২০ বছর আগে মেটালিকার সঙ্গে গভীর আলাপ [৩]

0
86
মেটালিকা

সাক্ষাৎকার: প্লেবয় প্রতিনিধি
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

আগের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন…


প্লেবয় :: আচ্ছা! সেক্ষেত্রে ‘অ্যালকোহলিকা’র মধ্যে সবচেয়ে বড় মদাসক্ত কে ছিলেন?

হ্যামেট :: জেমস (হেটফিল্ড)। সে একলাই আধা বোতল জিগারমাইস্টার খেয়ে ফেলতে পারত; ভোদকাও।

উলরিক :: জেমস হেটফিল্ড। আমাকে আর জেমসকে যদি একসঙ্গে পানাহারে বসানো হয়, টানা ছয় ঘণ্টা হার্ড ড্রিংক গেলার পর আমিই বোধহয় হার মেনে নেব। একটা সময় আমাদের বাকি সবার চেয়ে একটা ভিন্ন স্তরে অ্যালকোহলকে আপন করে নিয়েছিল সে।

হেটফিল্ড :: আমিই (বেশি খেতাম)। স্রেফ মজা করতে করতেই এক বোতল ভোদকা গিলে ফেলতাম। কী করে যে এখনো বেঁচে আছি, নিজেই অবাক!

নিউস্টেড :: (কে সবচেয়ে বেশি মদাসক্ত ছিল) সেটা বলা মুশকিল। আমার তো মনে হয় লার্স (উলরিক)। মদ’কে সে অন্য স্তরে নিয়ে যেতে জানে; কারণ, সে একজন ডেনিশ। তারা [ডেনিশ] এসবের সঙ্গে অল্প বয়স থেকেই মানিয়ে নিতে জানে।

উলরিক :: হা-হা-হা! মানসিকভাবে আমি অনেক বেশি অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান করতাম; (সপ্তাহে) টানা তিন রাত মদ নিয়ে পড়ে থাকতাম, পরের চার রাত এক ফোঁটা মদ ছোঁয়ারও অবস্থা থাকত না আমার।

নিউস্টেড :: (আমাদের মধ্যে) জেমসই ছিল একমাত্রজন, যে এত বেশি মদ খেত, যার ফলে রিহার্সাল কিংবা ফটোশুটে অংশ নেওয়ার মতো অবস্থা থাকত না ওর। একমাত্র ও-ই নিজেকে আসলে বিষাক্ত অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল।

হ্যামেট :: আমাদের বাকি সবার তুলনায় জেসন (নিউস্টেড) খুব একটা মদাসক্ত নয়। সে বরং গাঁজা টানতেই পছন্দ করে।

প্লেবয় :: ফাস্ট মিউজিক যারা পছন্দ করে, তারা সাধারণত ফাস্ট ড্রাগসও পছন্দ করে। এর ফলে কি ব্যান্ডটি স্পিড পায়?


‘স্পিড’
একটি বাজে
শব্দ। তবে গতিপাগলদের
আমরা পছন্দ
করি

হ্যামেট :: আমাদের ক্যাম্পের বিচারে ‘স্পিড’ একটি বাজে শব্দ। তবে গতিপাগলদের আমরা পছন্দ করি।

উলরিক :: একমাত্র জেমসই সত্যিকার অর্থে কখনোই কোনো ধরনের ড্রাগ অ্যাবিউজের সঙ্গে জড়ায়নি। আমি, জেসন, কার্ক ও ক্লিফ– আমরা সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে নিরীক্ষা চালাতাম, আরেকটু ‘উচ্চতর মাত্রা’য় পৌঁছানোর জন্য।

হ্যামেট :: আমাদের জীবনে কোকেন নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। আমরা অন্য মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে আড্ডাবাজি করি; শুনে রাখুন, কোনো একটি বাথরুম স্টলে পাঁচটা ছেলে ঠাসাঠাসি করে রয়েছে (কোকেন নেওয়ার জন্য)। …অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল [অ্যালবাম] ট্যুরের সময় কোকেন নিয়ে আমার একটা বাজে সমস্যা পোহাতে হয়েছিল, তবে আমি সেটা থেকে বেরিয়ে এসেছি; কেননা, এটা আমাকে আসলে বিষণ্ন করে তোলে।

আমি একসময় কোকেন নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভাগ্য ভালো, জিনিসটা আমার মনে ধরেনি।

…অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল। মেটালিকা

উলরিক :: আমি একবার এসিড [এলএসডি] নেওয়ার চেষ্টা করেছি; কিন্তু নেওয়ার পর বিশ্রি রকমের ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোকেনই একমাত্র মাদক, যেটার সঙ্গে আমি কখনোই সত্যিকার অর্থে নিজেকে জড়াইনি। এর ফলে আমাকে আরও কয়েক ঘণ্টা মদ খেতে হতো। আপনার ঘনিষ্ঠ হওয়ার একটি পন্থা হিসেবে বহু মানুষ এটি ব্যবহার করবে, আর আপনি এভাবে এতে জড়িয়ে যাবেন (সাধারণত এমনটাই ঘটে)।

আমি চক্রগুলোর ভেতর দিয়ে গিয়ে বলি, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি বরং কিছুক্ষণ বাইরে থাকি।’ এরপর এসব থেকে ছয় মাস দূরে থাকি।

প্লেবয় :: জেসন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডটি কি আপনাকে জ্বালাতন করা থামিয়েছিল?


(ব্যান্ডে আমার জন্য)
দ্বিতীয় ও তৃতীয়
বছর দুটি
ছিল
সবচেয়ে নৃশংস

নিউস্টেড :: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আসলে আরও বেশি রূঢ় হয়ে উঠেছিল। (ব্যান্ডে আমার জন্য) দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছর দুটি ছিল সবচেয়ে নৃশংস। ভ্রাতৃত্বমূলক মশকরার পরিবর্তে এ সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডগুলো (আমাকে) গভীর থেকে আহত করত, এবং এসবের ভিত্তি ছিল– অসম্মান।

প্লেবয় :: আপনার প্রতি অসম্মানমূলক কী আচরণ করতেন তারা?

নিউস্টেড :: …অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল-এ বেস ডাউন করে দেওয়া হলো। মিউজিকের দিক থেকে আমার আইডিয়াগুলোকে গ্রাহ্য করা হলো না।

প্লেবয় :: …অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল-এ কি জেসন আদৌ রয়েছেন?

হেটফিল্ড :: ওখানে ওর ছবি আছে… হা-হা-হা…! কেউ একজন আমাকে ইয়ার্কি করে একটা সিডি পাঠিয়েছিল, সেটির বাইরে এক স্টিকারের ওপর লেখা– ‘…অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল— এবার বেস-সহ’!

উলরিক :: আমাদের একমাত্র এই অ্যালবাম নিয়েই আমি একদম স্বস্তি পাই না। অ্যালবামটি মিউজিকের চেয়ে বরং সক্ষমতা ও অনেকটাই অ্যাথলেটিকসের বিষয় হয়ে উঠেছে।

প্লেবয় :: ব্যান্ডগুলো সাধারণ পরিবারের মতো হয়ে থাকে; আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, পুরো ব্যাপারটিই যেন এ বেলা কোনো পারিবারিক দ্বন্দ্বের মতো।


আমাদের ব্যান্ডের অন্দরমহলে
প্রচুর সোপ অপেরা ও
ড্রামা চলতেই
থাকে

হ্যামেট :: আমাদের ব্যান্ডের অন্দরমহলে প্রচুর সোপ অপেরা ও ড্রামা চলতেই থাকে। নিজেকে আমার রেফারি বলে মনে হয়। জেমস আর লার্সের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি হুঁইসেল বাজাই; লার্স ও জেসনের মধ্যে দাঁড়িয়েও বাজাই হুঁইসেল।

হেটফিল্ড :: লার্সের নামটি বারবার এসেছে, তাই না? হা-হা-হা…! সাধারণত ও-ই উসকানি দেয়, ওর মুখ দিয়ে। সময়ে সময়ে সে একজন সত্যিকারের জঘণ্য লোক হয়ে ওঠে, ফালতু ভাব দেখায়। একবার মঞ্চের মধ্যেই আমি ওকে ঘুষি মেরেছিলাম, সম্ভবত আমাদের জীবনের তৃতীয় গিগে। আমাদের পুনরাবৃত্তি হিসেবে লেট ইট লুজ গানটা করব– এ ব্যাপারে আমরা একমত ছিলাম, অথচ সে হুট করেই আরেকটা গান বাজাতে শুরু করল– কিলিং টাইম। কারণ, ওই গানের শুরু হয় ড্রামস দিয়ে। আমি ওর দিকে ঘুরে বললাম, ‘মাদারচোদ!’ ওই গানের কথাগুলো আমি মনে করতে পারছিলাম না, ফলে যাচ্ছেতাই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল।

কিলিং টাইম । মেটালিকা

উলরিক :: যে গান আমার বাজাতে ইচ্ছে করেছিল, সেটাই বাজাতে শুরু করেছিলাম। কারণটা এখন আর ঠিক মনে নেই; হয়তো পুনরাবৃৃত্তির জন্য ওই গানকেই আমার কাছে বেশি যথাযোগ্য মনে হয়েছিল। আর তখনই ও [জেমস হেটফিল্ড] এসে আমাকে ঘুষি মেরে বসল।

হেটফিল্ড :: মনে পড়ে, বেশ কয়েকবার ওকে ওর ড্রাম কিটের ওপর, ওর ড্রাম-সিম্বলসের ওপর ফেলে দিয়েছিলাম, ওর মাথা কেটে গিয়েছিল।

উলরিক :: জেসনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মারামারি লেগে গেছে আমার।

হ্যামেট :: ব্যান্ডে কখনো কাউকে আমি শারীরিক আঘাত করিনি। এখন আমি প্রচুর যোগ-ব্যায়াম করি; প্রাচ্যের দর্শনের ওপর প্রচুর পড়াশোনা করি। ‘কর্ম’র ওপর আমার ব্যাপক বিশ্বাস রয়েছে: মাংস খাই না, গরুর মাংস তো নয়ই, শূকরের মাংসও না, পাখির মাংসও না।

হেটফিল্ড :: নিশ্চিতভাবেই আমি এই ব্যান্ডের সবচেয়ে স্মার্ট লোক নই; ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো তর্কে আমার জয়ের প্রশ্নই ওঠে না। সহিংসতার পথই বরং কাজে লাগে! এবং ভয় দেখানোও!

হ্যামেট :: জেমস যখন আপনার ওপর চিৎকার শুরু করবে, সেটির কারণ– আপনাকে সে ভয় দেখাতে চাচ্ছে।

প্লেবয় :: মেটালিকায় কত বাজে কাণ্ডই না ঘটেছে! তার মানে, এই ব্যান্ডের ওপর কি কোনো মন্দ ‘কর্ম’ বা অভিশাপ আছে?

হ্যামেট :: থাকা যথেষ্ট সম্ভব। হায় ঈশ্বর, কত কিছুর ভেতর দিয়েই না যাচ্ছি আমরা! ‘কর্মফলে’র ব্যাপার তো আছেই। এটিই আমাদের গানগুলোকে তৈরি করে নেওয়ার শক্তি যোগায় কি না, আমি নিশ্চিত নই। লোকে আমাদের মিউজিকে এনার্জি প্রবাহ করে: তা ৯০ শতাংশই সময়েই ভালো, তবে হয়তো ১০ শতাংশ সময়ে খারাপ। স্কিনহেডদের কাণ্ডকীর্তির গল্প আমি শুনেছি: তারা আমাদের গান শোনে, আর বিরাট স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা বাহুতে আমাদের গানের শিরোনাম ট্যাটু করে রাখে। এটি হয়তো স্রেফ ব্যক্তিগত ‘কর্মফল’। হয়তো নিজ ব্যক্তিগত কর্মফলের কারণেই জেমসের জীবনে এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, আর সেটির প্রভাব পড়েছে ব্যান্ডটির ওপর।

প্লেবয় :: …অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল-এর পর ব্ল্যাক অ্যালবাম-এর মাধ্যমে শুরু হওয়া পরিবর্তন সম্পর্কে কী বলবেন?

উলরিক :: আমাদের শুরুর দিকের অ্যালবামগুলো ছিল পাশবিক শক্তির মতো বিষয়আশয় নিয়ে। জেমস দিনে দিনে যত বেশি স্বস্তি পেতে শুরু করল, ভঙুরতা ও দ্বিধার উপাদানগুলো তত জুড়ে যেতে থাকল, আর বুক চাপড়ানো ধরনের জিনিসগুলো তত কমতে থাকল। ‘আমি চুদে গেছি, সামনে যা পাব– সবাইকে মেরে ফেলব’ ধরনের জায়গা থেকে হয়ে ওঠল, ‘আমি চুদি গেছি, আমি সত্যি ভুগছি ভীষণ’ ধরনে।

হেটফিল্ড :: ব্ল্যাক অ্যালবাম-এর জন্য আমি যখন গান লিখতে বসলাম, আসলেই জানতাম না কী নিয়ে লিখব। ব্যান্ড সমর্থন দিতে পারবে– এমন গান লেখার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমরা তো চারজন সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তিমানুষ। ফলে কাজটি করার রাস্তা শুধু একটিই ছিল।

প্লেবয় :: জেমস, আপনি যত গান লিখেছেন, সেগুলোর মধ্যে কোনটির রেকর্ডিং করতে আপনার সবচেয়ে বেশি ইতস্তত লেগেছে?

নাথিং এলস ম্যাটারস । মেটালিকা । অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিও

হেটফিল্ড :: নাথিং এলস ম্যাটারস। এটি ছিল বিশাল এক টার্নিং পয়েন্ট। এটি ছিল ভীষণ সংবেদনশীল।

প্লেবয় :: নাথিং এলস ম্যাটারস-এর থিম অনেকটা স্টাইক্স ব্যান্ডের বেব গানটির মতো।

হেটফিল্ড :: [মুচকি হাসি দিয়ে–] আপনারে চুদি! ফাক ইউ ভেরি মাচ! আমার মনেই হয়নি গানটি (আমাদের) ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের পছন্দ করবে। অথচ তারা সত্যিকার অর্থেই এই গানে সমর্থন জুগিয়েছে।

হ্যামেট :: সেই সময়ে আমি শুধুই ভাবছিলাম, জেমস কি ওর প্রেমিকার জন্য একটা ফালতু প্রেমের গান লিখেছে? কী উদ্ভট ব্যাপার!


মেটালিকা
কোনো কান্ট্রি
ধরনের গান করবে,
আমি ভাবতেও পারি না

নিউস্টেড :: শুরুতে এটাকে আমার কাছে মেটালিকা ধরনের গান মনে হয়নি। ফাস্ট ও হেভি জিনিসপত্র আমার পছন্দ। মেটালিকা কোনো কান্ট্রি ধরনের গান করবে, আমি ভাবতেও পারি না। এটিকে অনেকটা (লোড অ্যালবামের) মামা সেইড গানটির মতোই করে তুলেছি আমরা। আমার মনে হয় না, এ ধরনের গান আমার খুব একটা ভালো লাগে।

হ্যামেট :: ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ও মানসিকভাবে শক্তিশালী– এমন এক ব্যক্তিসত্তা হিসেবেই নিজেকে সব সময় জাহির করতে চায় জেমস। সংবেদনশীল দিক রয়েছে– এমন কোনো গান লেখা ওর পক্ষে সত্যি খুব শক্ত কাজ।

লার্স, জেসন ও আমি তখন বিবাহবিচ্ছেদের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। অপরাধবোধ ও ব্যর্থতার অনুভূতিগুলো বয়ে বেড়িয়ে, মিউজিকের মাধ্যমে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছিলাম আমি, যেন সেটি থেকে ইতিবাচক কিছু পেতে পারি।

জেসন ও লার্সেরও তখন একই অবস্থা; আমার ধারণা, এ কারণেই ব্ল্যাক অ্যালবাম শুনতে এমন আলাদা লাগে।

প্লেবয় :: আগে আপনারা ছিলেন অতি জনপ্রিয় হেভি মেটাল ব্যান্ডগুলোর একটি। কিন্তু ব্ল্যাক অ্যালবাম-এর মাধ্যমে আপনারা মেইনস্ট্রিম হয়ে উঠলেন।

নিউস্টেড :: এমটিভি’তে আমরা একবার হিট হওয়ামাত্রই সুন্দরি মেয়েরা শো দেখতে ভিড় শুরু করল; আর সেটা ঘটে গেল স্রেফ রাতারাতি।

হ্যামেট :: কথাটি শুনতে ক্লিশে লাগলেও সত্য– মেয়েরা মেলোডি পছন্দ করে, তারা সফট ও মিষ্টি গান পছন্দ করে। আর এ কারণে এটি [ব্ল্যাক অ্যালবাম] তাদেরকে আমাদের ছোট্ট ফাঁদে টেনে এনেছিল, ফাঁদটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য।

প্লেবয় :: আপনি কি মনে করেন…

হেটফিল্ড :: …না। মনে করতে [ভাবতে] আমার ভালো লাগে না।

প্লেবয় :: খুব অল্প কয়েকটি অ্যালবামই ১ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, ব্ল্যাক অ্যালবামই এই ব্যান্ডের সেরা অ্যালবাম?

হেটফিল্ড :: এখানে এমন কিছু গানও রয়েছে, যেগুলো আমার পছন্দ নয়। থ্রো দ্য নেভার গানটি খানিকটা খেপাটে। মিউজিকের প্রশ্নে ডোন্ট ট্রেড অন মি সম্ভবত আমার পছন্দের গান নয়। হোলিয়ার দ্যান থো ছিল অন্যতম হাস্যকর গান; অনেকটাই পুরনো দিনের গানের মতো এর কথা।

‘লোড’ যুগে মেটালিকা

প্লেবয় :: এরপর লোড অ্যালবামটি যখন প্রকাশ পেল, তখন চুল ছোট, মেকআপ ও ট্রেন্ডি পোশাকে দেখা মিলল আপনাদের। ডেনিম ও মালেটস থেকে এ একেবারেই একটা পরিবর্তন।

হ্যামেট :: সেটা ছিল স্রেফ একটা ধাপ। ছিল যুগের ভাবনা। কে জানে? ভবিষ্যতে হয়তো আরও এক্সট্রিম কিছু করব আমরা।

প্লেবয় :: যেমন, মেয়েলি পোশাকে হেটফিল্ড?

হ্যামেট :: সেটা বোধহয় বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে… হা-হা-হা…!

হেটফিল্ড :: ভাবমূর্তি রক্ষার লড়াইয়ে লার্স ও কার্ককে খানিকটা এগিয়ে যেতে দিয়েছি আমি। এ নিয়ে আমি আসলেই ভাবি না। আমাদের ফ্যানরা বলে, “বিদ্রোহী, লম্বা চুল, রাগি বাইকার, ‘ফাক-ইউ’ টাইপ মেটালিকার হলোটা কী?” দেখুন, ইউটু কিংবা স্টোন টেম্পল পাইলটস কিংবা আরও কিছু ব্যান্ডকে আসলে কোনো ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করতে হতো। আমাদের সেসবের কী দরকার? এ স্রেফ ফালতু জিনিস। জেসন আর আমি এ নিয়ে একদমই মাথা ঘামাতাম না; কার্ক ও লার্স ঘামাত। আপনি হয় এ নিয়ে হাসাহাসি করবেন, নয়তো নিজেকে গুটিয়ে নেবেন। আমি দুটোই করি, আসলে।

প্লেবয় :: মালেটস [হেয়ারস্টাইলবিশেষ: সামনে ছোট ও পেছনে বড় চুল] ছাড়াই আপনাদের বেশ সুদর্শন লাগছিল।

হেটফিল্ড :: হায় ঈশ্বর! মালেটসই বিধি। ডুড, আমি একইসঙ্গে লম্বা ও ছোট চুল রাখতে চেয়েছিলাম।

হ্যামেট :: আমি কখনোই মালেট রাখিনি, বুঝলেন?

নিউস্টেড :: ১৯৮৭ সালের তিন মাসের কথা বাদ দিলে আমি কখনোই চুলে মালেট কাট দিইনি।

উলরিক :: আমাদের মধ্যে সম্ভবত একমাত্র জেমসেরই মালেট ছিল।

গ্যারেজ ইঙ্ক.

প্লেবয় :: দেখুন, গ্যারেজ ইঙ্ক. অ্যালবামে আপনারা মালেটের পাশাপাশি ইনার স্লিভ পরেছিলেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়, লার্স। জেমস যদি তার মালেট আবার বড় করতেন, কেমন হতো?

হ্যামেট :: যদি করে, তাহলে আমি আমার চুলে গোলাপি রঙ লাগাব। ‘তুমি চুলে হাস্যকর হেয়ারকাট দিয়েছ? আমিও পারি!’

প্লেবয় :: জেমস, আপনি একজন প্রো-গান ও প্রো-এনভায়রনমেন্ট। আপনি কি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে) আল গোর’কে ভোট দিয়েছিলেন?

হেটফিল্ড :: না। আমার ধারণা, কেউ বোধহয় আমার অস্ত্রগুলো সরিয়ে ফেলেছিল।

প্লেবয় :: তার মানে, আপনি বুশকে ভোট দিয়েছিলেন?

হেটফিল্ড :: না। ভোট দিতে হলে শহরে যেতে হবে। এ কারণে আমি ভোট দিই না।

প্লেবয় :: আপনি বললেন, মদ্যপান ও পারফর্ম করা থেরাপির মতো কাজে দেয়। আপনি কি কখনো সত্যিকারের থেরাপি নিয়েছেন?

হেটফিল্ড :: [মাথা নেড়ে–] লোড-এর সময়ে; তখন মনে হয়েছিল, আমি মদ্যপান থামাতে চাই। ‘আমি বোধহয় কিছু একটা খুইয়ে ফেলছি। বাকি সবাইকে সব সময় ভীষণ সুখী মনে হয়। আমিও সুখী হতে চাই।’ হ্যাংওভার ঘিরে আমার জীবনের একটা পরিকল্পনা ছিল: ‘শহরে শুক্রবার মিসফিটস-এর [ব্যান্ড] কনসার্ট; তার মানে শনিবার হ্যাংওভার ডে।’


ভেতরের
শয়তানকে
বের করে দেওয়ার
জন্য খুবই বাজেভাবে
নিজের শরীর থেকে রক্ত
ঝরানোর চেষ্টা চালিয়েছিলাম আমি

জীবনের অনেকগুলো দিন আমি খুইয়ে ফেলেছি। এক বছর ধরে থেরাপি নিয়ে নিজের সম্পর্কে অনেককিছু জেনেছিলাম। বড় হওয়ার কালে প্রচুর বিষয় আপনার ওপর আঁচড় বসাবে, যার কারণ জানা থাকবে না আপনার। (লোড অ্যালবামের) ব্লিডিং মি গানটি এসব ঘিরেই: ভেতরের শয়তানকে বের করে দেওয়ার জন্য খুবই বাজেভাবে নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর চেষ্টা চালিয়েছিলাম আমি। যখন থেরাপি নিচ্ছিলাম, সেখানে কুৎসিত কিছু খুঁজে পেলাম: একটা কালো দাগ।

https://youtu.be/cHxCjZX9n3E
লোড । মেটালিকা

প্লেবয় :: তার মানে, ‘অ্যালকোহলিকা’র সবচেয়ে বড় মদাসক্তটি মদ খাওয়া থামিয়ে দিয়েছিলেন?

হেটফিল্ড :: মদ খাওয়া ছাড়তে আমার এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে; আর তাতে আকাশ ভেঙে পড়েনি। এ স্রেফ জীবন; তবে ফূর্তি একটু কম। শয়তানটি বেরিয়ে যায়নি। আমি হাসতাম না; ভালো সময় কাটাতাম না। বুঝতে পারলাম, মদপান আমার নিজেরই একটি অংশ। এখন জানি, কতদূর যাওয়া যাবে। নিজের যখন বাচ্চাকাচ্চা হবে, তখন হ্যাংওভার হওয়া ঠিক হবে না আপনার: ‘আব্বু, ফালতু বিছানাটা থেকে একটু ওঠো তো!’ অবশ্য, ওরা [সন্তান] এখনো এমন কথা বলেনি আমাকে।

প্লেবয় :: আপনি কি কখনো এএ’তে [অ্যালকোহলিক অ্যানোনিমাস: সংগঠনবিশেষ] গিয়েছিলেন?

হেটফিল্ড :: নিজেকে অ্যালকোহলিক বলব না; তবে, জানেন তো, অ্যালকোহলিকমাত্রই বলে– তারা অ্যালকোহলিক নয়।

প্লেবয় :: সে সময়ে আপনি আপনার বাবার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন বেশি। কেমন ছিল সেটি?

হেটফিল্ড :: এর শুরুটা সত্যি খুব খারাপ ছিল। পরিবারের যা অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, সে কারণে তার ওপর খুব খ্যাপা ছিলাম আমি। সত্যিকারের বাবা-ছেলে ধরনের সম্পর্ক আর কখনোই গড়ে ওঠেনি।

হ্যামেট :: জেমস (আগে) হুটহাট রেগে যেত, মদ খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত, সব সময় ঝগড়া-মারামারি করত আর নানা রকম ঝামেলায় জড়াত। এখন সে যথেষ্ট শান্ত। আমার ধারণা, [১৯৯৬ সালে, লোড ট্যুর চলাকালে] ওর বাবার মৃত্যুর পর অনেক পরিবর্তন এসেছে ওর মধ্যে। এরপর থেকে সে স্রেফ অনেক বেশি সমঝদার, বিবেচক ও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছে।

জেমস হেটফিল্ড; মালেট হেয়ারকাটে

প্লেবয় :: একজন আলোকিত রেডনেক ধরনের মানুষ হিসেবে জেমস আমাদের বিস্মিত করেছেন।

হ্যামেট :: এ কথার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। এমন এক নির্দিষ্ট জীবনযাপনের মধ্যে সে থাকে, যেটিকে নিয়ে সহজেই মজা কুড়ানো সম্ভব: গ্রামাঞ্চলে থাকে, প্রচুর বিয়ার খায়, তার বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র আছে, সে শিকারে যায়।

হেটফিল্ড :: আমি সবজিও খাই, বুঝলেন! এগুলোকে খুন করা তো স্রেফ একেবারেই সহজ কাজ। গাজর তো পালানোর কোনো সুযোগই পায় না। আমার ধাারণা, পশু-প্রাণী আমাদের জন্যই। আমরা খাদ্য শৃঙ্খলের চূড়ায় থাকি।

প্লেবয় :: আপনার বোধহয় পেটা [পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিমেলস: প্রাণী অধিকার সংগঠন] সমর্থনকারী ব্যান্ডগুলোর কোনোটিকে সঙ্গে নিয়ে কোনো শিকার অভিযানে যাওয়া উচিত, যেমন– ইন্ডিগো গার্লস।

হেটফিল্ড :: সেক্ষেত্রে আমার আগে কোনটাকে খুন করা উচিত হবে?! ওহ, তারাও আমার সঙ্গে শিকার করবে?


উৎস: প্লেবয়। এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা

চতুর্থ ও শেষ কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: লালগান । ঢাকা, বাংলাদেশ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল: সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো : প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৩ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; বেলা তার; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান