাই ছিল আমার। (বাবা-মায়ের মধ্যে) আমি কোনো অশান্তি দেখিনি। বাচ্চাদের সামনে তারা ঝগড়া করতেন না। একদিন বাবা তার ‘কাজে’ চলে গেলেন দূরে– কয়েক বছরের জন্য; বুঝলেন? জুনিয়র হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু আমার। বাবার চলে যাওয়ার কথা তখন গোপন রাখা হয়েছিল।
…
একবার
বোনের গায়ে
গরম তেল ঢেলে
দিয়ে ভেবেছিলাম,
‘যাক বাবা, আপদ দূর হলো!’
…
অবশেষে একদিন মা আমাকে বললেন, ‘তোমার বাবা আর ফিরবেন না।’ ব্যাপারটি বেশ কঠিন ছিল। খুবই খারাপ কিছু সময় কেটেছে: আমরা, বাচ্চারা যখন বাড়িতে থাকতাম, আম্মুরও তখন বাড়ি থাকার দরকার ছিলই; অন্যথায় আমি আমার বোনকে হয়তো মেরেই ফেলতাম। আমাদের সবার জন্য এ ছিল এক নরকবাস। মনে পড়ে, একবার বোনের গায়ে গরম তেল ঢেলে দিয়ে ভেবেছিলাম, ‘যাক বাবা, আপদ দূর হলো!’
মা খুব দুশ্চিন্তায় ভুগতেন। এর ফলে অসুস্থ হয়ে গেলেন। অথচ অসুখের কথা আমাদের কাছে গোপন রেখেছিলেন। তারপর একদিন হুট করেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। তারপর আচমকাই তিনি চিরতরে চলে গেলেন। ক্যানসার হয়েছিল তার। আমরা আমার সৎভাই ডেভের কাছে গিয়ে উঠলাম, থাকার জন্য; আমার চেয়ে ১০ বছরের বড় তিনি। আমার বোনটি ছিল অবাধ্য; তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো। হাইস্কুলের পাঠ শেষ করে আমিও সবাইকে ‘টা টা, দেখা হবে’ বলে বেরিয়ে পড়লাম।

হ্যামেট :: জেমস একটি ভাঙা পরিবারের সন্তান; আমিও ভাঙা পরিবারের। আমি ব্যান্ডে যোগ দেওয়ামাত্রই আমাদের দুজনের মধ্যে এক ধরনের বন্ধন গড়ে ওঠল।
শিশু বয়সে আমি ছিলাম নিগ্রহের শিকার। বাবা প্রচুর মদ খেতেন। মেরে পিঠের চামড়া তুলে নিতেন আমার। মা-ও মারতেন খুব। আমি একটা গিটার নিয়েই পড়ে থাকতাম। ১৫ বছর বয়স থেকে বলতে গেলে নিজের রুমের বাইরে বেরই হতাম না।
মনে পড়ে, আমার ১৬তম জন্মদিনে মাকে যখন বাবা মারছিলেন, তখন বাবাকে মা ঠেলে সরিয়ে দিলে তিনি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ান আর আমাকে আচ্ছামতো থাপড়াতে শুরু করেন। এরপর একদিন হুট করেই স্রেফ চলে গেলেন বাবা। আমি আর আমার বোনের মুখে খাবার জোগাতে মাকে খুব কষ্ট করতে হলো। আমি আমার অনেক ক্রোধ নিশ্চিতভাবেই মিউজিকের ভেতর ছড়িয়ে দিয়েছি।
আমার যখন ৯-১০ বছর বয়স, তখন এক প্রতিবেশীও আমাকে নিগ্রহ করেন। ফালতু লেবেলের বিকৃত এক লোক ছিলেন তিনি। আমার পোষা কুকুর– টিপির সঙ্গে সেক্স করেছিলেন। এ কথা মনে পড়লে এখন হাসি পায়; কী জঘন্য রে বাবা! তখনো হেসেছিলাম।
প্লেবয় :: শুনে মনে হচ্ছে, নিগ্রহের শিকার হওয়া একদল পরস্পর অমিল লোককে হেভি মেটাল আকৃষ্ট করেছিল।
…
হেভি মেটাল
হলো ভেষজ;
দুশ্চিন্তাকে উড়িয়ে
দেয় এই মিউজিক
…
হ্যামেট :: আমি মনে করি, হেভি মেটাল হলো ভেষজ; দুশ্চিন্তাকে উড়িয়ে দেয় এই মিউজিক। আমার মনে হয়, এ কারণেই যেসব লোকের শৈশব সত্যিকার অর্থে বাজে কেটেছে, হেভি মেটাল তাদের এত টানে। ক্রোধ ও দুশ্চিন্তাকে একটি অহিংস পন্থায় প্রশমন করে এটি। তাছাড়া, হেভি মেটালের একটি কমিউনিটি ফিলিংও রয়েছে; এটি আউটসাইডারদের একত্রিত করে। হেভি মেটাল যেন সব ধরনের অপরিচ্ছন্ন, ছন্নছাড়া পশু, উদ্বাস্তু– যাদের কেউ চায় না, তাদেরকে আকৃষ্ট করে।
উলরিক :: এ ব্যাপারে আমার সবসময়ই ভিন্নমত; কেননা, জীবনে বড় ধরনের কোনো মানসিক ক্ষতি আমি অনুভব করিনি। মেটালকে এভাবে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার কী মানে? আপনি যদি এলটন জনের কোনো কনসার্টে যান, দেখবেন, দর্শকদের আবেগাত্মক লটবহর একই ধরনের। আবার, দেয়ালের সামনে যদি মেটালিকার ১০ ভক্তকে দাঁড় করিয়ে দেন, দেখবেন, ১০ জন আপনাকে ১০ রকম গল্প শোনাচ্ছে।
প্লেবয় :: আর, তাদের মধ্যে তিনজন সেই দেয়ালে হিসু করে দেবে!
উলরিক :: আর, তাদের মধ্যে একজন হয়তো ওই দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকবে; হ্যাঁ। এই [সীমাবদ্ধকরণ] ধরনের ক্লিশে ব্যাপার আমার খুব একটা ভালো লাগে না।
প্লেবয় :: শুরুতে ব্যান্ডটির নাম মেটালিকার বদলে অন্য কিছু ভেবেছিলেন?
উলরিক :: আমাদের কাছে ২০টি সম্ভাব্য নামের একটি তালিকা ছিল: ‘নিক্সন’, ‘হেলড্রাইভার’, ‘ব্লিটজার’…। ‘থান্ডারফাক’ নামটির প্রতি সত্যিই খুব টান ছিল আমার।
প্লেবয় :: নারী ভক্তদের আকৃষ্ট করতে শুরু করলেন কখন?
হ্যামেট :: আমাদের শো’তে মেয়েরা সবসময়ই আসত। ঘটনা হলো, ছেলে দর্শকদের চেয়ে তাদের খুব একটা আলাদা বলে মনে হতো না।
উলরিক :: মেয়েরা (আমাদের) বাসে এসে উঠত আর পুরো বাসটিকে স্রেফ মাতিয়ে ফেলত। ব্যাপারটা এমন: ‘আচ্ছা, ওই তো দুটি মেয়ে, সবাই এবার লাইনে দাঁড়াও।’ লোকে হয়তো বলাবলি করত, “আচ্ছা! ওই মেয়েটি ওই ছেলেকে ‘ভাসিয়ে’ দিয়েছে…।” তাতে কী? আপনার তো ওই মেয়ের ঠোঁটের ভেতর নিজের জিহ্বা পুরে দেওয়ার দরকার নেই!
হেটফিল্ড :: নিজেদের কাণ্ডকীর্তি তারা উপভোগ করত। হাহ, হা… কাজটা বেশ ভালোই পারত তারা। সে সময়ে আমরা সবাই নিজেদের সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতাম। “আমি ওই মেয়েকে আগেই ‘পেয়েছি’, বন্ধু, ওই যে! এবার তোমার পালা!” লার্স তাদের মাতিয়ে ফেলত। ওদের প্যান্টের ভেতর দিয়ে কথা বলত সে! কার্কের চেহারা ছিল বাচ্চাদের মতো; আর তা মেয়েদের খুবই টানত।
অন্যদিকে ক্লিফ? বিশাল নুনু ছিল ওর! এ নিয়ে গুঞ্জনও চলত, আমার ধারণা।
উলরিক :: টক স্বাদের এ জিনিসের সঙ্গে বেশ অভ্যস্ত ছিলাম আমরা! দারুণ ছিল! অফস্টেজে এসে দেখতাম, শাওয়ারে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা দশেক মেয়ে।
হ্যামেট :: হুট করেই আমি এমন সুদর্শন হয়ে ওঠলাম কী করে– বুঝতে পারতাম না। ঘুমের মধ্যে কি আমার চেহারা পাল্টে গিয়েছিল? আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মোটা হলে, আপনাকেও সুদর্শন দেখাবে। জীবনে এর আগে কোনোদিন কেউ আমাকে এত গুরুত্ব দেয়নি।
প্লেবয় :: ব্যান্ডে সবচেয়ে বড় ‘ইতর’ কে?
উলরিক :: ক্ষণে ক্ষণে আমরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট ‘ইতরামি’ করেছি। তবে আমার মনে হয় না এই ব্যান্ডে এমন কেউ রয়েছে, যে বারকয়েক ধরা পড়েনি কিংবা অনিয়মিত মদ্যপ নয়।

প্লেবয় :: ক্লিফ বার্টন যে রাতে মারা গেলেন, সেই স্মৃতি কতটুকু মনে আছে?
হেটফিল্ড :: মনে পড়ে, (বাসের ভেতরের) সবকিছু উড়ে এখানে-সেখানে ছিটকে পড়ছিল– এমন অবস্থায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার পরনে তখন আন্ডারওয়্যার। সেই অবস্থায়ই ইমার্জেন্সি উইন্ডো দিয়ে ২০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বাইরে ছিটকে পড়ি। ক্লিফের খোঁজ মিলছিল না। মনে পড়ে, বাসটির নিচে থেকে ওর পা বেরিয়ে থাকতে দেখলাম আমি। ধবধবে সাদা, শুকনো পা ছিল ওর। আমি তখনই বুঝে যাই, ও আর বেঁচে নেই। বাসটা ছিল ঠিক ওর উপরে। এরপর আমরা সবাই যখন হাসপাতালে, আমাদের ট্যুর ম্যানেজার বলল, ‘ব্যান্ডটা জড়ো করো আর চলো…।’
‘ব্যান্ড’ শব্দটি যখন সে বলল, সেটিকে সঠিক শব্দ মনে হলো না: ‘আরে, আমরা তো আর ব্যান্ড নেই।’ আমরা বোতল খুলে মদ খেতে শুরু করলাম।
হ্যামেট :: ভীষণ স্মার্ট, পড়ুয়া ও খুবই বাকপটু মানুষ ছিল ক্লিফ। আমাদের আর কাউকে নয়, শুধু তাকেই কেন মরতে হলো– এখনো আমার মাথায় ধরে না।
জেসন নিউস্টেড :: আমার কাছে ক্লিফ বার্টন ছিলেন ঈশ্বর। আমার গুরু ছিলেন তিনি। আমি বলতে চাচ্ছি, তার আগে কেউ তার মতো বাজাতে পারত না; তার পরেও কেউ তা পারে না। লোকে তাকে অনুকরণ করে ঠিকই; কিন্তু তার অনুভূতি কিংবা প্রতাপ ছোঁয়ার সাধ্য কারও নেই।
প্লেবয় :: তার মানে, আরিজোনায় থাকাকালেই আপনি তার অনেক বড় ভক্ত ছিলেন?
নিউস্টেড :: আমার ব্যান্ড ফ্লটস্যাম অ্যান্ড জেটস্যাম-এর ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল মেটালিকার। আমরা মূলত আরিজোনাতেই পারফর্ম করতাম– বিভিন্ন ক্লাব আর ডিজার্ট পার্টিগুলোতে।
প্লেবয় :: ডিজার্ট পার্টি কী জিনিস?
নিউস্টেড :: বাবা-মায়ের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে, ৮০ থেকে ১২০ ডলারের মতো জমা করে, সারাদিনের জন্য একটা জেনারেটর ভাড়া করা। কোনো হাইস্কুল থেকে কিছু টেবিল এনে একটা স্টেজ বানানো, এবং একটা ফগ মেশিন ভাড়া করে আনা। পোলাপান দিয়ে একটা ছোট্ট পিপে কিনে আনিয়ে বলা, ‘লোকজন এসে পড়লে তোমরা আমাদের ৪০ ডলার দেবে।’ একটা গর্তমতো জায়গায় ইউ-হাল [ভাড়া করা ভ্যানবিশেষ] দাঁড় করিয়ে, সেখান থেকে টেবিল নামিয়ে, সেগুলো গাছেন নিচে পেতে দেওয়া। পিপে কিনে নেওয়া ছেলেপেলেগুলো ইতোমধ্যেই মদ খেতে শুরু করে দেবে। সময় তখন দুপুর ১টা।
তাদের কাছে ইতোমধ্যেই .৪৪ ম্যাগনাম [পিস্তলবিশেষ] রয়েছে। আরিজোনায় ব্যাপার হলো, আপনি যদি নিজের পিস্তল দেখাতে চান, তাহলে যা খুশি পরতে পারেন। মদ খেয়ে ইতোমধ্যেই আপনার হয়তো যাচ্ছেতাই অবস্থা। এরই মধ্যে মাঝরাতে আপনাকে লুট করে তারা ‘নিরাপদে’ চলে যেতে পারবে: ‘বাহ, এই লোকগুলোর কাছ থেকে টাকা কামাতে পারি আমরা!’ তারপর তারা হয়তো দুয়েক ঘণ্টা মাস্তি করবে। তারপর আসবে স্কটসডেল পুলিশ। সবকিছু তছনছ করে দেবে।
মেটালিকায় যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত গান-বাজনা করে আমি বলতে গেলে টাকা কামাতে পারিনি। যদ্দুর মনে পড়ে, সবচেয়ে বড় উপার্জন হয়েছিল বিশাল একটা গিগ থেকে– ২৬ ডলার! সেই টাকা আমরা (ব্যান্ডের) পাঁচ সদস্য ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম।
প্লেবয় :: সেই দিনগুলো মিস করেন?
নিউস্টেড :: সেই কালি-ধূলিমাখা আমাকে আমি মিস করি। আমার সেই ক্ষুধার্ত থাকার দিনগুলো মিস করি। কোনো ক্লাবে গিয়ারের সেটআপ তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারার যে রোমাঞ্চ– সেটি মিস করি। হয়তো সেখানে মাত্র সাতজন লোক হাজির হয়েছে, তবু আপনি এমনভাবে বাজাচ্ছেন– যেন দর্শক ৭০০ জন। আমরা যে মূল ক্লাবে বাজাতাম, সেটির ঠিক উল্টোদিকেই ছিল বার্গার কিংয়ের একটি দোকান; ২৯-সেন্টের বার্গার কিনতে আমরা একটা আস্ত পাহাড় বেয়ে নেমে পড়তাম। এ নিয়ে আমি খুশি! ‘এবার একটা কোক পেলে মন্দ হয় না!’ ‘আরে না, আরও দুটি বার্গার হয়ে যাক! ওরে চোদন! ব্যাকরুম থেকে আমরা বিয়ার চুরি করে নেব, দোস্ত!’ কেননা, অন্যথায় বার্গার কিং থেকে চুরি করে আনা কেচাপের সঙ্গে শুধু আলু সিদ্ধই গিলতে হবে!
প্লেবয় :: ক্লিফের জীবিতকালে আপনি মেটালিকার পারফর্ম দেখেছেন?
নিউস্টেড :: হ্যাঁ। ফিনিক্সে, ডব্লিউ.এ.এস.পি.র সঙ্গে; মাস্টার অব পাপেটস (অ্যালবাম) বের হওয়ার আগে। দর্শকদের প্রথম সারিতে ছিলাম আমি। একদম সামনে থেকে ক্লিফ বার্টনকে দেখে মনে মনে উপাসনা করেছি, আচ্ছামতো চিৎকার দিয়েছি, হ্যাডব্যাং করেছি উন্মাদের মতো। (মেটালিকার) একটা শার্টের [টিশার্ট] দাম পড়েছিল ১৪ ডলার; আমার কাছে টাকা বলতে সারা দুনিয়ায় তখন ওইটুকুই ছিল। শুধু মেটালিকাকেই দেখতে গিয়েছিলাম আমি। মেটালিকার পারফর্ম শেষ হওয়ামাত্রই বেরিয়ে এসেছি। মাথানষ্ট পারফর্ম ছিল তাদের; এই ব্যান্ড যা কিছু করেছে– সবকিছুই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে চেনা ছিল আমাদের।
প্লেবয় :: তার মৃত্যুর খবর কীভাবে পেলেন?
…
চোখের
পানিতে পত্রিকাটা
ভিজে যাচ্ছিল; সেই ভেজা
কাগজে ছাপা থাকা ভেজা
অক্ষরগুলোর দিকে
তাকিয়ে ছিলাম
…
নিউস্টেড :: সকাল ছয়টায় এক বন্ধু আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলল, ‘দোস্ত, পত্রিকাটা একটু দেখ।’ মনে পড়ে, চোখের পানিতে পত্রিকাটা ভিজে যাচ্ছিল; সেই ভেজা কাগজে ছাপা থাকা ভেজা অক্ষরগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি। আমরা আমাদের পরের গিগসে (তার সম্মানে) কালো আর্মব্যান্ড পরে বাজাতাম।
প্লেবয় :: ক্লিফের মৃত্যুসংবাদ শোনার কতক্ষণ পর আপনার মনে পড়েছিল, নিশ্চয়ই মেটালিকার একজন নতুন বেজিস্ট লাগবে?
নিউস্টেড :: সেদিনই এই দিবাস্বপ্ন দেখেছিলাম আমি। ব্যাপার এ রকম: আমি যদি হতে পারতাম, ইস!
প্লেবয় :: তারা [মেটালিকা] আপনাকে স্যান ফ্র্যান্সিস্কোতে এনেছিল অডিশনের জন্য। সে সময় নার্ভাস ছিলেন?
নিউস্টেড :: সেই পুরোটা সপ্তাহ আমি ঘুমোতে পারিনি। শুয়েছি মাত্র কয়েকবার। টানা পাঁচদিন জেগেই ছিলাম; নিজের পক্ষে যতটা সম্ভব, শুধুই বাজিয়েছি। একের পর এক ফোস্কা পড়ে গলে গেছে আঙুলে। একটানা স্ট্রিং বাজাতে বাজাতে যখন নিজের ভেতরে, স্নায়ুতে বেশি চাপ অনুভব হতো, তখন খানিকটা থামতাম। আমার কয়েক বন্ধু টাকা জমিয়ে, অডিশনে যাওয়ার জন্য প্লেনের টিকেটের খরচ ১৪০ ডলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
প্লেবয় :: এত কম ভাড়া, অথচ এই টাকা তারা [মেটালিকা] দেয়নি! অডিশন যারা দিতে এসেছিল, তাদের সঙ্গে তারা কি খুবই রূঢ় ব্যবহার করেছে?
নিউস্টেড :: একটা ছেলে এসেছিল, যার বেজ গিটারে কুয়াইট রায়ট বা এ রকম কোনো ব্যান্ডের কোনো সদস্যের সিগনেচার ছিল। সেটি দেখামাত্রই জেমস বলে দিয়েছিল, ‘নেক্সট!’ ব্যাপারটা এমন, লোকটি প্লাগ-ইন করারও সময় পায়নি। (অডিশন দিতে আসা) ছেলেগুলোর অবস্থা হয়ে গিয়েছিল একেবারেই বিধ্বস্ত।
প্লেবয় :: তাদের [মেটালিকা] সঙ্গে প্রথম বছরটি কেমন কেটেছে আপনার?
নিউস্টেড :: ধোঁয়াশায় ভরা; আর প্রচুর আবেগাত্মক পরীক্ষার।
হেটফিল্ড :: রাগে আমরা চিৎকার করে কাঁদতাম: ‘তুমি এখানে ক্লিফের জায়গায় এসেছ, তাই তোমাকে সেই মান দেখাতে হবে।’ এটি ছিল আমাদের কাছে থেরাপি।
নিউস্টেড :: একবার ভোর চারটায় আমার হোটেলের দরজায় ওরা এমন জোরে শব্দ করতে লাগল, যেন ভেঙে ফেলবে; আমরা তখন নিউইয়র্কে। ‘উঠ, চোদনা! মদ খাওয়ার সময় হয়েছে রে, মাগি!’ বোঝেন অবস্থা! ‘তুমি এখন মেটালিকায়! তোমার উচিত বালের এই দরজাটা খোলা রাখা!’
তারা দরজায় থাপড়াতেই লাগল। যা তা অবস্থা। এক পর্যায়ে দরজায় ফ্রেমে চিড় ধরল, আর দরজাটা যেন উড়ে চলে এলো রুমের ভেতরে। আর তারা বলতে লাগল, ‘দরজার ডাকে তোর সাড়া দেওয়া উচিত ছিল রে, কুত্তি!’

তারা ম্যাট্রেস টেনে ধরল, আর আমাকে-সহ উঠিয়ে ফেলল শূন্যে। তারপর চেয়ার, ডেস্ক, টিভি স্ট্যান্ড– রুমে যা কিছু ছিল, একটার ওপর আরেকটা তুলে, ম্যাট্রেস রাখল সবার উপরে। আমার জামা-কাপড়, আমার ক্যাসেট টেপ, আমার জুতো– সব ছুড়ে ফেলে দিল জানালা দিয়ে। আয়নার এখানে-ওখানে, সর্বত্র শেভিং ক্রিম ও টুথপেস্ট লেপ্টে দিল। এ স্রেফ এক তাণ্ডবলীলা।
তারপর দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে তারা বলল, ‘এই ব্যান্ডে স্বাগতম, দোস্ত!’
প্লেবয় :: তারা যে লোকজনকে বলে বেড়াত, আপনি সমকামী– এ কথা জানতেন?
নিউস্টেড :: না। মানে, আমি বলতে চাচ্ছি, এ রকম ছোট ছোট আরও বহু ব্যাপারই সেখানে ছিল।
প্লেবয় :: কেন তারা এমন করত? কেন নিজেকে আপনি এসবের সঙ্গে জড়ালেন?
…
যদি
ক্লিফ বার্টনের
জুতো নিজের পায়ে
পরতে চান, তাহলে আপনাকে
অবশ্যই তাগড়া
হতে হবে
…
নিউস্টেড :: কারণ, আপনাকে বুঝতে হবে, এটা ছিল মেটালিকা; এটা ছিল আমার কাছে স্বপ্ন সত্য হওয়ার বিষয়। (ওদের আচরণে) আমি নিশ্চিতভাবেই হতাশ ও বিরক্ত হতাম এবং নিজেকে এক ধরনের অনাহুত মনে হতো আমার। তবে, আমি এসব সামলাতে পারি কি না, তা ঝালিয়ে দেখার জন্যই ওরা এসব করত। আপনি যদি ক্লিফ বার্টনের জুতো নিজের পায়ে পরতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই তাগড়া হতে হবে।
উৎস: প্লেবয়, এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা