সাক্ষাৎকার: প্লেবয় প্রতিনিধি
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
আগের কিস্তিগুলো: কিস্তি-১ ।। কিস্তি-২ ।। কিস্তি-৩
প্লেবয় :: মেটালে হোমোফোবিয়ার মাত্রা নিয়ে আপনারা কি অস্বস্তিবোধ করেন?
উলরিক :: পুরোপুরিই। শেষ পর্যন্ত, আমি আর কার্ক কেন ক্যামেরার সামনে একবার পরস্পরের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে পারফর্ম করেছিলাম? মেটাল দুনিয়ার আসলে যতটা সম্ভব ‘চুদে যাওয়া’ লাগে। ব্যান্ডটি যখন যাত্রা শুরু করে, আশেপাশের সবাইকে তখন সমকাম ও এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে নিজেদের হেটারোসেক্সুয়ালিটির প্রমাণ দিতে হচ্ছিল। যেমন ধরুন, ‘ওহ, ফাকিং ফ্যাগোট।’ এটি কি আপনার পুরুষকাম মর্যাদাকে কোনোভাবে বাড়িয়ে তোলে? আমি তা কোনোদিনই বুঝলাম না।
প্লেবয় :: আমরা জেমসকে রসিকতা করে ‘ফ্যাগ’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুনেছি। তার মানে তিনি হোমোফোবিক?
হ্যামেট :: হুম, সম্ভবত। সমকামীদের ব্যাপারে জেমসের খুব বেশি অভিজ্ঞতা ছিল না; এটিই তার হোমোফোবিক হওয়ার বড় কারণ। এই জায়গাতে তার আলোকিত হওয়ার দরকার আছে।

উলরিক :: আমি জানি, সে হোমোফোবিক। এ নিয়ে তাই প্রশ্ন না তোলাই ভালো। আমার ধারণা, হোমোফোবিয়া হলো আপনার যৌনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং এটির সঙ্গে স্বস্তিবোধ না করা।
প্লেবয় :: বহু বছরের মধ্যে এই প্রথমবার টপচার্টগুলোর শীর্ষে প্রচুরসংখ্যক মেটাল ব্যান্ড জায়গা করে নিয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগই একেবারেই বাজে ব্যান্ড; তাই না?
হ্যামেট :: এখানে প্রচুর ফালতু জিনিস রয়েছে। বমি পাওয়ার মতো প্রচুর বাজে জিনিসও। পাপা রোচ-এর [আমেরিকান রক ব্যান্ড] গানটার [লাস্ট রিসোর্ট] মেইন রিফ’টা তো আয়রন মেইডেন-এর হ্যালোয়েড বি থি নেম থেকে নেওয়া।
…
কিছু
লোক শুধু
চিল্লাচ্ছে– এ আমার
পছন্দ
নয়
…
হেটফিল্ড :: লিম্প বিজকিটকে আমার কাছে খানিকটা কার্টুন-কার্টুন লাগে। কিছু লোক শুধু চিল্লাচ্ছে– এ আমার পছন্দ নয়। (রক ব্যান্ড) রেজ অ্যাগেইন্সট দ্য মেশিন-এর মতোই, এরা গান গাইছে না; এরা স্রেফ ফালতু ধরনের লোক– যারা নিজেদের অভিমত আপনাকে বলে দিচ্ছে।
হ্যামেট :: লিম্প বিজকিটকে শুনতে আমার কাছে কোনো দ্বিতীয় স্তরের কর্ন বলে মনে হয়। কর্ন-এ এরচেয়ে যথেষ্ট ভালোমানের একজন ভোকালিস্ট আছেন, যিনি বুদ্ধিদীপ্তও। এইসব ব্যান্ডের অনেকগুলোর যেকোনো মেটাল ব্যান্ডের মতো সঠিক উপাদান, সঠিক ফর্মুলা রয়েছে। গডস্ম্যাক-এর মতো ব্যান্ড তো স্রেফ মেটালিকা ও অ্যালিস ইন চেইনস-এর একটি সংমিশ্রণ, সঙ্গে খানিকটা কর্ন জুড়ে নেওয়া।

হেটফিল্ড :: কুইনস অব দ্য স্টোন এইজ ব্যান্ডটি অসামান্য। রকেট ফ্রম দ্য ক্রিপ্ট ব্যান্ড শুনতে আমার দারুণ লাগে।
প্লেবয় :: আপনাদের মধ্যে তিনজন বিবাহিত; আপনাদের মধ্যে দুজনের সন্তান রয়েছে। এর ফলে কতটা পরিবর্তন এলো (ব্যক্তিজীবনে)?
নিউস্টেড :: পাঁচ বছর আগে অন্য সবকিছুর আগে ব্যান্ডেরই প্রাধান্য ছিল। এখন পরিবারের প্রাধান্য সবার আগে। আমি এটা বুঝি। পরিবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (এই ব্যান্ডে এখন পর্যন্ত) একমাত্র আমিই অবিবাহিত; মিউজিক এখনো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ।
আমি বলতে চাচ্ছি, আমার কাছে ব্ল্যাক স্যাবাথ সর্বকালের এক নম্বর ব্যান্ড; তবে মেটালের প্রশ্নে মেটালিকা আরও বেশি কিছু করেছে। মেটালিকা সর্বকালের সবচেয়ে বড় হেভি মেটাল ব্যান্ড। সেই দাপট আমি ধরে রাখতে চাই।
…
আমি
যদি কারও
সঙ্গে না বাজিয়ে
মাত্র ছয়দিন কাটানোরও
চেষ্টা করি, তাহলে
দুশ্চিন্তা-ব্যাধিতে
ভুগতে শুরু
করব
…
তবে মেটালিকা আমার মিউজিক্যাল জীবনের একটি অংশই শুধু, তাই না? মিউজিক থেকে ছয় মাস দূরে থাকতে পারলে এই লোকগুলো [মেটালিকার সদস্যরা] খুশি হবে। তাদের মাথায় অন্য জিনিস রয়েছে। অথচ আমি যদি কারও সঙ্গে না বাজিয়ে মাত্র ছয়দিন কাটানোরও চেষ্টা করি, তাহলে দুশ্চিন্তা-ব্যাধিতে ভুগতে শুরু করব।
প্লেবয় :: এ কথা শুনে মনে হচ্ছে, এ ধরনের বিশ্রাম নেওয়াকে আপনি হতাশাজনক বলে মনে করেন।
নিউস্টেড :: হ্যাঁ। জেমস আর লার্স এ কাজ [ব্যান্ড] একসঙ্গে শুরু করেছিল। সব ধরনের কঠোর পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে তারা এসেছে। ব্যান্ডটি সম্পর্কে, এটিকে কীভাবে চালানো দরকার– সেই সম্পর্কে তাদের গুরুতর, পাথরে খোদাই করে রাখার মতো অনুভূতি রয়েছে। সেটি হজম করা কখনো কখনো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
আমার ধারণা, আমাদের বোঝাপড়াটি এমনই– আমরা অন্য কোনো ব্যান্ডের মতো হতে চাই না, যেগুলোর লোকেরা (ব্যান্ডের) পাশাপাশি সাইড প্রজেক্ট নিয়েও ব্যস্ত থাকে। অন্য মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে কিছু অবিশ্বাস্য রকমের দুর্দান্ত মিউজিক আমি করেছি। শুনলে মানুষ একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যাবে; স্তব্ধ হতে বাধ্য। কিন্তু সেটি আমি রিলিজ দিতে পারব না।
প্লেবয় :: জেমস আর লার্স আপনাকে তা করতে দেবেন না?
নিউস্টেড :: লার্স না।
…
আমাদের পক্ষে শুধু একভাবেই
এই ব্যান্ড থেকে সরে
যাওয়া সম্ভব:
যদি মারা
যাই
…
হেটফিল্ড :: সাইড প্রজেক্ট নিয়ে আমার স্রেফ আপত্তি রয়েছে। ভক্তরা মেটালিকাকে সবসময়ই ভরসার জায়গা থেকে দেখে: আমরা যখনই হাজির হই, সবসময় থাকি দাপুটে, আর একটি ব্যান্ড হিসেবেই। যেদিন পথচলা শুরু করেছিলাম, সেই প্রথম দিন থেকেই এখনো আমরা সেই একই রকম মানুষ। আমাদের পক্ষে শুধু একভাবেই এই ব্যান্ড থেকে সরে যাওয়া সম্ভব: যদি মারা যাই।
আপনি যখন মেটালিকা বলেন, তখন ঠিকই জানেন, কার কার কথা বোঝাচ্ছেন: লার্স, জেমস, কার্ক আর… কী যেন নাম ছেলেটার?… জেসন… হা-হা-হা…! কেউ যখন কোনো সাইড প্রজেক্ট করে, সেটি মেটালিকার কাছ থেকে সবসময়ই শক্তি নিংড়ে নেয়। ফলে কাজটি পরে খানিকটা কুৎসিত হিসেবেই ধরা দেয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলাও ঠিক নয়।
নিউস্টেড :: জেমস হেটফিল্ড হলো মেটালিকার অন্তর ও আত্মা এবং গর্ব; সে-ই এ নামের রক্ষাকর্তা। তাকে আমি কিছুতেই অসম্মান করতে পারব না।
প্লেবয় :: কিন্তু আপনাকে অ্যালবাম রিলিজ করতে দিয়ে তিনি তো আপনার প্রতি সম্মান জানাতে পারেন?

নিউস্টেড :: আমরা আসলে এমন একটি বিষয়ের কাছে পৌঁছাচ্ছি, যেটি নিয়ে আমাদের কথা বলা ঠিক না। এই মিউজিক আসলে আমার নিজেরই সত্যিকারের একটা অংশ, ঠিক যেমনিভাবে তার মিউজিক তার নিজের কাছে সন্তানের মতো– আমি চাই সে যেন এটাকে এভাবেই দেখে।
প্লেবয় :: আপনি অ্যালবামটি রিলিজ করতে চান– এ কথা জেমসকে যখন জানালেন, তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
নিউস্টেড :: সে কথা আপনাকে বলব না। তারচেয়ে বরং প্রসঙ্গ পাল্টানো যাক।
হেটফিল্ড :: এর শেষ কোথায়? সে কি এটাকে নিয়ে ট্যুর শুরু করে দিয়েছে? সে কি টিশার্ট বেচে? এটা কি তার ব্যান্ড? এ জিনিসটা আমার পছন্দ নয়। এ যেন নিজের স্ত্রীকে ঠকানোর মতো ব্যাপার। আমরা সবাই মেটালিকার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। পরস্পরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে রয়েছি আমরা।
প্লেবয় :: তাহলে এই বিরতিকালে জেসনের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
হেটফিল্ড :: আরে বাল! আমি কী করে বলব? আমি ওর ট্রাভেল এজেন্ট না।
হ্যামেট :: আমার স্রেফ একটাই আশা, যেন নিজেরা একে অন্যের ‘বালের’ গলা টেনে না ছিড়েই অখণ্ড হিসেবে টিকে থাকতে পারি।
প্লেবয় :: লার্স, আপনার কি মনে হয় জেসন তার অ্যালবামটি রিলিজ দিতে পারবেন?
উলরিক :: ‘রেকর্ডটা তুমি রিলিজ দিতে পারবে না’– ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এমন কথা বলতে পারব না। মানুষ হিসেবে আমি এ ধরনের নই। আমার পক্ষে স্রেফ এটুকুই বলা সম্ভব। এইসব নোংরামির মধ্যে নিজেকে জড়াতে পারব না। আমার পারিবারিক জীবনে, আমার স্ত্রীর সঙ্গে কিছু ব্যাপার রয়েছে, সেগুলো আমার কাছে জেমস হেটফিল্ড ও জেসন নিউস্টেডের পরস্পর কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্লেবয় :: জেসন যদি অ্যালবামটি প্রকাশ করে দিতেন, কী হতো তাহলে?
হেটফিল্ড :: জানি না। আমার ভীষণ খারাপ লাগত।
প্লেবয় :: রেকর্ডটি কেমন?
হ্যামেট :: এ এক তুখোড় অ্যালবাম।
উলরিক :: দারুণ রেকর্ড, ভীষণ ব্লুজি, ঠিক যেন স্টিভি রে ভনের কাজের কোনো পপার ভার্সন।
হেটফিল্ড :: সমীহ করার মতো।
হ্যামেট :: এ নিয়ে জেসনের সঙ্গে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেছি। তার মন খারাপ করিয়ে দিয়েছি। জেমস যেকোনো মূল্যেই বিশ্বস্ততা ও একতা ধরে রাখার পক্ষে; সেটা আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু সে আসলে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলেছে, নিজেই বুঝতে পারছে না। জেসন তো মিউজিকের মধ্যেই খায়-দায়-ঘুমায়। আমি মনে করি, কাউকে তার আনন্দ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা নৈতিকভাবে অনুচিত। ওই অ্যালবাম কোনো না কোনো ফরম্যাটে সবসময়ই পাওয়া যাবে– হয় ন্যাপস্টারে, নয়তো দোকানে; লোকে এটা শুনবেই।
প্লেবয় :: জেসন যদি ন্যাপস্টার থেকে নিজের অ্যালবাম রিলিজ করে, ব্যাপারটা হাস্যকর দেখাবে না?
হ্যামেট :: সেটা হবে ফালতু রকমের পরিহাস।
হেটফিল্ড :: কেউ যদি আমাকে ব্যান্ডটির অ্যাসহোল ভাবে, তাতে আমার কিছুই করার নেই। আমি আসলে ব্যান্ডের ভেতরকার লোকজনের কথা বোঝাচ্ছি। তবে লার্সকে ফ্যানরা অ্যাসহোল ভাবলে ঠিক আছে… হা-হা-হা…!
নিউস্টেড :: জেমসও (অন্যদের) অল্প কয়েকটি রেকর্ডে কাজ করেছে: সাউথ পার্ক মুভিতে, যখন কেনি জাহান্নামে চলে গেলেন, জেমসই গেয়েছে; তাছাড়া প্রতিটি করিসন অব কনফর্মিটি অ্যালবামেও সে রয়েছে। সেটা তার ব্যাপার; তবে এ কাজ আমি চালিয়ে যাব। আমি নিজের কাজে বাজাতে পারব না, অথচ সে ঠিকই অন্যদের সঙ্গে বাজিয়ে যাবে!
হেটফিল্ড :: ওইসব রেকর্ডে আমার নাম নেই। আমি সেগুলো বেচা-বিক্রির চেষ্টাও করি না।
প্লেবয় :: আপনি ব্যান্ডে বিশ্বস্ততা ও একতা চান; অথচ নিজেই যদি ভীষণ রকমের একনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন, তাহলে তো ব্যান্ড সদস্য হারাতে থাকবেন। এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে তিনটি শব্দ মনে করিয়ে দিতে পারি: গানস এন’ রোজেস।
…
এমন
কিছু ঘটার
আগেই আমি
আমাদের (ব্যান্ডের)
সবাইকে মেরে ফেলব
…
হেটফিল্ড :: কী নোংরা তিনটা শব্দরে… হা-হা-হা…! অনিয়ন্ত্রিত ইগোর শিকার হওয়ার এক চূড়ান্ত উদাহরণ তারা। আমরা নিশ্চিতভাবেই গানস এন’ রোজেস পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। আমাদের ক্ষেত্রে এমনটা কখনোই ঘটবে না। এমন কিছু ঘটার আগেই আমি আমাদের (ব্যান্ডের) সবাইকে মেরে ফেলব।
প্লেবয় :: (আপনাদের ব্যান্ডে) এখন একজনের বিরুদ্ধে তিনজনের অবস্থান: জেসনকে তার রেকর্ড রিলিজ করতে দেওয়ার পথে আপনিই একমাত্র বাধা। এতে কি সংঘাত ঘটছে না?
হেটফিল্ড :: আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্রেফ খানিকটা বেঁকে যাচ্ছে।
প্লেবয় :: …কিংবা বেঁকে গেছে।
হেটফিল্ড :: আমার পিঠে ব্যথা; ফলে সেটা আমি নই!
প্লেবয় :: এইসব সংঘাত কি শেষ পর্যন্ত ব্যান্ডের কোনো কাজে আসে?
উলরিক :: গত ১৫ মিনিটে ‘সংঘাত’ শব্দটা আপনি বহুবার ব্যবহার করলেন। শেষ পর্যন্ত, আমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি প্রচুর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে, ফলে এইসব ঘেউ ঘেউ ঠিকই উৎরে যেতে পারব। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা প্রত্যেকেই এখনো এই ব্যান্ডেই রয়েছি। একমাত্র আমরাই এখনো এমন সক্রিয়।
…
সবকিছু তুচ্ছ করে মঞ্চে উঠে
বাকি সবার পোঁদে লাথি
বসাতে আমরা
যথেষ্ট সক্ষম
…
আপনি যে সংঘাতের কথাই বলুন না কেন, একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার একটা পথ আমরা ঠিকই খুঁজে নিতে জানি, এবং সবকিছু তুচ্ছ করে মঞ্চে উঠে বাকি সবার পোঁদে লাথি বসাতে আমরা যথেষ্ট সক্ষম।
প্লেবয় :: এটি কি মেটালিকার অভ্যন্তরীণ নিত্যনৈমিত্ত উত্তেজনা, নাকি তারচেয়েও খারাপ অবস্থা?
উলরিক :: দারুণ প্রশ্ন। আমরা চারজন আলাদাভাবে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি– ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। আপনাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করে নিজের কাঁধ থেকে ভার সরিয়ে ফেলা লোকগুলোর কথা আপনি শুনছেন। যেমন ধরুন, জেমস ও জেসন একে অন্যকে কল করে না; ফলে তারা এখন আপনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নিতে পারছে।
প্লেবয় :: আপনি আর জেমসও তো দুজন দুজনের সঙ্গে কথাও বলেন না!
উলরিক :: কিছু দিন ধরে ওর সঙ্গে কথা বলি না আমি, এ কথা সত্য।
হেটফিল্ড :: সে তো আমাকে কল করে না। আমি নিশ্চিত, সে বলবে– আমি তাকে কল করি না।
উলরিক :: এটি আসলে রকস্টারের একগুঁয়েমি। যেমন, ‘সে আমাকে কল করে না, আমিও তাকে কল করব না। চুদি তারে!’
হেটফিল্ড :: আমাদের দুজনেরই একটু দূরত্ব দরকার; আমি আর ওই ফালতু ছেলেটা ২০ বছর ধরে একসঙ্গে রয়েছি। এটা একটা চূড়ান্ত রকমের প্রেম-বিদ্বেষ ব্যাপার, বুঝলেন?
উলরিক :: আমাদের মধ্যে এমন ঘটনা এর আগেও শতবার ঘটেছে। রোডে থাকার সময় কখনো কখনো টানা এক সপ্তাহও আমরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলিনি। আমি আর জেমস হেটফিল্ড হলাম এই গ্রহের সবচেয়ে বিপরীত দুই মানুষ।
প্লেবয় :: আপনার স্ত্রী স্কাইলার তো ম্যাট ডেমনের সঙ্গে ডেট করতেন; এমনকি তাকে ঘিরেই গুড উইল হান্টিং সিনেমার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রটি গড়ে তুলেছিলেন ম্যাট। বছর কয়েক আগে আপনার প্রসঙ্গে ম্যাট বলেছিলেন, আপনি নাকি ‘একজন ফাকিং রকস্টার– যে কি না ৮০ মিলিয়ন ডলার ও নিজস্ব জেট প্লেনের মালিক; বাজে রকস্টারও।’
উলরিক :: এ কথা তিনি আমাদের দেখা হওয়ার আগে বলেছেন। পরে এজন্য শতবার ক্ষমা চেয়েছেন। তার সঙ্গে প্রথম পাঁচবার দেখা হওয়ার সময় ১০ মিনিট করে টানা ক্ষমা চেয়েই ব্যয় করেছেন। তিনি আসলেই একজন সুইটহার্ট।
প্লেবয় :: আপনি একজন আর্ট কালেক্টর, যা কি না একজন মেটাল ড্রামারের পক্ষে একটি অস্বাভাবিক শখই। আপনি কোন আর্টস্কুলের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেন?
উলরিক :: অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম, কোবরা মুভমেন্ট, আর্ট ব্রুট। আমার কাছে প্রচুর (জ্যঁ মিশেল) বাস্কুইয়া, প্রচুর (জ্যঁ) বুবুফে, প্রচুর (উইলেম) দু কুনিংয়ের আর্টওয়ার্ক রয়েছে। এই গ্রহে আসগার জর্নের সর্বশ্রেষ্ঠ কালেকশনটি আমার কাছেই রয়েছে। দুনিয়াজুড়ে বাস্কুয়াইয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে গণ্য হওয়া দুটি আর্টওয়ার্কের একটি রয়েছে আমার কাছে; এটা পাওয়ার জন্য দেড় বছর লেগে ছিলাম। কিড রকের সঙ্গে ব্যাকস্টেজে আড্ডাবাজি বেশ দারুণ; সেই তুলনায়, আমার (সংগ্রহের) দুবুফের (ছবির) দিকে তাকিয়ে থেকে এক বসায় টানা এক ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়াও এর চেয়ে কম কিছু নয়। এ এক দারুণ জিন ও টনিক।
প্লেবয় :: গানস এন’ রোজেস-এর সঙ্গে করা ১৯৯২ সালের গ্রীষ্মকালীন ট্যুরের কথা কিছু বলুন, যখন মনট্রিলে একটি শো চলাকালে আতশবাজির বিস্ফোরণ থেকে আপনার শরীরে আগুন ধরে গিয়েছিল। কতটা বাজেভাবে পুড়ে গিয়েছিলেন আপনি?
হেটফিল্ড :: হাড় পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিল। আমার হাত দেখতে হয়ে গিয়েছিল হামবার্গারের মতো। এর ওপর আপনি যতই পানি ঢালুন না কেন, যন্ত্রণাটা মুহূর্তেই ফিরে আসবে। ফিজিক্যাল থেরাপি ছিল সবচেয়ে যন্ত্রণার: তারা একটা টাং ডিপ্রেসার দিয়ে চামড়াটা ছেঁচে পরিষ্কার করত। পাশবিক ব্যাপার। ওষুধ খেতাম, তবু কুত্তামারা টাইপের যন্ত্রণা হতো আমার।
প্লেবয় :: ব্যথার কথা যখন ওঠলই, আপনার কখনো মাথাব্যথা করেছে?
হেটফিল্ড :: মারাত্মক ব্যথা করে কি না? হ্যাঁ, করে। এটা আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন।
প্লেবয় :: অন্য বছরগুলোর তুলনায় মেটালিকা গত বছর ট্যুর করেছে তুলনামূলক কম।
নিউস্টেড :: আমরা সম্ভবত ৩০-৪০টা শো করেছি; এ পর্যন্ত সম্ভবত এটাই সবচেয়ে কম। মেটালিকা সাধারণত বছরে ১৫০-২৫০ শো করে।
হ্যামেট :: বছরজুড়ে ট্যুর না করার ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই।
উলরিক :: ১০ বছর আগে আমাদের চেষ্টা ছিল যত বেশি গিগে পারফর্ম এবং যত বেশি অবাধ্য রকমের মজা-মাস্তি করতে পারি। এখন, নর্থ ড্যাকোটায় ২০০ শোতে পারফর্ম করাটা আগের মতো উদ্দীপনা দেয় না। মঞ্চে থাকাটা কখনো কখনো দারুণ ব্যাপার; আবার কখনো কখনো শোগুলো একেবারেই মাঝারিমানের হয়ে যায়, সেখানে আপনার কাজ থাকে স্রেফ স্রোতের ভেতর গা ভাসিয়ে দেওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শো কমিয়ে দেওয়া আমাদের জন্য মঙ্গল।
প্লেবয় :: এ রকম শারীরিক পরিশ্রমের মিউজিক পরিবেশনা করে ব্যান্ডটির পক্ষে কতদিন টিকে থাকা সম্ভব?
নিউস্টেড :: এটা সীমিত। লোকে আমাকে কখনোই দুর্বল দেখেনি; কখনোই দেখেনি মঞ্চে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে। পারফর্ম করতে পারব না– এমন দিন এলে আমি নিজে থেকেই সরে যাব।
হেটফিল্ড :: গ্রে মালেট মাছকে দেখলে মনে হয়, ঠিকঠাকই আছে।
প্লেবয় :: মেটালিকার গান লেখার কোনো সহজ কৌশল রয়েছে?
নিউস্টেড :: মেটালিকার ৯০ ভাগ গানই ই-মাইনরে করা; কেননা, জেমসের ভোকাল রেঞ্জ সীমিত, যদিও সে লিপস ও বাউন্ডসের মাধ্যমে নিজের বিকাশ ঘটিয়েছে।
প্লেবয় :: মেটালিকার পক্ষে র্যাপ-মেটাল পথে পা বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা আছে?
নিউস্টেড :: না; মেটালিকায় কোনো র্যাপ নেই।
উলরিক :: জেমস হেটফিল্ডের পক্ষে কোনো র্যাপ ডিরেকশনে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্ভবত শূন্য ও মাইনাস-একের মধ্যে।
প্লেবয় :: মেটালিকার একজন ফ্যান হিসেবে জেসন, আপনার দৃষ্টিতে নাথিং এলস ম্যাটারস-এর পর থেকে জেমসের চলমান বিবর্তন নিশ্চয়ই ইন্টারেস্টিং?
নিউস্টেড :: আগে যেখানে ছিল আঁধার, প্রেক্ষাপটে জেমসের সন্তানরা ঢোকার পর থেকে সেখানে এখন প্রচুর আলো। কিছু ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে অন্ধকার তো সবসময়ই থাকবে; তবে বিরাট এক উজ্জ্বল স্পটও রয়েছে এখন।

হ্যামেট :: ফুল আর হাসিখুশি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের গান আমরা গাইতে পারি না, বুঝলেন?
প্লেবয় :: তাহলে জেমস, আগামীর গানগুলো আপনার জন্য আনন্দের হবে?
হেটফিল্ড :: হ্যাঁ, আমি আমার ঘর ও পরিবার আর কুকুরকে ঘিরে লিখতে শুরু করব। দেখুন, লেখার পক্ষে কিছু হুলুস্থুল ব্যাপার সবসময়ই থাকে, আর এখন তো ব্যান্ডের ভেতর যথেষ্ট ভালো কিছু জ্বালানি রয়েছে।
প্লেবয় :: পরবর্তী অ্যালবামে আমরা কি ওই গানটির প্রত্যাশা করতে পারি…?
হেটফিল্ড :: …‘সাইড প্রজেক্ট’… হা-হা-হা…! সবসময়ই কিছু না কিছু আপনার মেজাজ খারাপ করে দেবে। কিছু জিনিস চাইবেন পাল্টে নিতে। কিছু জিনিস আপনাকে দ্বিধায় ফেলে দেবে। এ ক্ষেত্রে আমার পক্ষে করার আছে একটাই: একদিন স্যান ফ্র্যান্সিসোতে গিয়ে এক সপ্তাহের জন্য ‘খিচ’ খেয়ে থাকা।
প্লেবয় :: আপনার সুখের সংসার, দুই সন্তানের বাবা আপনি, নিচ্ছেন থেরাপি। এমনকি একটি প্রেমের গানও লিখেছেন। তবু কি নিজের ভেতর অন্ধকার চিহ্ন খুঁজে পান?
হেটফিল্ড :: আমি জানি সেটা রয়েছে এবং কী করে সেটা জায়গা করে নিয়েছে। ওই চিহ্নের কাছে যেতে এবং ওকে ফেলে আসতেও জানি। এ এমনই এক কালো চিহ্ন, যেটাকে ধুয়ে ফেলা সম্ভব না।
উৎস: প্লেবয়। এপ্রিল ২০০১ সংখ্যা