বেহেমথের ‘দ্য স্যাটানিস্ট’ কেন একুশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ এক্সট্রিম মেটাল অ্যালবাম?

0
81
বেহেমথ

লিখেছেন: ডেয়াল প্যাটারসন
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

দ্য স্যাটানিস্ট
[The Satanist]
ব্যান্ড: বেহেমথ [পোল্যান্ড]
জনরা: ব্ল্যাকেন্ড ডেথ মেটাল; সিম্ফনিক ব্ল্যাক মেটাল
লেন্থ: ৪৪:১৭
ভাষা: ইংরেজি, পোলিশ, লাতিন
লেবেল: নিউক্লিয়ার ব্লাস্ট; মেটাল ব্লেড; মিস্টিক; জেভিসি কেনউড ভিক্টর; ইভিপি
রিলিজ: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪


বেহেমথ

২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ইভানগেলিয়ন অ্যালবামটি ইতোমধ্যেই বেহেমথ-এর ওপর লেপ্টে থাকা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ তকমা মুছে দিয়ে পোলিশ ব্ল্যাকেন্ড ডেথ মেটাল ব্যান্ডটির সদস্যদের একেকজন কাল্ট হিরো থেকে এই মহাবিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক্সট্রিম মেটাল ব্যান্ডগুলোর একটির সদস্য হিসেবে রূপান্তর ঘটিয়ে ফেলেছিল।

কিন্তু এরপরই খবর এলো, ব্যান্ডের ফ্রন্টম্যান নেরগাল [প্রকৃত নাম, আদাম দার্স্কি] লিউকেমিয়ায় ভুগছেন। মঞ্চেই বাইবেল ছিঁড়ে ফেলার মতো বিতর্কিত ঘটনা ঘটিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি নিজ দেশে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজনে পরিণত হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে কঠিন যুদ্ধে লড়াই করে পরবর্তী অ্যালবাম প্রকাশ করতে লেগে গেল পাঁচ বছর।

দ্য স্যাটানিস্ট। অফিসিয়াল ভিডিও

এই অপেক্ষার বেশ ভালো দাম পাওয়া গেছে: দ্য স্যাটানিস্ট অ্যালবামটিকে শুধুমাত্র ভক্ত ও সমালোচকেরাই প্রবল ক্ষুধার্তের মতো গোগ্রাসে গ্রহণ করেননি, বরং স্বয়ং বেহেমথ-এর জন্যও এটি একটি আইকনিক, আরও বেশি সংগঠিত প্রদর্শনী এবং সৎ ও ব্যক্তিগত সম্পদ হয়ে ধরা দিয়েছে। সম্ভবত এই অ্যালবামই এই ব্যান্ডকে দিয়েছে মৌলিকত্ব; আর তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।


‘আমার
লিউকেমিয়ায়
আক্রান্ত হওয়ার
প্রতি এই অ্যালবাম
ছিল একটি প্রতিক্রিয়া–
এমন কথা বলতে
চাই না; এটি
নিশ্চিতভাবেই ছিল আমার
সামগ্রিক জীবনের প্রতি
একটি প্রতিক্রিয়া’

‘আরোগ্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে ছিল এটি,’ বলেন নেরগাল। ‘আমার লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রতি এই অ্যালবাম ছিল একটি প্রতিক্রিয়া– এমন কথা বলতে চাই না; এটি নিশ্চিতভাবেই ছিল আমার সামগ্রিক জীবনের প্রতি একটি প্রতিক্রিয়া। তাছাড়া, একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন আমার নিশ্চিতভাবে ছিলই। এ কারণেই দ্য স্যাটানিস্ট বহু স্তরে ও বহু মাত্রায় অনুরণিত হয়েছে। যেখান থেকে এসেছি আমি, এটির শেকড় সেখানে অনেক বেশি প্রোথিত ছিল। এটি যেন একজন শিল্পীর, একজন মানুষের পুনর্জন্মের মতোই অনেকটা– গভীরে নিহিত এই আগুনের মুক্তি পাওয়ার প্রয়োজন ছিলই। এই অ্যালবামের ফর্মটিতে সেটিরই ঘটেছে উদ্ভাস।’

আদাম ‘নেরগাল’ দার্স্কি

(সুইডিশ ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ড) ওয়াটেইন, (সুইডিশ হেভি মেটাল ব্যান্ড) দ্য সলিচিউড ও (ডাচ অকাল্ট ব্যান্ড) দ্য ডেভিল’স ব্লাড-এর সঙ্গে ট্যুর শেষ করার পর রেকর্ডকৃত দ্য স্যাটানিস্ট-এ আগের অ্যালবামের রূপান্তরধর্মী এনার্জির পাশাপাশি স্পষ্টত অকাল্ট বা গূঢ় থিম জুড়ে গেছে– যেগুলো ইতিহাস থেকে অতটা নয়, বরং একজন ব্যক্তিমানুষের আলোকবার্তাকে তুলেছে ফুটিয়ে।

সেই মানুষের নিজ জীবনের ঘটনাগুলোর প্রতি স্রেফ একটি সাড়া দেওয়া নয়, বরং এটি এর পূর্বসুরির তুলনামূলক আরও বেশি সামরিকধর্মী সুনির্দিষ্ট ও হিসেবি মনোভাবের প্রতিও একটি প্রতিক্রিয়া; আর এটি এমন এক বৈপরীত্যকে চিহ্নিত করেছে, যা কি না এই অ্যালবামের পথ আরও প্রশস্ত, আরও বেশি বিশোধক আবেগাত্মক প্যালেটে করে দিয়েছে জায়গা।


