সাক্ষাৎকার: রুদ্র আরিফ
জিয়াউর রহমান। জিয়া নামেই বেশি খ্যাত। তুমুল জনপ্রিয় রক গ্রুপ ‘শিরোনামহীন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, ব্যান্ড লিডার ও বেজিস্ট। ব্যান্ডটির বেশির ভাগ জনপ্রিয় গানের কথা ও সুর তারই। ‘শিরোনামহীন’কে ঘিরে ‘লালগান’-এর পক্ষে তার সঙ্গে দীর্ঘ এ আলাপটি হয় ৭ জুলাই ২০২১, ঢাকায় তার বাসায়। শ্রুতিলিখনজনিত বিড়ম্বনায় প্রকাশে খানিকটা বিলম্ব হলো। শ্রুতিলিখনে ইচ্ছেকৃতভাবে মুখের ভাষা অবিকল রাখা হয়েছে; সম্পাদনার নামে ‘মার্জিত’ করা হয়নি। দীর্ঘ এ আলাপটি কয়েক কিস্তিতে প্রকাশ করা হচ্ছে এখানে। এ বেলা রইল দ্বিতীয় কিস্তি…

কিস্তি । ২
রুদ্র আরিফ :: আমাদের এখানে রক মিউজিকের যখন উত্থান হচ্ছে… উত্থান বলতে আমি অই অর্থে বোঝাচ্ছি, যখন ধরেন মাস-পিপলের কাছে পৌঁছাচ্ছে… অই সময়টায় আপনাদের এন্ট্রি…
জিয়াউর রহমান :: না, অই সময়টায় এন্ট্রি আমি বলব ওয়ারফেজ-এর।
রুদ্র :: আমি একটু ডিফার করতে চাই। আমরা যখন বড় হয়ে উঠতেছি, হয়তো এক দশক পর আপনাদের, আমি গ্রামে বড় হইছি, যখন অসামাজিক বাজাইতাম, খেপে যাইত লোকজন…
জিয়া :: …ট্রু… এইটা ঠিক আছে।
রুদ্র :: …কিন্তু আপনারা যখন আসছেন, তখন কিন্তু গ্রহণযোগ্যতাটা তৈরি হয়ে গেছে…
জিয়া:: …অনেকটা বেটার (পরিস্থিতি ততদিনে)। এইটা ঠিক আছে। কিন্তু অন দ্যাট নোট, ওয়ারফেজ যেটা পেয়েছে… কারণ, আমি ওয়ারফেজ-এর ফ্যান; যখন স্কুলে পড়ি, ওয়ারফেজ-এর গান শুনে খুবই ইনফ্লুয়েন্সড হয়েছিলাম… আমি দেখলাম, যে, এই গানগুলার রিসেপশন যেটাই হোক না কেন, তারা আসলে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে শেখাচ্ছে– কীভাবে মিউজিক করতে হয়– নাম্বার ওয়ান; নাম্বার টু হচ্ছে, যে, তারা কিন্তু অই যুগটা পেয়েছে– ক্যাসেটের যুগ, যেটাতে কোনো কপিড হওয়ার সুযোগ সেভাবে ছিল না, যেটার কোনো অনলাইনভিত্তিক… অনলাইন বলতে কিছু ছিল না। সো ফার, মানে, অইটা ছিল অনেক ইন্টারেস্টিং: ওনারা প্রফেশনালি মিউজিকটা করার প্ল্যাটফর্মটা পেয়েছেন।
…
যারা ফ্রি শোনানোর যুগ
ছাড়া ছিল, তারা
প্রত্যেকেই
কিন্তু
আমাদের দেশে
লিজেন্ড হতে পারছে
…
সেকেন্ডলি, আমাদের গান হয়ে গেছে ফ্রি। ফ্রি শোনানোর যুগে আমরা পড়েছি; তাদের ফ্রি শোনানোর যুগে পড়তে হয় নাই। যারা ফ্রি শোনানোর যুগ ছাড়া ছিল, তারা প্রত্যেকেই কিন্তু আমাদের দেশে লিজেন্ড হতে পারছে; মানে যারা সাকসেসফুল হয়েছে, প্রত্যেকে আমাদের দেশে লিজেন্ড হতে পেরেছে এবং তারা প্রফেশনাল মিউজিক করার সুযোগটা পেয়েছে, যেটা আমাদের জেনারেশন থেকে পরবর্তী জেনারেশন আর পায় নাই; কারণ, গান ফ্রি।
ফ্রি আর না-ফ্রির মধ্যে কিন্তু অনেক বড় ডিফারেন্স আছে। আমি আমার যে জামাটা পরে এখানে বসে ইন্টারভিউটা দিচ্ছি, এই জামাটা কিন্তু আমাকে কিনতে হয়। এটা যদি ফ্রি আসত, তাহলে ঘটনা ডিফারেন্ট হতো। সো, অই ডিফারেন্সটা আমরা পাইছি, আনফরচুনেটলি। আর, ফরচুনেট এনাফ, যে, এটার আবার সুবিধাও আছে। সুবিধাটা হচ্ছে, (গান) ছড়ানোর জায়গাটা অনেক বেশি। যেহেতু ফ্রি, যেহেতু অনলাইনে, যেহেতু অ্যাভেইলেবল, সো, ছড়াচ্ছে অনেক বেশি। একইসাথে ডাস্টবিনের ময়লাও ছড়াচ্ছে। আর, সেই ময়লাটা অনেক মানুষ রিসিভও করছে; কারণ, আমরা ময়লা খেতে পছন্দ করি!
রুদ্র :: আমি যে জায়গা থেকে জানতে চাইছিলাম, সেইটা হচ্ছে, ধরেন, সাধারণ যে শ্রোতা, রক মিউজিকের শ্রোতা… যে খুব সচেতন শ্রোতা, সে জনরাগুলোকে আলাদা করে ফেলতে পারে…
জিয়া :: …রাইট…
রুদ্র :: …সে বেজ আলাদা করে ফেলতে পারতেছে, ড্রামস আলাদা করে ফেলতে পারতেছে…
জিয়া :: …রাইট, ট্রু…
রুদ্র :: …এখন, মাস পিপল’টা, সে-ও যখন ফ্যান, সে কিন্তু প্রথমত কথার ওপর ঝোঁক দিচ্ছে। কথার জায়গাটায় শিরোনামহীন আমাদের একটা বড় ধরনের ধাক্কা দিছে।
জিয়া :: …ওকে! হ্যাঁ, আই অ্যাগ্রি উইথ ইউ। যেটা আমি বলব, একটু ডিফার করব: হয়তো… হয়তো আমাদের সেই জায়গাটায় একটা সফলতা আছে; ঠিকাছে। আমি ডু নট ডিজেগ্রি উইথ ইউ। বাট, এই স্টার্টটা যারা করেছে, তাদেরকে আমি স্যালুট জানাতে চাই।

যেমন, আমাদের দেশে ব্যান্ড মিউজিকে স্টার্টের একদম বিগেইনার যেমন আইওলাইস— অইটা আসলে কেউ শোনে নাই, বা, আমরা নিজেরাও শুনি নাই। কিন্তু গান শোনা স্টার্ট করেছি উইথ সোলস, উইথ মাইলস— যারা আমাদের সবচাইতে পুরনো ব্যান্ড বলে, স্টাবলিশড ব্যান্ড বলে আমরা ডিক্লেয়ার করতে পারি। ওনাদের একটা লিরিক্যাল টাইম, লিরিক্যাল পিরিয়ড– সেই লিরিকগুলা যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য. আমাদের দেশে আসলে আধুনিক বাংলা গান বলতে যা বোঝায়, এইটারই প্র্যাকটিস ছিল; নট কিছু ফিল্মের গান। তো, অই কথাগুলোর চাইতে এই কথাগুলোর একটা ডিফারেন্স বেস ছিল, যেটার কারণে কিছু সচেতন শ্রোতা এটার দিকে ঝুঁকেছে, এটা হচ্ছে প্রথম ঘটনা। সেকেন্ডলি, এটার ইমপ্রোভাইজ হয়েছে।
ইমপ্রোভাইজটা কীভাবে হলো? যেমন, লতিফুল ইসলাম শিবলী, মারজুক রাসেল, তারপরে বাপ্পী খান…
রুদ্র :: … দেহলভী…
জিয়া :: … দেহলভী, ওনারা এমন চমৎকার কিছু লিরিক নিয়ে আসলেন, যে লিরিকগুলো আসলে মানুষকে ভাবিয়ে ফেলবে। এক ধরনের সতর্ক শ্রোতা বা রুচিশীল শ্রোতার কাছে সেটা একটা অ্যাসেট হিসাবে দাঁড়িয়ে গেল, যে কথাগুলোর মূল্য অনেক। সেটাকেই ক্রমাগত নার্সিং, আরও ইমপ্রোভাইজ করার চেষ্টা করেছে (পরবর্তী ব্যান্ডগুলো)। সেই সময়েরই পরিক্রমায় শিরোনামহীন একটা চ্যাপ্টার। এবং, সেই চ্যাপ্টারে আরও কিছু ব্যান্ড আছে, যাদের কথা আমি মেনশন করতে চাই; যেমন, মেঘদল-এর কথা না বললেই না; তারাও একটা বড় চ্যাপ্টার, যারা স্ট্রং লিরিক নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছে। সো, এই জায়গাগুলো আসলে আমাদের শ্রোতাদের রুচিটা তৈরি করেছে।
হয়তো অনেক আমজনতা, বা মাস-পিপল অই কথা অইভাবে রিলেট করতে পারেনি, কিন্তু দেখেছে যে ‘এই রিলেটটা করা আমার প্রয়োজন বা জরুরি’– এইটা ফিল করেছে, এবং শিখেছে– এইটা কিন্তু হ্যাপেনস। আমিও যখন গান শুনতাম, আমি যেসব গান শুনতাম, যেই জনরার গান শুনতাম, হয়তো সেই লিরিকটার টেস্টটা নেওয়ার জন্য আমার খুব ট্রাই ছিল, চেষ্টা ছিল, এবং সেটা তো আমাদের বড় হতে সাহায্য করে, বা রুচিটা গ্রো করতে সাহায্য করে।
এখন দেখা যাবে, যে, বন্ধু সার্কেলের মধ্যে ১০ জন একসঙ্গে চলাফেরা করে, আড্ডা দেয় বা নিজেদের সুখ-দুঃখ শেয়ার করে; ১০ জনের মধ্যে ১০ জনেরই কিন্তু রুচি এক রকম হয় না। কারও রুচি একটু আর্টিস্টিক হয়, শৈল্পিক, যে শিল্পটা ভালো বুঝতে পারে। সবাই সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মটা পছন্দ করে না। কেউ হয়তো খুব বাজারের কমার্সিয়াল ফিল্মটা পছন্দ করে; আবার কেউ সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মটা পছন্দ করে। কিন্তু অই ১০ জনের মধ্যে যে সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মটা পছন্দ করে, বা যার রুচিটা ভালো, শৈল্পিক– তাকে কিন্তু বাকি ৯ জন রেসপেক্ট বেশি করে; এইটাই স্বাভাবিক। তার স্ট্রেন্থ’টা থাকে বেশি। সে বলে যে, ‘না, এইটা খুব ভালো,’ বা, ‘অইটা অতটা ভালো না… অইটা অতটা মানসম্পন্ন না… আরে, অইটা খুবই ক্ষ্যাত… অইটা আসলে আবর্জনা… অইটা রিসিভই করা ঠিক হবে না…।’
সো, এই যে, জায়গাটা তৈরি করার জন্য যে রুচিশীল মানুষগুলো এগিয়ে যায়, তারা অনেক বড় অবদান রাখে। একটা দেশের কালচারকে তৈরি করার পেছনে এই লিসেনারদের অনেক বড় ভূমিকা আছে, এটা আমার মনে হয়। আমরা ফরচুনেট ছিলাম, এই লিসেনারদেরকে আমরা পেয়েছি। তারা আমাদের গান পছন্দ করেছিল, রিসিভ করেছিল, হয়তো কথার কারণে, হয়তো কথার স্ট্রেন্থ’টা তাদেরকে টাচ করেছে, হয়তো তার লাইফের ঘটনাগুলোর সাথে আমাদের এ কথাগুলোর অনেক মিল সে খুঁজে পাচ্ছে, এবং সেইখান থেকে একটা শৈল্পিক রুচি সে চর্চা করার সুযোগ পায়, অই গানটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়।
যেমন, থাকে না– আড্ডায় আমরা আলাপ করি, আলোচনা করতে থাকি, একটা ভালো ফিল্ম নিয়ে গল্প করি, একটা ভালো গান নিয়ে গল্প করি? তো, অই টপিকটা সে শিরোনামহীন-এর গানে পেয়েছিল।

রুদ্র :: আমরা যে জায়গা থেকে টাস্কি খাইছি, আমরা যারা ছোটকালে লিটলম্যাগ করার মাধ্যমে নিজেকে এক ধরনের উন্নাসিক সিরিয়াস ভাবতাম আরকি…
জিয়া :: …অ্যাবসুলেটলি…
রুদ্র :: …আমরা যে ধরনের কবিতা পছন্দ করতাম, আমরা প্রথমে টাস্কি খাইলাম এই অর্থে, আমার কবিবন্ধুরা সবাই রক মিউজিকের ফ্যান ছিল না, কারণ, আমি থ্র্যাশ মেটাল পছন্দ করতাম… হাবিজাবি ইত্যাদি এক ধরনের ব্যাপার ছিল… তো, আমরা যে ভাষায় কবিতাটা লিখতে চাই, বা চাইছি, বা লিখতেছি– অই ভাষাটা আমরা শিরোনামহীন-এর কথায়ও পাইছি: ‘তোমার চোখ খুনি, আমি খুন হই প্রতিদিন…’ বা, ‘ভেসে চলেছি চোখে আলো জ্বেলে জাহাজীর মতো একা’…
জিয়া :: …অ্যাবসুলেটলি… ইয়েস…
রুদ্র :: …একটা জায়গা বলতে চাই আমি, এটা নানাজনেই বলে গেছেন, যেমন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলে গেছেন, যে, বাস্তবতার মধ্যে সার্বক্ষণিক জীবনযাপন করা তো ইম্পসিবল। কারণ এটাতে এত ক্লেদ, আনন্দও… ফলে বাস্তবতার পাশাপাশি আরেকটা বাস্তবতা তৈরি করে নিয়েই মানুষ জীবনযাপন করতে চায়…
জিয়া :: …পরাবাস্তবতার এক জগত তৈরি করে…
রুদ্র :: …তার কল্পনার একটা বা পরাবাস্তবতার– যেটাই বলি, এই আলাদা একটা জগত যেটা সে ক্যারি করে, শিরোনামহীন-এর লিরিকে, বিশেষত আপনার লেখাগুলোতে অই ব্যাপারটা, অই জায়গাটা পাচ্ছি আমরা; এবং শহরটাকে পাচ্ছি– ‘মিরপুর যাবে বিরতিহীন’… শহরটাকে পাচ্ছি, হ্যাঁ? এই জায়গাটায় আপনি লিরিসিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করলেন কীভাবে?
জিয়া :: লিরিসিস্ট হিসেবে এই জায়গাটা খুবই ইন্টারেস্টিং। এইটা আসলে, পুরো ব্যাপারটা এক ধরনের লার্নিং। যেমন, আমি খেয়াল করলাম, আমার খুবই ফ্যাভারিট ব্যান্ড মেটালিকা, মেগাডেথ… এইগুলা, যাদের হাত ধরে আমার গান শোনা। আই লাইক পিংক ফ্লয়েড, আই লাইক ডায়ারস্টেয়ারস, আই লাইক রবিশঙ্করের সেঁতার– যেটার কোনোভাষা নাই, সেইটা অনেক অ্যাবস্ট্রাক্ট, সেইটা ডিফারেন্ট।
কিন্তু আমি খেয়াল করলাম, মেগাডেথ যখন প্রতিবাদের কথা বলে, সেটার মধ্যেও তার… (ওদের) একটা অ্যালবামের নাম হচ্ছে কাউন্টডাউন টু এক্সটিংকশন… সো, ওখানে বলছে, ‘শীতের পাখিগুলো সব মারা যাচ্ছে, এবং তারা স্বস্তি পাচ্ছে না… আমরা তাদের হত্যা করছি, খুন করছি– এই বিষয়টা আসলে আমাদের পৃথিবীর জন্য কাউন্টডাউন টু এক্সটিংকশন; আমরা বিলুপ্ত হওয়ার জন্য ঘণ্টা বাজিয়ে দিচ্ছি।’
…
প্রতিবাদের
ল্যাঙ্গুয়েজটাই
সবচাইতে অ্যাপ্রোপিয়েট;
কারণ, সেটাতে ডেস্ট্রাকশন
থাকে, সেটাতে চিৎকার
করে কথা বলা
লাগে
…
এই যে ভোকাবুলারি… ও তো শুধুমাত্র সমাজের হতাশা, নিরাশা, দুরাশা, কুয়াশা নিয়া কথা বলে নাই; ও কিন্তু একটা সোশ্যাল মেসেজ দিচ্ছে– প্রতিবাদের ল্যাঙ্গুয়েজে, প্রতিবাদের ল্যাঙ্গুয়েজটাই সবচাইতে অ্যাপ্রোপিয়েট; কারণ, সেটাতে ডেস্ট্রাকশন থাকে, সেটাতে চিৎকার করে কথা বলা লাগে।
দেন অ্যাগেইন, আমি দেখলাম, সেপালটুরা ফুল একটা অ্যালবাম, এটার নাম হচ্ছে ক্যাওয়াজ এ.ডি., এবং পরবর্তীকালে তারা রুটস নামে আরও একটা অ্যালবাম অইটার ক্রনোলজিতে বের করেছিল। সো, ওখানে আসলে ওদের… ওরা তো সবাই ব্রাজিল থেকে যাওয়া, অ্যামেরিকায় ব্রডআপ, বাট ওদের অরিজিনালটা হচ্ছে ব্রাজিল, ওইখানকার অ্যাবওরিজিনালদের নিয়ে সে [ব্যান্ডটি] একটা ভোকাবুলারি স্টার্ট করেছে, এবং তারা নোম্যাডস। তাদের টেরিটরির জন্য তারা আসলে ফাইট করে। একটা গান ছিল অইখানে– উই হু আর নট অ্যাজ আদারস। সো, এই যে ফাইটটা, এইটা ও ডিস্ক্রাইব করতেছে থ্রু হিজ মিউজিক, এই জায়গাগুলো আমার অ্যাটেনশন গ্রো করল। এইটা হচ্ছে স্টার্টিং।
দেন অ্যাগেইন, আমাদের বাংলা গানের মধ্যে দেখলাম কবীর সুমনের কথা বলার ভঙ্গি আর দশজনের মতো না। কবীর সুমন নামে চিনতাম না; সুমন চট্টোপাধ্যায় নামেই তার গান রিসিভ করেছিলাম। সো, অই নামটা ব্যবহার করা আমার জন্য কমফোর্টেবল। ‘ইচ্ছে হলো এক ধরনের গঙ্গাফড়িং…’ বা ‘পাড়ার ছোট্ট পার্ক, ঘাস নেই আছে ধুলো, ঘাসের অভাব পরোয়া করে না…’ এই জায়গাগুলো যেমন ইউজুয়ালি সে একটা ডেস্ক্রাইব করছে, এবং সেই ডেস্ক্রিপশনের মধ্যে এক ধরনের মেটাফোরিক্যাল ব্যবহার করছে; যেমন, ‘সমকাল এসে বসেছে সেখানে একা চ্যাপলিন সেজে’ বা ‘আহত প্রেমিক সেজে’। দুইবার দুই রকম করেছে। সো, একটা পার্কের বেঞ্চে গিয়ে কিন্তু একজন আহত প্রেমিক বসে থাকে, বা, চার্লি চ্যাপলিনের কিন্তু যেয়ে বসে থাকাটা আমরা… উই ক্যান রিলেট, যে, হ্যাঁ, ঠিক আছে, ফরমাল এক্সপ্রেশন হিসেবে ইট’স পারফেক্ট বা এটাকে যে মেটাফর হিসেবে ব্যবহার করা যায়…। পার্কটা ডেস্ক্রাইব করতে গিয়ে ‘একা চ্যাপলিন’ বানিয়ে দেওয়া যায়, বা, ‘আহত প্রেমিক’ বানিয়ে দেওয়া যায়, সেটা ওনার কাছ থেকে আমি শিখলাম।
দেন অ্যাগেইন… বলছিলাম যে, উনি প্রতিবাদের ভাষাগুলোকেও চমৎকারভাবে নিয়ে আসলেন। যেমন, ‘সঞ্জীব পুরোহিত হাঁটলেন…’। এই প্র্যাকটিসটার পাশাপাশি আমি দেখলাম যে উনার ইনফ্লুয়েন্স: উনিও তো ইনফ্লুয়েন্সড, অনেক কবির দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড, অনেক লিরিসিস্টের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড, অ্যালান গিন্সবার্গ এবং মোস্টলি লিওনার্দ কোহেন। আই স্টার্টেড টু ডিগ লিওনার্দ কোহেন ফ্রম দেন: দেখি তো কোহেন কী বলছে?
ইভেন, তখন কিন্তু আমার পিংক ফ্লয়েড-এর প্রতিও অনেক ফ্যাসিনেশন ছিল। হাই হোপস— সেটাকে যেভাবে ডিসক্রাইব করে। ইভেন অই আমলে তারা হাই হোপস-এর যে মিউজিক ভিডিও (করেছে), এটাকে আমার কাছে এখনো মনে হয়, একটা মাইলস্টোন টাইপের। মানে, ওর আশা ওর চাইতে বড় এবং সেটাকে ওরা পোর্ট্রে করছেন কীভাবে– মনুমেন্টাল স্কেল দিয়ে। তখন তো আমি আর্কিটেকচার পড়ছি। সেই মনুমেন্টাল স্কেল কী, বুঝি। হুম? আমি তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে কিন্তু বিহবল হয়ে গেছিলাম; হতভম্ব হয়ে গেছিলাম এটার স্কেল দেখে। এত বড় লার্জ প্রোপরশন, এত বড় দরজা দিয়া আমি কেন ঢুকব? ঢুকবে গড!
সো, অই যে ধারণাগুলা– তখন আমার মধ্যে ডেভেলপ করতেছে। এবং দেখছি যে, হ্যাঁ, তার চাইতে তার হোপ বড়। তার মানে, তার অনেক বড় একটা কেইপ আছে, একটা ড্রাপারের মতো উড়ছে, এই রকম ভিডিও তারা তৈরি করেছে: মানুষটা ছোট, তার আশা বড়। ফাইন।
কোহেনের মধ্যে দেখলাম, এই ভদ্রলোক, হি ইজ অ্যা ড্যাম গুড পোয়েট, তিনি সব সময় খুব নিচু স্কেলের কিছু গান করলেন; গম্ভীরভাবে কিছু কথা বললেন, ইভেন তার প্রেম… প্রেমের ডিস্ক্রিপশান অনেক ডিফারেন্ট। ডিয়ার হিদার। অনেক ডিফারেন্ট।
স্টোরিস অব দ্য স্ট্রিট গানে উনি ডিস্ক্রাইব করছেন যে, সেই কবি– যেখানে উনি খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন, এ রকম হোটেলে, যে রুমটাতে কমফোর্ট ফিল করেন, সেই রুমটাতে হুট করে উনি চলে গেছেন; কারণ উনি সুইসাইড করবেন, এইটা উনি ডিসাইডেড। উনি জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন, সামনের রাস্তায় গাড়ি চলছে, সবকিছু খুব ইউজুয়াল, কিন্তু (আবার) ইউজুয়াল না; কারণ উনি সুইসাইড করবেন। এক হাতে ছিল একটি সুইসাইড নোট, অপর হাতে ছিল একটি গোলাপ। এই ধরনের ডিস্ক্রিপশান, এত প্যারানরমাল… কী বলব, এত স্ট্রং, এত কাব্যিক ডিস্ক্রিপশন ওনার মতো কইরা আর কাউকে আমি দিতে দেখি নাই। সো, হি ইজ মাই মেন্টর। লিওনার্দ কোহেন।
আই স্টার্টেড টু থিংক লাইক হিম। আই স্টার্টেড টু ফলো হিম। উনি কীভাবে একটা মেটাফরকে আনেন, উনি কীভাবে আসলে ডিস্ক্রিপশনটাকে স্ট্রং করেন– এভরি বডি নো’জ দ্য ওয়ার ইজ কামিং; কিন্তু সেটা কীভাবে চলে যাবে, সেটা কেউ জানে না। এই ডিস্ক্রিপশনগুলা, বা ড্যান্স মি টু ইউর এন্ড অব লাভ… এই ডিস্ক্রিপশনগুলা উনি আমাকে শিখাইছেন। উনি জেনে শিখান নাই, আমি ওনার কাছে ক্লাস করার সুযোগ পাই নাই; বাট ওনার লেখা পড়ে শিখছি।
এবং আমি কবিতা পড়তাম। যেমন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, পুর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন আসলে খুব আমাকে স্ট্রংলি হেল্প করছে, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ… তো ওই লেখাগুলা থেকে আমি আসলে অই টেস্ট’টা বা শিল্পটা কী– সেটা বোঝা স্টার্ট করলাম।
…
একটা লেখায় পোয়েটিক ভ্যালু
থাকলে সেই গানটার
অনেক বেশি
আয়ু বেড়ে
যাবে
…
এই কথাটা আমি খুব অ্যাগ্রি করতে চাই, যেমন, সুমনও এইটা বলছিলেন যে, ‘পদ্যটাতে সুর ছোঁয়ালে গান হবে যে দুজন মিলে।’ আসলে একটা লেখায় পোয়েটিক ভ্যালু থাকলে সেই গানটার অনেক বেশি আয়ু বেড়ে যাবে, লংজিবিলিটি বেড়ে যাবে। কারণ, ও শুধু সুর দিয়ে একজন মানুষকে আসলে ধরে রাখবে না; সে তার কথাগুলো দিয়েও ধরে রাখবে। তার স্ট্রেন্থ’টা ডাবল। সো, আমি যেহেতু মূলত সুরকার, এবং দেন অ্যাগেইন, আমি গীতিকার– আমার এ জায়গাটা হচ্ছে সবচাইতে, মানে এটা একটা অ্যাডভান্টেজ আমি বলব, হয়তো অনেকের তুলনায়। কারণ, গীতিকার এবং সুরকার একত্রে এ রকম এক্সামপল আমাদের দেশে কম, ওয়ার্ল্ডেই কম। যেই কারণে আমার ওইটা অ্যাডভান্টেজ ছিল, যে, আমি যখন লিখছি, তখন সেটার সুরটা সাথে সাথে করতে পারছি; এবং যখন সুর করছি, তখন সাথে সাথে সিমুনটেনিয়াসলি লিখতে পারছি, এবং কারেকশনটাও আমি বোথ এন্ড থেকে ড্র করতে পারছি। যেটা দুজন মানুষের মিলে করতে হয়, সেই সুযোগটা আমি অ্যাডভান্টেজ হিসেবে পাইছি।
দ্যাটস হোয়াই যে মেটাফরগুলাকে আমি আনতে চাই, সেই আনাটা আমার জন্য ইজিয়ার হয়েছে। সুরে যাচ্ছে না? ওকে, ঠিক আছে তাহলে আমি মেটাফর চেঞ্জ করব; কিন্তু আমি মেটাফরটাকে এই আঙ্গিকেই রাখব। যখন আমি বাস স্টপেজ ডেস্ক্রাইব করব, তখন আমি জানি, আমার পাড়ায় অবশ্যই একটা নার্সারি আছে, এবং সেই নার্সারিটা অবশ্যই বাসস্টপের একটু আশেপাশে, একটু কাছে, একটু ছাড়িয়ে গেলেই হয়তো পাওয়া যাবে। সেখানে কিছু হকার বসে, এবং বৃষ্টি এলে সেই হকারগুলো খুব ব্যস্ত হয়ে যায়, যে, তার জিনিসপত্র কীভাবে সেভ করবে। হুম?
বৃষ্টি খুবই বেরসিক ছিল! সে চলে আসছে! ও [হকার] তো আসলে ওর জীবিকা হিসেবে এটা দেখে। সো, আল্টিমেটলি ও তখন ব্যস্ত হয়ে যায় ওর জিনিসপত্রগুলা বাঁচানোর জন্য। এবং যেই কিশোরী মেয়েটা তার ফুল বিক্রি করতে আমাদের গাড়ির গ্লাসের পাশে চলে আসে, আমাদের মাঝে একটা দূরত্ব সবসময় থেকেই যায়, সেটা হচ্ছে সেই গাড়ির গ্লাস, যেটা ডিসাইড করে দেয় যে– আমার ওয়ার্ল্ড আর ওর ওয়ার্ল্ড এক না। সে বৃষ্টিতে ভিজে যায়; আমি যাই না। সো, দিজ আর দ্য ফিলিংস অফ আওয়ার লাইফ।
এবং ওইখানে [বাস স্টপেজ গানে] যেটা বলা হইছিল, ‘এই সন্ধ্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু স্বপ্ন বিক্রি করছে যারা’– এটা বলতে আমি মিন করেছিলাম, ইন ফ্যাক্ট, ইউ গাইজ, যারা হয়তো কোনো একটা অ্যাজেন্সিতে জব করছেন, কোনো একটা করপোরেট কোম্পানিতে জব করছেন, এবং তাকে অনেক আইডিয়া জেনারেট করতে হয়, ক্রিয়েটিভ আইডিয়াস– সেটা কোনো একটা বিষয়ের বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করার পেছনে ব্যয় হয়; তার আইডিয়াটা আর্টে ব্যয় হয় না। এই আর্টটা প্র্যাকটিস করার সে সুযোগ পায় নাই। কারণ, তার এটাকে পেশাদার ভঙ্গিতে নিতে হয়েছে, এবং এটা থেকে উপার্জন করে… আউট অব দিস ব্রেড অ্যান্ড বাটার তার ফ্যামিলিতে নিয়ে যেতে হয়েছে, এবং পুরো সময়টাতে, এই স্ট্রাগলের পুরো সময়টাতে তার মাথার ওপরে একটা আকাশ ছিল– যেটা দেখার টাইম (সে) পায় নাই।
সো, দিজ আর দ্য ফিলিংস আই ওয়ান্ট টু কনভে ইন মাই সংস। এইটা আমাদেরকে, শিরোনামহীনকে আরও দশটা ব্যান্ড বা আরও দশজন আর্টিস্টের থেকে অনেকটা আলাদা করেছে, আই স্ট্রংলি বিলিভ। ট্রু।
…
আমরা
শিল্পটা
আমাদের
চোখ থেকে
যেভাবে দেখেছি,
সেটা আমরা মানুষকে
দেখাতে চেষ্টা করেছি, কেউ
যদি রিলেট করে নিতে পারে,
তাহলে সে আসলে অনেক
বেশি অ্যাটাচড হয়েছে,
তার সুখ এবং দুঃখের
সাথে এই গান
মিলে
গেছে
…
আমরা শিল্পটা আমাদের চোখ থেকে যেভাবে দেখেছি, সেটা আমরা মানুষকে দেখাতে চেষ্টা করেছি, কেউ যদি রিলেট করে নিতে পারে, তাহলে সে আসলে অনেক বেশি অ্যাটাচড হয়েছে, তার সুখ এবং দুঃখের সাথে এই গান মিলে গেছে। সে এটাকে তখন চর্চা করতে চায়। সে ফ্রেন্ডসার্কেলে এটা নিয়ে গল্প করতে চায়; কারণ, এই যে, এতক্ষণ যে টপিকটা বলছিলাম, এই টপিকটা আসলে গল্পের একটা উপাদান।

এখন আমি যদি বলি, ফর এক্সামপল, আমাদের খুব চিপ একটা গান, খুব সস্তা, বা আমাদের বাংলা ফিল্মের একটা গান– যেটার মধ্যে হয়তো ভালগার ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করা হয়েছে, সেইটা কিন্তু একটা গল্পের বা আড্ডার টপিক হইতে পারে না। অই শক্তিটা তার নাই। এইটা হচ্ছে ডিফারেন্সটা। যেটা আমাদের গানকে আয়ু দিয়েছে, লাইফ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া…
রুদ্র :: …আপনি বলতেছিলেন যে, বেনসন-হেইজেসের সময় আপনাদের কাছে ৫০টির মতো গান ছিল; তো, আপনারা যখন জাহাজী করলেন, গানগুলা বাছলেন কীভাবে?
…
তখনকার
ভোকাল– তুহিন,
তার গলার সাথে ম্যাচ
না করার কারণেই মোটামুটি
প্রথমেই ফিফটি পারসেন্ট গান
বাদ পড়ে
গেল
…
জিয়া :: …গানগুলা বাছলাম, কারণ, তখন অই যে বললাম, আমাদের লাইনআপ চেঞ্জ হয়েছে। যে নতুন ভোকাল, তখনকার ভোকাল– তুহিন, তার গলার সাথে ম্যাচ না করার কারণেই মোটামুটি প্রথমেই ফিফটি পারসেন্ট গান বাদ পড়ে গেল।
যেমন, যে গানটা আমাদের তখন খুব পপুলার একটা গান ছিল, পপুলার বলতেছি লাইভ পারফরম্যান্সের বিচারে, যখন আমরা লাইভে যেতাম, কিছু গানের রেসপন্স বেশি পেতাম, যেটাতে রেসপন্স বেশি পাচ্ছি, সেটাকে কিন্তু আমরা পপুলার গান হিসেবে ভাবতে পারি; অই রকম একটা গানের নাম ছিল, দেশলাই কাঠি— যেটা বেশিরভাগ মানুষের কাছে ‘সূর্য’ নামে পরিচিত ছিল। আমরা যে ‘সূর্য’ রিলিজ করেছি, আমি ওইটার কথা বলছি না। ওইটা একটু ক্লাসিক্যাল টাইপের গান ছিল; অইটা ডিফারেন্ট, যেটা বুলবুল ভাইয়ের অনেক ম্যাচ করত। ভালো গাইতেন উনি। তো, ওইটা রীতিমতো যেমন আমাদের নিউ ভোকাল গাইতেই পারেনি। ওর এমনিতেও তালে একটু সমস্যা ছিল। ওইটার তালটা ছিল একটু কঠিন। যে কারণে ও পারেনি। সো, উই হ্যাভ টু ডিডাক্ট দ্যাট।
এইটা একটা বড় বিষয়, যে, যদি… আমাদের তো টোটাল ব্যান্ডের একটা শক্তি আছে, আমাদের ড্রামার যদি কোনো একটা গানের সাথে কোনোভাবেই কমফোর্টেবল হইতে না পারে, বাজাতে না পারে… যেমন, পরবর্তীকালে, আমাদের ব্যান্ডের লাস্ট রিলিজড গান হচ্ছে– কাশফুলের শহর দেখা— এটা একটা সাত মাত্রার গান। আমাদের দেশে সাত মাত্রার গান আমার মনে হয় নাই, একটি ব্যান্ডেরও নাই– শিরোনামহীন ছাড়া। সাত মাত্রা তাল হিসেবে কঠিন। আমাদের ড্রামার… উই আর ফরচুনেট এনাফ, আমাদের ড্রামার খুবই স্ট্রং, এবং বাজাতে শুধু সে পারে না, সে প্রচণ্ড ভালো, স্ট্রং, ভেরিস্ট্রং…। সো, ওই জায়গাটা থেকে আমাদের এই সাত মাত্রায় গান করার সুযোগটা এলো, এবং সুরটাও ও-ই করেছে। মানে, এটা আমাদের জন্য স্ট্রাগল হয়নি।
কিন্তু যদি হতো স্ট্রাগল, কী করতে হতো তখন? ড্রামার চেঞ্জ হয়ে গেছে? তখন কিন্তু আমাদেরকে এই গানটা বাদ দিয়ে দিতে হতো। খুব সিম্পল, স্বাভাবিক। বা, ভোকাল এই গানটা ভালো গাইতে পারছে না? গাইতে তো পারতই; যারা ভোকাল, তারা সব গানই গাইতে পারে, আই বিলিভ। যেকোনো ভোকাল আসলে যেকোনো গানই গাইতে পারে। এখন, যে গান গাইতে পারে, যেমন, জেমস হেটফিল্ড অসম্ভব ভালো গায়, বা আমাদের জেমস ভাই ভালো গান গান, বা সাবিনা ইয়াসমীন ভালো গান গান, উনি কিন্তু যেকোনো গানই গাইতে পারেন, ফর শিউর। কোনোটা তার কণ্ঠে ভালো ম্যাচ করবে বা ভালো লাগবে, কোনোটা লাগবে না। যেগুলো ওর [তুহিন] কণ্ঠে ভালো লাগছিল না, সেগুলো আমাদের বাদ দিতে হইছে। সো, এইটা ছিল একটা পদ্ধতি। প্রক্রিয়ার মধ্যে এইটা খুব হিট করেছে।
…
মোস্টলি আসলে অ্যালবামের
রেকর্ডিংয়ে আমি বাজাই।
অলমোস্ট সব
ইনস্ট্রুমেন্টই
বাজাইয়া
ফেলি
…
বাকি অন্যান্য মেম্বার নিয়ে কোনো ট্রাবল ছিল না; কারণ, মোস্টলি আসলে অ্যালবামের রেকর্ডিংয়ে আমি বাজাই। অলমোস্ট সব ইনস্ট্রুমেন্টই বাজাইয়া ফেলি। গানগুলো আমারই তৈরি করা। সো, আমার জন্য কোনো স্ট্রাগল ছিল না। গান বাদ দিতে হবে আমি পারি না বলে, এইরকম ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে কাজ করে নাই। সো, দ্যাট ইজ হোয়াট হ্যাপেনড।
প্লাস, আমরা ওর মধ্য থেকে যেটা একটু বেটার, সেটাকে রাখার চেষ্টা করেছি; যেটা একটু উইক, সেটাকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছি– এই আরকি। এবং ওখান থেকে কিন্তু যেটা ইংরেজি গান অনেক আগের, থ্র্যাশহোল্ড-এর জন্য করেছিলাম– প্রমিজ, সেই গানটা কিন্তু বাংলা করে পাখি হলো; (আমাদের) ফার্স্ট অ্যালবামে কিন্তু পাখি নাই। বিকজ, ব্যান্ডের সবাই মনে করে নাই যে, এই গানটা খুব ভালো। সেকেন্ড অ্যালবামে খুব ফাইট করে এই গানটা আনছিলাম। আমাদের ভোকাল ওইটা গাইতে খুব কমফোর্টেবল ছিল না। হি ডিডেন্ট লাইক দ্যাট সং দ্যাট মাচ। মানে, ‘মন্দ না, বাট, অ্যালবামে আসার মতো না…’– এ রকম বলত। সো, অই জায়গা থেকে এইটা এক অ্যালবাম ডিলেয় হলো।
এই গানটা আমি ভালো বলে বিশ্বাস করি। অনেক গানই আমি ভালো বলে বিশ্বাস করতে পারি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেটা সবাই রিসিভ করে ফেলবে। এটা কিন্তু হয়। এইটা হইতেই পারে। সো, অন্যান্য গানের ক্ষেত্রেও এ রকম অনেক কিছু ঘটছে।

আমাদের গান তো… আমরা তো আসলে অনেক গান বানাই, এবং আমরা সব গান ডেলিভার করি না; বেশিরভাগ গানই কিন্তু বাদ পড়ে যায়। এখনো শাফিনের তৈরি করা আরও ১৫-২০টা গান আছে, যেগুলা এখনো বাদ পড়েই আছে, আর কোনোদিনই হয়তো আসবে না। যেটাকে স্ট্রং মনে হবে আমাদের সবার কাছে, আমরা ভোট দিব, যেটাই আসবে; আদারওয়াইজ আসবে না। সুর করা আছে।…
তো, ওইটাই বলছিলাম, যে, ওই পরিক্রমাটা আমাদের এখনো চলে। আমরা আসলে যা খুশি তা ডেলিভার করি না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা রেগুলার ইন্টারভেলে গান ডেলিভার করতে পছন্দ করি, যেটা আমরা ধরে রেখেছি। হয়তো অনেকে ভেবেছিল আমরা ১৫ দিনে-১৫ দিনে একটা করে গান দিব, বা এক মাসে একটা করে গান দিব; কিন্তু সেটা আমরা করিনি। আমরা হয়তো ছয় মাসে গান দিয়েছি, আমরা হয়তো তিন মাসে গান দিয়েছি, আমরা এক বছর পরে একটা গান দিয়েছি। এটাও হয়েছে। কিন্তু আমরা স্টপ করিনি।
এমন না, যে, আমরা ৫ বছর ধরে বসে আছি, কোনো গান দিচ্ছি না– শিরোনামহীন-এর অ্যাগেইনেস্টে এই কমপ্লেনটা কেউ দিতে পারবে না।