সাক্ষাৎকার: জেরি হপকিন্স
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
অনুবাদকের নোট
জিম মরিসন। রক মিউজিকের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা পারফর্মার! ‘দ্য ডোরস’ ব্যান্ডের লিড ভোকাল। মাত্র ২৭ বছর বয়সে অকালপ্রয়াত এই মাস্টার রকস্টারকে নিয়ে মিথের শেষ নেই। নেই তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে চর্চারও শেষ। রক সিনারিওতে তিনি চিরজাগরুক সত্তা…

জেরি হপকিন্স :: পারফরমার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কীভাবে?
জিম মরিসন :: আমার কৈশোরের সঙ্গে, বেড়ে ওঠার দিনগুলোর সঙ্গে রক অ্যান্ড রোলের জন্ম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যখনই এ (ধরনের) গান প্রথম শুনেছি, আমার ভেতর এমনতর কিছু করার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা তখন থেকেই ছিল বলে মনে হয়। যদিও সে সময়ে নিজে এমনকিছু করার মতো যৌক্তিক কোনো কল্পনায় নিজেকে কখনোই ডুবাইনি, তবু সেটিই ছিল সত্যিকারের সূচনাকাল। আমার ধারণা, আমি সবসময়ই অবচেতনেই সেই অনুরাগ (নিজের ভেতর) জমা করেছি আর (গানগুলো) শুনে গেছি। ফলে শেষ পর্যন্ত এটা [পারফর্ম] যখন ঘটল, আমার চৈতন্য ততদিনে পুরো বিষয়টির জন্য প্রস্তত।
…
যে পাঁচ-ছয়টি গান আমি
লিখেছি, সেগুলো
নিজের
মাথায়
চলতে
থাকা এক
দুর্দান্ত রক কনসার্ট
থেকে নেওয়া কিছু ফুটনোটমাত্র
…
এ নিয়ে ভাবিনি। স্রেফ ঘটে গেছে। (আগে) কোনোদিনই গান গাইনি। এমনকি এটা আত্মস্থও করিনি। ভেবেছিলাম, ভবিষ্যতে লেখক কিংবা সমাজবিজ্ঞানী হবো; হয়তো লিখব নাটক। কনসার্টে বলতে গেলে যাই-ই-নি; বড়জোর দুয়েকবার। টিভিতে অল্পকিছু শো দেখেছি, তবে সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে আদৌ জড়াইনি। অবশ্য আমার মাথার মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কনসার্টের অবস্থা শুনতে পেতাম: একটা ব্যান্ড, গান গাওয়া ও অডিয়েন্স-সহ– বিপুল অডিয়েন্স…। যে পাঁচ-ছয়টি গান আমি লিখেছি, সেগুলো নিজের মাথায় চলতে থাকা এক দুর্দান্ত রক কনসার্ট থেকে নেওয়া কিছু ফুটনোটমাত্র। গানগুলো একবার লিখেই ফেলার পর না গেয়ে আর উপায় ছিল না আমার।
জেরি :: সেটা কোন সময়ের ঘটনা?
জিম :: বছর তিনেক আগের। তখনো আমি কোনো গ্রুপে বা কোনোকিছুতে ছিলাম না। মাত্রই কলেজ ছেড়েছি। গিয়েছিলাম সৈকতে। খুব বেশি কিছু করছিলাম না। প্রথমবারের মতো মুক্ত হয়েছিলাম। (এর আগে) টানা ১৫ বছর আমাকে স্কুলে যেতে হয়েছিল।
সে ছিল চমৎকার উষ্ণ এক গ্রীষ্মকাল; আর আমি স্রেফ গানগুলো শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার ধারণা, যে নোটবুকে গানগুলো লিখে রেখেছিলাম, সেই নোটবুক আমার কাছে এখনো আছে। এক ধরনের পৌরাণিক কনসার্ট শুনতে পেয়েছিলাম আমি…। কখনো কখনো বাস্তবতায় কিংবা কোনো রেকর্ডে সেটিকে পুনর্সৃষ্টির চালিয়েছিলাম চেষ্টা।
সেদিন সেই সৈকতে (নিজের মাথার ভেতর) যে গানগুলো শুনেছিলাম, সেগুলো পুনর্সৃষ্টির ইচ্ছে জেগেছিল আমার।
জেরি :: কখনো কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন?
জিম :: শিশুকালে কিছুদিন পিয়ানো বাজানোর চেষ্টা করেছিলাম, তবে চালিয়ে যাওয়ার মতো শৃঙ্খলা আমার ছিল না।
জেরি :: কতদিন বাজিয়েছেন?
জিম :: মাত্র কয়েক মাস। আমার ধারণা, তখন বোধহয় তৃতীয় শ্রেণির বই পড়ি।
জেরি :: এখন কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর বাসনা রাখেন?
…
গিটার
বাজাতে
পারলে ভালোই
লাগত; কিন্তু এর প্রতি
আমার কোনো
অনুভূতি কাজ
করে
না
…
জিম :: মোটেও না। আমি মারাকাস বাজাই। পিয়ানোতে অল্প কয়েকটা গান তুলতে পারি। এ স্রেফ আমার নিজের উদ্ভাবন; তাই এগুলো সত্যিকারের কোনো মিউজিক নয়, বরং স্রেফ নয়েজ। একটা গান অবশ্য বাজাতে পারি। তবে সেটির মাত্র দুটি পরিবর্তন ঘটিয়ে। দুটি কর্ড; বাদবাকি যথেষ্ট ঠিকঠাক বাজাই। গিটার বাজাতে পারলে ভালোই লাগত; কিন্তু এর প্রতি আমার কোনো অনুভূতি কাজ করে না।
জেরি :: কবিতা লিখতে শুরু করলেন কখন?
জিম :: ওহ, দ্য পনি এক্সপ্রেস কবিতাটি লিখেছি সম্ভবত পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়। যতদূর মনে পড়ে, এটিই (আমার লেখা) প্রথম কবিতা। প্রচলিত ব্যালেডধর্মী কবিতার মতোই। অবশ্য কখনোই কবিতাটিতে ঠিকঠাক জমিয়ে তুলতে পারিনি। আমি সবসময়ই লিখতে চাইতাম; কিন্তু যতক্ষণ না কলমটি আপনাআপনি হাতে উঠে আসে আর আমার ওপর ভর না দিয়ে (নিজে নিজে) কিছু লিখতে শুরু করে, ততক্ষণ পর্যন্ত লেখাটাকে জাতের কিছু মনে হয় না। এ যেন অটোমেটিক রাইটিং। কিন্তু এমনটা আসলে কখনোই ঘটেনি। তবে গুটিকয়েক কবিতা আমি লিখেছি অবশ্য।
যেমন ধরুন, হর্স ল্যাটিচ্যুডস কবিতাটি লিখেছিলাম হাই স্কুলে পড়ার কালে। হাই স্কুল ও কলেজে পড়ার দিনগুলোতে নিজের সঙ্গে প্রচুর নোটবুক রাখতাম। তারপর যখন একটা ফালতু কারণে– কিংবা হয়তো বিচক্ষণের মতোই– স্কুল ছেড়ে দিলাম, তখন সবগুলো নোটবুক ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আমার সম্পত্তি বলতে এখন সেই দুই-তিনটি হারানো নোটবুকের চেয়ে অন্য কিছুকে আমি ভাবতে পারি না।
ভাবছিলাম, হিপটোনাইজড হয়ে কিংবা সোডিয়াম পেন্টোথাল সেবন করে স্মৃতি উদ্ধারের চেষ্টা চালাব; কেননা, ওইসব নোটবুকে জমা ছিল রাতের পর রাত জেগে লিখে যাওয়া লেখাগুলো। তবে ওগুলোকে ওভাবে যদি ছুড়ে না ফেলতাম, তাহলে আমার পক্ষে কখনোই মৌলিক কোনোকিছু লেখা সম্ভব হতো না হয়তো। কেননা, যা কিছু পড়েছি কিংবা শুনেছি, মূলত সেগুলোরই সঞ্চয় ছিল ওইসব লেখা। ঠিক যেন বই থেকে টুকে রাখা উদ্ধৃতির মতো। আমার ধারণা, ওই লেখাগুলোকে উৎরে যেতে না পারলে আমার পক্ষে কোনোদিনই মুক্ত হওয়া সম্ভব হতো না।
জেরি :: এ প্রশ্ন আপনাকে এর আগে অসংখ্যবার করা হয়েছে: নিজেকে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখেন কি না? এ প্রসঙ্গে আপনারই একটি উদ্ধৃতি আপনার দিকে ছুড়ে দিতে চাই: দ্য ডোরসকে আপনি অভিহীত করেছিলেন ‘ইরোটিক পলিটিশিয়ানস’ হিসেবে।
জিম :: এর কারণ স্রেফ, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে জাতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোর ব্যাপারে আমি সজাগ ছিলাম। বাড়ির পাশে সবসময়ই পত্রিকা পাওয়া যেত; আমি সেগুলো পড়তে শুরু করি। ফলে তাদের স্টাইল, বাস্তবতার প্রতি তাদের মনোভাবকে স্রেফ আত্মীকরণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সতর্ক হয়ে উঠি।
মিউজিকের ময়দানে যখন পা রাখলাম, তখন সেই দুনিয়ায় এক ধরনের নিরাপদ জায়গা খুঁজে নেওয়ার প্রতি আগ্রহ ছিল আমার। ফলে চাবিটা ঘুরিয়ে দিলাম, আর স্রেফ সহজাতভাবেই আমার জানা ছিল– কী করে সেটা করতে হবে। যে জিনিসের ওপর ভিত্তি করে কোনো আর্টিক্যাল তাৎক্ষণিক সাড়া ফেলতে পারে– সেই ক্যাপশন হিসেবে ব্যবহারের জন্য পত্রিকাগুলো ক্যাচি ফ্রেজ ও উদ্ধৃতি খোঁজে।
(‘ইরোটিক পলিটিশিয়ানস’–) এ ধরনের টার্মের একটা তাৎপর্য আছে ঠিকই, তবে এর ব্যাখ্যা দেওয়া অসম্ভব। কথাটির অর্থ আমার কাছে কী– সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা যদি করতাম, তাহলে একটি ক্যাচওয়ার্ড হিসেবে এটি এর সকল শক্তি খুইয়ে ফেলত হয়তো।
জেরি :: ইচ্ছেকৃতভাবেই মিডিয়া ম্যানিপুলেশন, তাই না? এ প্রসঙ্গে দুটি প্রশ্ন করতে চাই। (ব্যান্ডের) অন্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহারের জন্য এই ফ্রেজ আপনি বেছে নিলেন কেন? তাছাড়া, আপনি কি মনে করেন মিডিয়াকে ম্যানিপুলেট করা খুবই সহজ?
জিম :: সহজ কি না, জানি না; কেননা, এটি আপনাকে উল্টে দিতে পারে। তবে ওই কথা আমি স্রেফ একজন রিপোর্টারকে বলেছিলাম। আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম শুধু। তারপর দেখি প্রচুর লোকজন নিয়ে নিলো ফ্রেজটা, আর একে যথেষ্ট ভারি করে তুলল। অথচ এটা আসলে স্রেফ… ওই লোক এটা ব্যবহার করবে, আমি জানতাম; আরও জানতাম, এর সঙ্গে কোন ছবি ছাপাবে। আমি জানতাম, একটা আর্টিক্যাল থেকে লোকে সর্বসাকুল্যে খুব সামান্য কয়েকটি ফ্রেজই মনে রাখে। তাই মনে রাখানোর মতো একটা ফ্রেজ বলতে চেয়েছিলাম।
…
লেখালেখি ও লেখকের
মনোজগত আমি
বুঝি
…
আমি মনে করি সংবাদপত্রের চেয়ে টেলিভিশন ও ফিল্মকে ম্যানিপুলেট করা বেশি কঠিন। সংবাদপত্র আমার কাছে একদিক থেকে সহজই। কেননা, লেখালেখির প্রতি আমার কৌতুহল রয়েছে, এবং লেখালেখি ও লেখকের মনোজগত আমি বুঝি। আমরা তো একই মাধ্যমে কাজ করি– মুদ্রিত অক্ষরের মাধ্যম। ফলে কাজটা যথেষ্ট সহজ ছিল।
তবে টেলিভিশন ও ফিল্ম যথেষ্ট কঠিন মাধ্যম; আমি এখনো শিখছি। প্রতিবার টিভিতে গেলে আগেরবারের চেয়ে আরেকটু বেশি স্বস্তিবোধ করি, আরেকটু বেশি উন্মুক্তভাবে কমিউনিকেট করতে, এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এ এক ইন্টারেস্টিং প্রক্রিয়া।
জেরি :: এ কথা কি ফিল্মের প্রতি আপনার মুগ্ধতারই কোনো ব্যাখ্যা?
জিম :: ফিল্মের প্রতি আমার আগ্রহী হওয়ার কারণ, আমাদের স্বপ্নের জীবন ও দুনিয়ার প্রাত্যহিক উপলব্ধি– উভয় ক্ষেত্রেই চৈতন্যের প্রকৃত প্রবাহ ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তায় এটিকে আমার কাছে শিল্পমাধ্যমের সবচেয়ে নিকটবর্তী সন্নিধি বলে মনে হয়।
জেরি :: আপনি প্রতিনিয়ত ফিল্মের সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে যাচ্ছেন…

জিম :: হ্যাঁ; তবে এখন পর্যন্ত আমরা একটা ফিল্মই শেষ করতে পেরেছি– ফিস্ট অব ফ্রেন্ডস। এটি সদ্য ফুরিয়ে যাওয়া সেই মরমি ও সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর সমাপ্তিকালে বানানো।
জেরি :: ফিস্ট অব ফ্রেন্ডস-এ আপনাকে সত্যিকার অর্থে কতটুকু পাওয়া যায়? আমরা যতটুকু দেখি, কারিগরি দিকগুলো ফিল্মে জুড়ে দেওয়া… এর কতটুকু আপনার?
জিম :: কনসেপশনের জায়গা থেকে, ‘হলিউড বোল’-এ [গ্রীষ্ম ১৯৬৮] চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত তিন-চার মাসে প্রচুর কনসার্টে আমাদের অনুসরণ করেছিল একটি একেবারেই ছোট্ট ক্রু। এরপর গ্রুপটি [দ্য ডোরস] ইউরোপে এক শর্ট ট্যুরে যায়। আমরা যখন সেখানে, এডিটর ও ফটোগ্রাফার ফ্রাঙ্ক লিস্কিয়ান্দ্রো ও পল ফেরারা এটিকে জুড়তে থাকেন। আমরা ফিরে এসে রাফ কাট দেখি; তারপর লোকেদের দেখাই। কেউই তেমন পছন্দ করেনি। অনেকে তো প্রজেক্টটা বাতিল করে দিতেও প্রস্তুত ছিল। আমার নিজের অভিমতও ছিল সেরকমই।
তবে ফ্রাঙ্ক ও পল আরেকটা সুযোগ চাইলেন। সেই সুযোগ তাদের আমরা দিলাম। এডিটিং ঠিকঠাক করার কাজে তাদের সঙ্গে আমিও খেটেছি। কিছু ম্যাটেরিয়াল জুড়ে দেওয়ার, কিছু ম্যাটেরিয়াল ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে বেশ ভালোকিছু পরামর্শ দিয়েছি। এভাবে আমরা একে ইন্টারেস্টিং ফিল্ম হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছি বলে আমার ধারণা।
…
আমি
আসলে
প্রবল ফোর্সের
একটি পাপেটমাত্র,
যাকে শুধুই অস্পষ্টভাবে
বোঝা সম্ভব
…
আমি মনে করি এটি একটি টাইমলেস ফিল্ম। এটি হয়েছে বলে আমি আনন্দিত। সময়ে সময়ে, বছরের পর বছর ধরে আমি এই ফিল্ম দেখতে চাই; এর মধ্য দিয়ে ফিরে দেখতে চাই– আমরা আসলে করছিলাম কী। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, ফিল্মটি প্রথমবার দেখার সময় আমি বেশ থমকে গিয়েছিলাম। কেননা ফিল্মের মধ্যে অনস্টেজে থাকা ও অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে ওঠার কারণে আমি শুধু নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেছিলাম তখন। পরে, বেশ কয়েকবার দেখার পর ফিল্মটি আসলে কেমন– সে ব্যাপারে নিজের ওপর আমার খানিকটা নিয়ন্ত্রণ এলো।… আর, হুট করেই বুঝতে পারলাম, একদিক থেকে আমি আসলে প্রবল ফোর্সের একটি পাপেটমাত্র, যাকে শুধুই অস্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব। ব্যাপারটা বেশ শকিং ছিল।
জেরি :: ফিল্মটির একটি অংশের কথা ভাবছি আমি: সেটি এক পারফরম্যান্স সিকুয়েন্স, যেখানে আপনি সটান শুয়ে পড়েও গান গাইছিলেন। নিজের পারফরম্যান্সের মধ্যে আপনি কীভাবে থিয়েট্রিক্যাল হয়ে ওঠেন, এটি তারই প্রতিনিধিত্ব করে। এই থিয়েট্রিক্যালিটির বিকাশ ঘটালেন কীভাবে? এটি কি কোনো সচেতন অ্যাক্ট?

জিম :: আমার ধারণা, কোনো ক্লাবে নাটুকেপনার জায়গা খানিকটা কম। কেননা, রুমটি ভীষণ ছোট এবং এটি খানিকটা উদ্ভট দেখাবে। বৃহৎ কোনো কনসার্টের জায়গায়, আমি মনে করি এটা [নাটুকেপনা] জরুরি; কেননা, তাহলে সেটি স্রেফ কোনো মিউজিক্যাল অনুষ্ঠানের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠে। খানিকটা দর্শনীয় কিছু হয়ে ওঠে। প্রতিবারই ভিন্ন রকম হয়ে ওঠে। কোনো পারফরম্যান্স অন্য কোনো পারফরম্যান্সের মতো– আমার তা মনে হয় না।
এ প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিতে পারব না আমি। কেননা, (নিজে পারফরম্যান্সের সময়) কী ঘটছে– সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সজাগ নই। এটাকে খুব বেশি উদ্দেশ্যমূলক করে তুলতেও আমার ভালো লাগে না। আমি বরং প্রতিটি ঘটনাই পছন্দ করি। হয়তো একটু সচেতনভাবেই করি, তবে প্রতিটি সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যে স্পন্দন অনুভব করি, এ তারই এক ধরনের অনুসরণ। থিয়েট্রিক ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের থাকে না। কোন সেট বাজাতে যাচ্ছি– সেটি (আগে থেকে) আমাদের একদম জানা থাকে না বললেই চলে।
জেরি :: প্রসঙ্গটি তুলতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে, কেননা, এ নিয়ে প্রচুর বাজে ব্যাপার ঘটে গেছে। তবে ব্যাপারটির সত্যতা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া আমি জানতে চাই: দ্য এন্ড-এর ঈদিপাস সেকশনের কথা বলছি। আপনার কাছে এ গানের তাৎপর্য কী?
জিম :: আসলে, ঈদিপাস তো একটি গ্রিক মিথ। সফোক্লিস এ নিয়ে লিখেছিলেন। এর সামনে কে ছিলেন– জানি না। অজ্ঞাতবশত নিজের বাবাকে মেরে মাকে বিয়ে করা এক লোকের কাহিনি এটি। হ্যাঁ, এখানে [আমাদের গানে] (সেই মিথের সঙ্গে) এক ধরনের মিল নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। তবে সত্য হলো, যতবারই গানটি শুনি, ততবারই এর অর্থ আমার কাছে পাল্টে যায়। (এই গানে) আমি কী বলতে চাচ্ছিলাম– সত্যি জানা নেই আমার। একটি সিম্পল ‘বিদায়’ ধরনের গানের ভাবনা থেকে এর শুরু।
জেরি :: কাকে কিংবা কোন জিনিসকে বিদায়?
জিম :: হয়তো স্রেফ কোনো মেয়েকে; তবে এটি শৈশবকে এক ধরনের বিদায় জানানোও হতে পারে। আমি আসলেই জানি না। আমার ধারণা, গানটি এর ইমেজারিতে এতটাই জটিল ও সর্বজনীন, আপনি একে যেভাবে চান, অনেকটা সেরূপেই ধরা দেবে। এটি কোন সংকট ঘিরে লেখা কি না, কিংবা এ রকম কোনো প্রসঙ্গের ব্যাপারে আমার মাথাব্যথা নেই। তবে একটা জিনিস আমাকে জ্বালাতন করেছিল…।
ওয়েস্টউডে এক রাতে আমি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। কোনো এক বইয়ের দোকান বা এমন কোনো দোকানে ঢুকেছিলাম, যেখানে মৃৎপাত্র, ক্যালেন্ডার, গ্যাজেট ইত্যাদি বিক্রি হয়। সেখানে একজন ভীষণ আকর্ষণীয়া ও বুদ্ধিমতি মেয়ের মনে হলো, সে আমাকে চিনতে পেরেছে। বুদ্ধিমতি বলছি সংবেদনবোধ ও অকপটতার জন্য। আমার দিকে এগিয়ে এসে ‘হ্যালো’ বলল সে। তারপর ঠিক ওই গানটির কথাই জিজ্ঞেস করল আমাকে। নার্সকে সঙ্গে নিয়ে সে স্রেফ একটু হাঁটতে বের হয়েছিল। উইসিএলএ নিউরোসাইকিয়াট্রিক ইনস্টিউট থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেকের জন্য বের হয়েছিল সে। সেখানেই থাকে; স্রেফ একটু হাঁটতে বের হয়েছিল।
বোঝাই যাচ্ছে, সে ইউএলসিএ’র শিক্ষার্থী ছিল; মারাত্মক কোনো মাদক বা ওরকম কিছুতে তার জীবন এলোমেলো। সেটা থেকে রক্ষা পেতে হয় সে নিজেই নিজেকে ওখানে ভর্তি করিয়েছে, অথবা কেউ তাকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেছে। যাহোক, মেয়েটি বলল, গানটি নাকি তার ওয়ার্ডে থাকা বহু শিশুরই পছন্দের। আমি প্রথমে ভাবলাম: হায়রে…। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাকে জানালাম, প্রত্যেকেই যার যার নিজের পরিস্থিতিতে এ গানের সম্পৃক্ততা অনুভব করছে– এমনটা ভাবা এক ধরনের গোলকধাঁধার মতো হলেও এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
লোকে গানকে এত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়– ধারণা ছিল না আমার। এই পরিণতিকে আমার বিবেচনা করা উচিত হবে কি না– ভেবে অবাক হলাম। এটা এক ধরনের হাস্যকর ব্যাপার; কেননা, এ কাজ [গান] তো আমি নিজে করেছি। (গান সৃষ্টির সময় সেটির) পরিণতির কথা ভাববেন না আপনি; ভাবতে পারবেন না।
জেরি :: আপনার ফিল্মের আলাপে ফেরা যাক। কোনো পারফরমারের দিকে অডিয়েন্সের ছুটে যাওয়ার ভীষণ রকমের অবিশ্বাস্য কিছু ফুটেজ সেখানে রয়েছে– যেমনটা আমি আর কখনো দেখিনি। এ রকম পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী?
জিম :: এ খুবই হাসির ব্যাপার… হাহাহা…! এটি বাস্তবে যতটা না, (ফিল্মে) দেখতে তারচেয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর লেগেছে আসলে। ফিল্ম তো সবকিছু সংকুচিত করে নেয়। ছোট্ট জায়গার মধ্যে প্রচুর এনার্জি জড়ো করে…। যখনই তাতে বাস্তবতার কোনো ফর্ম আপনি জুড়ে দেবেন, এটি তত বেশি নিগূঢ় দেখাবে। সত্য হলো, বহুবারই একে আমার কাছে ভীষণ রোমাঞ্চকর, ভীষণ মজার লেগেছে। এটি উপভোগ না করলে আমি করতে পারতাম না।
জেরি :: এর আগে বলেছিলেন, লোকজনকে নিজেদের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দেখলে আপনার ভালোলাগে; তবে আপনি ইচ্ছেকৃতভাবে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেন না…
জিম :: ব্যাপারটি আসলে কখনোই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এটা আসলেই যথেষ্ট আনন্দের। আমরা মজা করি, বাচ্চারা মজা করে, পুলিশ মজা করে। এ এক ধরনের উদ্ভট ত্রিভূজ। আমরা স্রেফ ভালো মিউজিক করার কথাই ভাবি। কখনো কখনো আমি নিজেকে আরেকটু ছড়িয়ে দেওয়ার এবং লোকেদের আরেকটু খাটিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাব; তবে সাধারণত আমরা এখানে [কনসার্ট] আসি ভালো মিউজিক তৈরির প্রচেষ্টা চালাতে। এই তো!
প্রতিটি সময়ই ব্যাপারটি ভিন্ন। আপনার জন্য অপেক্ষারত কোনো অডিটোরিয়ামে সবসময়ই জ্বরের মাত্রা থাকে ভিন্ন। ফলে আপনি মঞ্চে উঠেন, আর এনার্জির এই সম্ভবপরতার হুড়োহুড়ির দেখা পান। ব্যাপারটি কেমন দাঁড়াবে– আগে থেকে কখনোই বুঝতে পারবেন না।
জেরি :: নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া, লোকেদের আরেকটু খাটানো– এসব বলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
জিম :: বরং বলা ভালো, বাস্তবতার সীমারেখাকে আমি পরখ করে দেখছিলাম। এর ফলে কী ঘটতে পারে– দেখার কৌতুহল ছিল। এ শুধুই কৌতুহল থেকে করা।
জেরি :: একটি উদ্ধৃতি আপনার নামে চালিয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধৃতিটি হলো: ‘বিদ্রোহ, হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা জাতীয় যেকোনো কিছুর প্রতিই আমি আগ্রহী…।’
জিম :: ‘…বিশেষ করে, যেসব কর্মকাণ্ডের কোনো অর্থ নেই বলে মনে হয়, সেগুলোর প্রতি।’
জেরি :: ঠিক। এটাই। এটি কি মিডিয়া ম্যানিপুলেশনের আরেক উদাহরণ? আপনি কি সংবাদপত্রের লোকদের খোরাক দিতেই এ কথা বলেছিলেন?
জিম :: হ্যাঁ। তবে কথাটি সত্যও। বিশৃঙ্খলা কাকে মুগ্ধ করে না? তারচেয়ে বড় কথা অবশ্য, কোনো অর্থ নেই– এমন কর্মকাণ্ডের প্রতি আমি আগ্রহী। এসব কথার মাধ্যমে আমি শুধুই কর্মকাণ্ডে স্বাধীনতার কথা বোঝাচ্ছি। বাজানো। যে কর্মকাণ্ডের মধ্যে স্বয়ং সেটি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো প্রতিধ্বনি নেই। কোনো প্রণোদনা নেই। ফ্রি… অ্যাকটিভিটি।
আমি মনে করি রিওর [ব্রাজিল] মার্দি গ্রাসের [কার্নিভ্যাল] মতো এখানেও [যুক্তরাষ্ট্রে] একটি জাতীয় কার্নিভ্যাল হওয়া উচিত। সেখানে সব ধরনের কাজের, সব ধরনের পেশার, সব ধরনের বৈষম্যের, সব ধরনের কর্তৃত্বের একটি সমাপ্তি টানার মতো এক সপ্তাহব্যাপি জাতীয় পর্যায়ের উল্লাস-উৎসব থাকা উচিত। সম্পূর্ণ স্বাধীনতার একটি সপ্তাহ। এটা শুরু করা উচিত।
(এতে করে) নিশ্চয়ই ক্ষমতা কাঠামোর সত্যিকারের কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে রাস্তার কোনো লোক– আমি ঠিক জানি না কীভাবে তাকে বাছাই করা হবে, হয়তো র্যানডম বেছে নেওয়া হবে– তার পক্ষে প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা সম্ভব। আরেকজন হয়তো ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন। অন্যরা হবেন সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, সুপ্রিম কোর্টের লোক, পুলিশ…। এর স্থায়ীত্ব স্রেফ এক সপ্তাহ; তারপর সব আবার আগের অবস্থায় চলে যাবে। আমি মনে করি, আমাদের এটা দরকার। হ্যাঁ, এ রকম কিছু একটা দরকার।
জেরি :: ব্যাপারটা হয়তো অপমানজনক, তবে আমার মনে হচ্ছে, আমিও রয়েছি এর মধ্যে…
…
এক
সপ্তাহের
জন্য সত্যিকার রূপে
হাজির হওয়া দরকার মানুষের
…
জিম :: …খানিকটা। তবে জানি না আমি। এক সপ্তাহের জন্য সত্যিকার রূপে হাজির হওয়া দরকার মানুষের। এটা হয়তো বছরের বাকি দিনগুলোতে কাজে দেবে। এর এক ধরনের রিচুয়াল ফর্ম থাকা বোধহয় দরকার। আমার মনে হয়, এ রকম কিছু আসলেই খুব দরকার।
জেরি :: আপনি দু’বার বলেছেন, সংবাদমাধ্যমকে সফলভাবে ম্যানিপুলেট করতে পেরেছেন বলে মনে করেন। এই সাক্ষাৎকারের কতটুকু ম্যানিপুলেট?
জিম :: আপনি যা বলেছেন, সেই কথা ছাপা হলে এর কী অর্থ দাঁড়াবে– সেটা কখনোই আন্দাজ করতে পারবেন না। ফলে সেটা নিজের মনের কোনে রেখে দিতে হবে। আমি এটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।
জেরি :: অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে আছে আপনার?
জিম :: অ্যালকোহল নিয়ে আলোচনাসভা করলে কেমন হয়? স্রেফ অল্প কিছু সংলাপ। দীর্ঘ কোনো বাচালতা নেই। মাদকের বিপরীতে অ্যালকোহলকে দাঁড় করিয়ে?

জেরি :: আচ্ছা! মিথোলজির অংশ হিসেবে আপনি একটি ভারী জুসারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
জিম :: একেবারেই বেসিক স্তরে আমি পানাহার পছন্দ করি। তবে স্রেফ দুধ কিংবা পানি কিংবা কোকা-কোলা পান করতে দেখা সহ্য করতে পারি না। এ আমার সর্বনাশ করে দেয়। খাদ্যগ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে ওয়াইন কিংবা বিয়ার তো খেতেই হবে। [এরপর দীর্ঘক্ষণ ঝিম মেরে থাকেন জিম মরিসন।]
জেরি :: আপনি স্রেফ এটুকুই বলতে চান? হাহাহা…!
জিম :: মাতাল হলে আপনি আসলে একটা পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ লাভ করবেন। এটা আপনার চয়েস; প্রতিবার এক সিপ (মদ) গ্রহণ করবেন। আপনার এ রকম ছোট ছোট আরও প্রচুর পছন্দ রয়েছে। যেমন ধরুন, আমার ধারণা এটিই আত্মহত্যা ও ধীরজ আত্মসমর্পণের মধ্যে পার্থক্য।
জেরি হপকিন্স :: এ কথার মানে কী?
জিম মরিসন :: আমি জানি নারে ভাই! চলুন বরং পাশের রুমে গিয়ে একটু ড্রিংক করা যাক।
প্রথম প্রকাশ: রোলিং স্টোন; ম্যাগাজিন, যুক্তরাষ্ট্র। ২৬ জুলাই ১৯৬৯
গ্রন্থসূত্র: রোলিং স্টোন ইন্টারভিউস