‘থাকবে না কোনো
জোরজবরদস্তি,
থাকবে না
কোনো
চাপ;
বরং
আমাদের
সিস্টেমকে
ছাড়িয়ে যাওয়া
সবকিছুর সঙ্গে স্রেফ
ফুরফুরে মেজাজে উড়ে বেড়াবে’

‘বিশেষত ইভানগেলিয়ন-এর পর নতুন কিছু করার একটা তাড়না আমি অন্তরের অন্তস্তল থেকে আসলেই অনুভব করছিলাম,’ বলেন নেরগাল। ‘নিজেকে মুক্ত করার, ভক্তদের মুক্ত করার প্রয়োজন আমার ছিলই। তাই নিজেকে বললাম, এমন একটি অ্যালবাম করা যাক, যেটি যেকোনো দিক থেকেই আরও বেশি আবেগাত্মক, আরও বেশি বাস্তবধর্মী, আরও বেশি সুসংগঠিক, আরও বেশি প্রাকৃতিক হয়ে উঠেবে। যেটিতে থাকবে না কোনো জোরজবরদস্তি, থাকবে না কোনো চাপ; বরং আমাদের সিস্টেমকে ছাড়িয়ে যাওয়া সবকিছুর সঙ্গে স্রেফ ফুরফুরে মেজাজে উড়ে বেড়াবে।’

ওরা প্রো নবিস লুসিফার। অফিসিয়াল ভিডিও

“‘বুদ্ধিবৃত্তিক’ বিষয়আশয় আমি সতিকার অর্থেই ফেলে দিতে চেয়েছিলাম; নিশ্চয়ই আপনার মস্তিস্কে সবকিছু একসঙ্গে জড়ো হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তবু অ্যালবামটি তৈরির সময় (ব্যান্ডের) প্রধান ব্যক্তির ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে আমি সত্যিকার অর্থেই শুনতে চেয়েছিলাম নিজের অন্তর ও আবেগের কথা। (এই অ্যালবামে) আপনি সেটা শুনতে পাবেন। আসলেই ভেঙেচুরে নতুন কিছু করার সময় ছিল সেটা; আর, আমার মনে হয়েছিল, এ কাজ করার সুযোগ একবারের বেশি আমি বোধহয় পাব না।”

যদিও নেরগাল পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, অ্যালবামটিকে একটি সামগ্রিক কাজ হিসেবে সম্পন্ন করার তাগাদা তিনি অনুভব করেছিলেন, তবু নিশ্চয়ই তিনি এ কথাও স্বীকার করবেন– কিছু কিছু গান একটি সুনির্দিষ্ট রকমের গভীরতর প্রভাব তার ওপর এখনো ফেলে।

ও ফাদার ও স্যাটান ও সান! অফিসিয়াল ভিডিও

‘আমরা যখন ওরা প্রো নবিস লুসিফার কিংবা ও ফাদার ও স্যাটান ও সান! গানের পারফর্ম করি, নিজের শিড়দাঁড়া জুড়ে শিহরণের প্রবাহ টের পাই আমি,’ বাঁকা হাসি হেসে উপসংহার টানেন তিনি। “বরাবরই সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করা আমার অভ্যাস; তবে কোনোকিছুর প্রতি নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়াকেই আমি সবচেয়ে মূল্য দিই; আর নির্দিষ্ট কিছু গান পারফর্ম করার সময় আমার মনে হতে থাকে, ‘আরে, এটা বাস্তব!’”


ডেয়াল প্যাটারসন: লেখক, যুক্তরাজ্য। বই: ‘ব্ল্যাক মেটাল: এভোলুশন অব দ্য কাল্ট’; ‘ব্ল্যাক মেটাল: দ্য কাল্ট নেভার ডাইজ’; ‘ব্ল্যাক মেটাল: ইনটু দ্য অ্যাবিস’
সূত্র: মেটাল হ্যামার; হেভি মেটাল ও রক মিউজিক ম্যাগাজিন, যুক্তরাজ্য। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বেহেমথ
বেহেমথ

দ্য স্যাটানিস্ট

ট্র্যাক
১। ব্লো ইউর ট্রাম্পেটস গাব্রিয়েল [৪:২৫]
২। ফিউরর ডিভাইনাস [৩:০৬]
৩। মেসি নোয়া [৪:০৪]
৪। ওরা প্রো নবিস লুসিফার [৫:৩৫]
৫। আমেন [৩:৪৯]
৬। দ্য স্যাটানিস্ট [৫:৩৩]
৭। বেন সাহার [৫:৩৪]
৮। ইন দ্য অ্যাবসেন্স অভ লাইট [৪:৫৮]
৯। ও ফাদার ও স্যাটান ও সান! [৭:১৩]

লাইন-আপ
আদাম ‘নেরগাল’ দার্স্কি: গিটার, ভোকাল, লিরিক
তমাস ‘অরিয়ন’ ফ্রোব্লেফস্কি: বেস
জিবিগনিউফ রবার্ট ‘ইনফার্নো’ প্রোমিন্সকি: ড্রামস

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: লালগান । ঢাকা, বাংলাদেশ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল: সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো : প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৩ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; বেলা তার; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান