লিখেছেন: রিচ হবসন
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯। জেলখানার ভেতরে তীব্র মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙল অজি অসবর্নের। কেন তিনি কারাগারে, সেই স্মৃতি মনে করতে পারছিলেন না। যদিও সেই আজব জায়গায় তার ঘুম ভাঙার কারণটি আজব নয়; কেননা, সত্য হলো– তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ। মাতাল ও মাদকাসক্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করতে মারতে বসেছিলেন নিজের স্ত্রী শ্যারনকে।
যদিও এই দম্পতির পুনর্মিলন ঘটেছে, তবু কিছু দেয়াললিখন রয়েই গিয়েছিল: ১৯৮০-এর দশক কার্যতই হয়ে পড়েছিল মৃত, এবং অজি যদি সেইসব আবর্জনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারতেন, তাহলে এতদিনে নিজের নাম লেখাতেন মৃতের কাতারে!
…
নিষ্ফলা
মাতাল ক্লাউনের
অপচ্ছায়াকে জীবন
থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার
জন্য তিনি তখন
এক পায়ে
খাড়া
…
সেই সময়ে তিনি রিহ্যাব থেকে বের হয়ে নিজের পরবর্তী অ্যালবামের কাজ শুরু করেছিলেন। অজি তখন একেবারেই নতুন একজন মানুষ। বহু বছর ধরে তাকে ঘিরে থাকা সেই নিষ্ফলা মাতাল ক্লাউনের অপচ্ছায়াকে জীবন থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্য তিনি তখন এক পায়ে খাড়া। সম্প্রতি ‘মেটাল হ্যামার’ ম্যাগাজিনের কাছে সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘নো মোর টিয়ার্স ছিল আমার জন্য একটি পুনর্জন্ম; নিজেকে প্রমাণ করতে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উপযুক্ত অনুভব করছিলাম আমি।’

অ্যালবামটি প্রকাশের তিন দশক পর এ নিয়ে কথা শোনার সময় আমাদের পক্ষে ভাবা বেশ কঠিন, একদার ‘অন্ধকারের রাজপুত্র’খ্যাত অজি অসবর্ন কতটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন তখন। যদিও এখন তিনি পারকিনসন রোগে ভুগছেন, তবু নিজের ত্রয়োদশতম একক অ্যালবামের কাজ নিচ্ছেন এগিয়ে; এবং যত দ্রুত সম্ভব তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘নো মোর টুরস ২’ শুরু করার ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে আছেন– যেটি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে থমকে রয়েছে। ‘ঘরে ফেরার অপেক্ষা সইছে না আমার,’ উত্তেজনায় থরো থরো কণ্ঠে বললেন তিনি।
১৯৯০-এর আলাপে ফেরা যাক। তার ব্যান্ড ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর জন্য সকল দুয়ার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন, এমনকি স্টুডিও-ও। সম্ভাব্য প্রযোজক পাওয়ার আশায় টাইটেল ট্র্যাক নো মোর টিয়ার্স-এর একটা রাফ ডেমো রেকর্ড করেছিলেন; কিন্তু মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কেউই বিশেষত অজির কথা বলার ধরনের প্রতি ভরসা রাখতে পারছিল না। কেউই না, শুধুমাত্র প্রোডাকশন ডুয়ো– জন পারডেল ও ডুয়ান ব্যারন ছাড়া। দুর্ভাগ্যক্রমে, যেমনটা আশা করেছিল লেবেল কোম্পানি, সে মানের হয়নি ওই ডেমো।
‘স্টুডিওতে কল করে রেকর্ড কোম্পানি জানতে চাইল, ডেমোগুলো সম্পর্কে আমার অভিমত কী,’ স্মৃতিচারণায়, বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন ডুয়ান। ‘আসলে ওগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছিল এবং মনে হয়েছিল, ঠিক রাস্তাতেই রয়েছে। অথচ তারা মুখের ওপর ফোন রেখে দিলো। তাদের এটা মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই আমাদের বাদ দিয়ে দিলো!’
যদিও জন ও ডুয়ান শেষ পর্যন্ত অ্যালবামটির প্রযোজনায় ফিরেছিলেন, কিন্তু লেবেল কোম্পানির ছিল অন্য পরিকল্পনা: নতুন অ্যালবামের মধ্যে অবশ্যই নতুন দশকের চিহ্ন থাকা উচিত, চেয়েছিল তারা।

‘এক পর্যায়ে প্রডিউসের কথা ভাবছিলেন রিক রুবিন,’ জানালেন অজির দীর্ঘদিনের গিটারিস্ট জ্যাক ওয়াইল্ড। নো মোর টিয়ার্স-এর রেকর্ডিং চলাকালে ঘটে যাওয়া বিবাদ নিয়ে প্রশ্ন করলে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসায় বসে টেলিফোনে কথা বলতে থাকা জ্যাকের মধ্যে উদাসিনতা ভর করে। ‘বিমানটা কে চালাচ্ছে– তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমার; আমি স্রেফ উড়ালটা উপভোগ করি,’ হেসে ওঠেন তিনি। “রিকের বাসায় আমাকে পাঠানো হয়েছিল– তাকে ধরে বোর্ডে এনে, পুরো ডেমোটা বাজিয়ে শোনানোর জন্য। তিনি বললেন, ‘জ্যাক, এটা শুনতে মটলি ক্রুর কোনো যাচ্ছেতাই রেকর্ডের মতো লাগছে।’ আরও বললেন, ‘আমাদের আসলে স্যাবাথ ব্লাডি স্যাবাথ রিফ দরকার; আমাদের আসলে ওই মানের একটা পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম দরকার…।’ বুঝলেন তো, আমি তখন বোর্ডে, আর একমাত্র সমস্যাটি হলো… আপনাকে আসল লোকটিকেই নিয়ে আসতে হবে বোর্ডে; এটা তো তারই ব্যান্ড!”
‘স্যাবাথ’ধর্মী কোনো কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল না অজির; যদিও শেষবারের মতো আরেকটি হেইল ম্যারি সৃষ্টির প্রচেষ্টা তাকে আবারও চালকের আসনে নিয়ে এসেছিল, আর তা তার সমস্যা সমাধানের নেপথ্যে জুগিয়েছিল শক্তি। একটি প্রোডাকশন-পূর্ব রিহার্সালে নেমে জ্যাক ঠিক করলেন খানিকটা ব্ল্যাক স্যাবাথধর্মী রিফ বাজিয়ে রেকর্ডটি পুনর্লিখনে অজিকে রাজি করাবেন। কিন্তু সেটি সেভাবে কাজে দিলো না।
…
‘আমি ভাবলাম, তার বোধহয়
হিসু পেয়েছে; আসলে
তা না, তিনি সোজা
বাড়ি চলে
গেলেন!’
…
‘আমি স্রেফ এইসব রিফ বাজিয়েই চলেছি, আমার মাথার ভেতর লর্ড আইয়োমির বাজনা খেলা করছে, আর অজি স্রেফ উঠে দাঁড়ালেন, তারপর বেরিয়ে গেলেন,’ হেসে ওঠলেন জ্যাক। ‘আমি ভাবলাম, তার বোধহয় হিসু পেয়েছে; আসলে তা না, তিনি সোজা বাড়ি চলে গেলেন!’
‘পরিণামে লেবেল কোম্পানিটি বার্তা পেয়ে গেল এবং আমাকে ও জনকে আবারও নিয়োগ দিলো কাজটি করার জন্য,’ বিদ্রূপের সঙ্গে বলেন ডুয়ান। ‘তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার জানিয়ে দিলো, এ কাজ থেকে তারা হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।’
লেবেল কোম্পানির হস্তক্ষেপের অভাবটিই সম্ভবত নো মোর টিয়ার্স-এর জন্য ছিল একান্ত প্রয়োজনীয়। ডুয়ান ও জন হাল ধরায়, এই জুটি স্যাবাথ-রাজত্বের শিকল কাটার মতো পেল স্বাধীনতা, এবং অজি অসবর্নের একটি সত্যিকারের অসাধারণ অ্যালবাম তৈরিতে রাখল ভূমিকা।
‘আয়োজনের প্রশ্নে জন পারডেল ও ডুয়ান ব্যারন ছিলেন ইনস্ট্রুমেন্টাল,’ বলেন অজি। ‘আমরা জানতাম, প্রতিটি গানকেই আক্রমণ করতে হবে, কেননা, এগুলো রেডিওতে বাজানো হবে। ফলে আমাদের আরেক ধাপ উপরে ওঠার বিকল্প ছিল না। বহু কিছু প্রমাণ করার ছিল আমার!’
‘অজি খানিকটা শান্ত হয়ে উঠেছিলেন। সেই পর্যায়ে এটি কাজে লাগানোর ছিল আসলেই সর্বশেষ সুযোগ,’ স্বীকার করেন ডুয়ান। “তবে স্যাবাথ-এর পাশপাশি একক ক্যারিয়ারেও অজি যা করেছেন, সেগুলো আমরা ভালোবেসেছিলাম। তাই ব্যাপারটি ছিল এ রকম, ‘না বাবা, এই প্রকল্পকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’”
অজির প্রথম পর্যায়ের ম্যাটেরিয়ালের হতদরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে, নো মোর টিয়ার্স লেখা হয়েছিল আরও বেশি অ্যানথেমিক করে, যেখানে অন্ধকারাচ্ছন্নতার প্রতি চালানো হয় অনুসন্ধান, এবং তা একইসঙ্গে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি গুরুতর লিরিক্যাল রাজত্ব করেছিল অর্জন। সিরিয়াল কিলার [নো মোর টিয়ার্স] ও পেডোফিলিয়া [মি. টিঙ্কারট্রেন] থেকে শুরু করে, ট্যুর চলাকালে অজির গৃহকাতরতা [মামা, আ’ম কামিং হোম] পর্যন্ত ব্যাপ্তি ছিল গানগুলোর। শেষোক্ত গানটি এক হৃদয় ছোঁয়া ব্যালাড। মুহূর্তেই অনুরাগীদের মন জয় করেই শুধু নেয়নি, ‘বিলবোর্ড হট ১০০’ তালিকার ‘টপ ৪০’তে জায়গা করে নেওয়া অজির একমাত্র একক গানও এটি।
‘মামা, আ’ম কামিং হোম আসলে পিয়ানোর ওপর রচিত,’ বলেন জ্যাক। “একদিন গাড়ি চালিয়ে অজির সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলাম আমি। তখন বাড়িটিতে যাওয়ার দরকার ছিলই আমার। সেই পরিত্যক্ত জায়গা তখন ছেয়ে ছিল ৫ ফুট উঁচু ঘাসে। শাটারগুলো ভাঙা ছিল। সবকিছু ছিন্নভিন্ন। আমরা ড্রাইভওয়ে ধরে আগালাম। সেই মুহূর্তে অজি আমাকে আঁকড়ে ধরে বলল, ‘শ্যারন তোমাকে টাকা খাওয়াচ্ছে, তাই না?’ কথাটি শুনে হাসি থামছিলই না আমার! যাহোক, আমরা অ্যাপার্টমেন্টটিতে ঢুকলাম। সেখানে একটা পিয়ানো দেখলাম আমি। আর ওখানে বসে টুংটাং করতে করতেই মামা, আ’ম কামিং হোম-এর রিফ ধরা দিলো আমাদের কাছে।”
আরও চমকে যাওয়ার মতো, আরও হৃদয় ছোঁয়া ঘটনা হলো, গানটি অজির নিজের নয়, বরং তার সমকালীন আরেক আইকন– লেমি কিলমিস্টারের লেখা। ‘এ ছিল সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার,’ বলেন অজি। “আমার পক্ষে এত দারুণভাবে লেখা সম্ভব হতো না; কেননা, এটি আমার জন্য ছিল স্রেফ ‘নিখুঁত’ জিনিস। লেমি জানতেন, নিখুঁত বলতে আমি কী বোঝাচ্ছি। তার কাছে নিজেকে কখনো সিরিয়াস হিসেবে জাহির করিনি; কেননা, আমরা সবসময়ই দারুণ মজা করতাম। একটি সত্যিকারের রক-এন-রোল লাইফস্টাইল ছিল তার; তাকে আমি ভীষণ মিস করি।”
…
‘নিজের
নামের সঙ্গে
জড়িয়ে পড়া সব
দুর্গন্ধের বোমাকে
ঝেঁটিয়ে বিদায়
করছিলেন
অজি’
…
নো মোর টিয়ার্স-এর লিরিক্যাল কনটেন্ট যখন একটা অন্ধকার পথে চালিত হয়েছিল, অজি ও তার ব্যান্ড তখন অজির সদ্য আবিষ্কৃত সংযমকে ফূর্তি করে উড়িয়ে দিতে চায়নি। ‘নিজের নামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া সব দুর্গন্ধের বোমাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করছিলেন অজি,’ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন জ্যাক। “আমরা সেগুলো দিয়ে স্রেফ রুম নয়, চাইলে দালানও উড়িয়ে দিতে পারতাম! অজি হয়তো বলতে পারতেন, ‘দুঃখিত…’; আর আমরা ঠাট্টা করে বলতে পারতাম, ‘অজি, কী ফাজলামি এসব?!’ অ্যালবামের কাজটা তিনি শেষ করতে পারবেন না– এই আশঙ্কা সবার মনেই ছিল।”
‘সত্যিকার অর্থে, শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম, তিনি আসলেই কোনো গুরুতর সমস্যার মধ্যে রয়েছেন,’ মৃদু হেসে বলেন ডুয়ান। ‘সেগুলোকে সবখানেই ফেলে যাচ্ছিলেন তিনি– স্টুডিওতে, ফ্লাইটে, এমনকি উইকেন্ডে লাস ভেগাসে গিয়ে কোনো ক্যাসিনোতেও! সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছিলেন অজি।’
এ অবস্থায় অজির প্রতি উন্নাসিক না হয়ে বরং তাকে ফিরিয়ে আনার একটি অভাবনীয় রাস্তা খুঁজে দিতে হাত বাড়িয়েছেন জ্যাক এবং ড্রামার র্যান্ডি ক্যাস্টিলো। ‘আমি জানতাম, তাকে আমাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে… এ কারণে একটা ব্যাগের মধ্যে হাগু করলাম,’ কিম্ভুত ভঙ্গিমায় বলেন জ্যাক। ‘প্রতিদিন একই পালঙ্কে বসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিডিও কিংবা মন যা চায়– তা-ই দেখতেন অজি। তাই আমি ওই পালঙ্কের পেছনে কোনোমতে লুকিয়ে, ছোট্ট একটি ছিদ্র করে, তাতে গলিয়ে দিয়েছিলাম প্রকাণ্ড গুয়ের দলা। অন্যদিকে, র্যান্ডি একটা টুপারওয়ারে হাগু ভরে সেগুলো ফ্রিজে জমিয়ে রাখলেন। শুধুমাত্র এ কারণেও আমাদের মুখাপেক্ষী হতে হতো অজিকে!’
“এ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করার সাহস হয়নি আমাদের…! এক রাতে র্যান্ডি গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলেন যেন অজিকে থামানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি আমরা। তখন আচমকাই বিদ্যুৎ চলে গেল। র্যান্ডি তার লাইটার জ্বালিয়ে বলে উঠলেন, ‘আরে, লোকটা গেল কই?’ কেননা, তখনো গুয়ের গন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি। চারপাশে খুঁজে পরে বুঝতে পারলেন, সেটা দরজার হাতলে! আমরা অজির রুমের দিকে তাকালাম, আর দেখলাম, পর্দাটা সরে গেল: আমরা দরজার হাতলটা ধরি কি না– দেখছেন তিনি! কী বেজন্মারে!”
‘আমি আসলে না বুঝেই ওখানে দুর্গন্ধময় বিষ্ঠা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেখে দিয়েছিলাম,’ উৎকটভাবে হাসতে হাসতে বলেন অজি। ‘আমি যখন অবশিষ্টাংশের জন্য ফ্রিজের কাছে যেতাম, সেখানে দেখতাম– অবশিষ্টাংশ ঠিকঠাকই রয়েছে! কিন্তু আমরা সবসময় একে অন্যের ওপর বিষ্ঠা ছুড়ে দিতাম। দারুণ মজা করেছি আমরা।’
এইসব ঠাট্টা-মস্করা ছাপিয়ে, ব্যান্ডটির একটি ইয়ার্কি এমনকি একটি পুরস্কারজয়ী গানের জন্ম দিয়েছিল: আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড। “রাস্তার ঠিক মাথায় একটা স্ট্রিপ বার ছিল। সেখানে আমি গিটারে অনেকটা গো-গো ড্যান্স রিফ বাজাচ্ছিলাম অনেকটা এরকম, ‘ইয়েহ, দ্যাটস রাইট উই আর আউট ফর অ্যাস,” স্মৃতিচারণায় বলেন জ্যাক। “তখন অজি এসে বললেন, ‘হচ্ছেটা কী?’ বললাম, ‘স্রেফ ইয়ার্কি করছি।’ শুনে তার ভাবটা ছিল এ রকম, ‘চালিয়ে যাও…।’ সেই গানের জন্য পরে আমরা গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, ভাবা যায়?”
নো মোর টিয়ার্স-এর অনেকগুলো সৃষ্টিই ছিল জুয়া খেলার মতো; তবে স্টাইলের প্রশ্নে এটি ছিল ১৯৮০ সালে নিজের অভিষেক একক অ্যালবাম ব্লিজার্ড অব অজ-এর পর থেকে এ পর্যন্ত অজির জন্য সবচেয়ে গর্বের ও আত্মবিশ্বাসের অ্যালবাম। প্রোডাকশন টিম ঠিক হয়ে যাওয়ার পর শুধু বাকি ছিল মিউজিশিয়ানদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। দলে জ্যাক ছিলেন স্বভাবতই; সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা র্যান্ডি– ড্রামসে, এবং জন সিনক্লেয়ার– কীবোর্ডে।
বেজ ছিল একটি কৌশলপূর্ণ অবস্থানে; অফিসিয়াল ব্যান্ডের অংশ হিসেবে মাইক ইনেজকে অবশ্য নিযুক্ত করেছিলেন অজি, কিন্তু স্টুডিও ইউনিটের সঙ্গে কত দ্রুত তিনি মানিয়ে নিতে পারবেন– সেটিই ছিল ভাবনার বিষয়। যদিও অ্যালবামে মাইকের নাম ‘ইন্সপাইরেশন অ্যান্ড মিউজিক্যাল ডিরেকশন’ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তবে অ্যালবামটিতে তিনি আসলে বাজাননি। বরং বাজিয়েছেন অজির দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা বব ডেইজলি।
সেটি অবশ্য মাইককে অ্যালবামটির সবচেয়ে আইকনিক অংশগুলোতে অবদান রাখা থেকে বিরত করেনি: অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকের বেজ তারই বাজানো। ‘প্রি-প্রোডাকশনের কাজ যখন প্রথম শুরু করলাম, অ্যালবামটির শিরোনাম তখনো ঠিক করা হয়নি,’ বলেন অজি। ‘আমরা অ্যালবামের গানগুলো লিখলাম। ব্যান্ডে মাইক ইনেজ যোগ দিলেন বেজিস্ট হিসেবে; এভাবেই বেজ লাইন তৈরি হলো।’
‘পুরো অ্যালবামই স্রেফ একটি দারুণ টিম ওয়ার্কের ফসল,’ বলেন ডুয়ান। ‘জাহাজটিকে পথ দেখাতে সাহায্য করার জন্য সেখানে প্রতিটি মুহূর্তেই আমরা হাজির ছিলাম; তবে স্টুডিওতে যারা ছিলেন, মূলত তারাই কাজগুলো ঠিকঠাক করেছেন। এ নিয়ে জ্যাকের একটি সত্যিকারের দূরদর্শিতা ছিল; আমার ধারণা, এ কাজের প্রতি উন্মাদের মতো একাগ্র ছিলেন তিনি।’
১৯৯১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ামাত্রই নো মোর টিয়ার্স রক ল্যান্ডস্কেপে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে ফেলে। মেটালিকার ব্ল্যাক অ্যালবাম ইতোমধ্যেই হেভি মেটালের সাফল্য সন্ধানকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে ফেলেছিল; অন্যদিকে পার্ল জ্যাম-এর টেন, সাউন্ডগার্ডেন-এর ব্যাডমোটরফিঙ্গার ও নির্ভানার নেভারমাইন্ড চরমভাবে পথ দেখিয়েছিল গ্রাঞ্জ জনরার অগ্রযাত্রায়।
…
স্রোত উল্টে দেওয়ার
অদম্য স্পৃহা
ছিল তার
…
এমনতর স্তূপকৃত প্রেক্ষাপটে অজি প্রমাণ করেছিলেন, তার পক্ষে এখনো সবার সেরা হওয়া সম্ভব; স্রোত উল্টে দেওয়ার অদম্য স্পৃহা ছিল তার মধ্যে। সেই প্রচেষ্টারই ফসল হিসেবে অ্যালবামটি হয়ে ওঠে তার সবচেয়ে বিক্রিত অ্যালবামের একটি; ১৯৯১ সালের শেষ দিকে লাভ করে প্লাটিনাম সার্টিফিকেট; এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত এটি চারবার প্লাটিনাম লেখায় নামের সঙ্গে।
‘এই সাফল্যের পেছনে নিঃসন্দেহে রেকর্ড লেবেল কোম্পানির মেধাবী লোকগুলো সমর্থন যোগানোর মাধ্যমে অবদান রেখেছেন,’ বলেন ডুয়ান। ‘আমরা কিছুই পাত্তা দিইনি, স্রেফ একসঙ্গে জড়ো হয়ে কাজ করে গেছি; এটি অজিকে এনে দিয়েছে নতুন জীবন।’
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকের একটি মুহূর্তে মনে হয়েছিল নো মোর টিয়ার্স হতে যাচ্ছে অজির অন্তিম সৃষ্টি; কেননা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের একটি ভুল ডায়াগনোসিস তাকে ঠেলে দিয়েছিল ‘অবসর’ গ্রহণের সিদ্ধান্তের দিকে। ডায়াগনোসিসের বাস্তবসম্মতা প্রসঙ্গে অজি বলেন, ‘আমার তখন কী আর করার ছিল? আমাকে বলা হলো, আমি পারকিনসনের রোগী। তার মানে, যতদিন বেঁচে আছি, কোনোমতে কাটিয়ে দিতে হবে জীবন।’
এরপর কেটে গেছে ৩০ বছর। অজি অসবর্ন এখনো নিজের পক্ষে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টায় রত। তার নতুন অ্যালবামের কাজ চলছে। তিনি ‘নো মোর ট্যুরস-২’-এর পানে চেয়ে আছেন, যেই ট্যুর হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালেই; কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতা ও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পিছিয়ে গেছে। তবু, এখনো অজিকে দেখলে মনে হয় যেন রয়েছেন ১৯৯০-এর দশকের মতোই ঘাড়ত্যাঁড়া। ‘জানি একদিন আমাকে থামতেই হবে…,’ বলেন তিনি। ‘কিন্তু এটিই আমার জীবনের সেরা ঘটনা। এটি চালিয়ে যেতে পারব না; কেননা, এ আসলেই কঠিন খুব।’
এ কারণেই তিনি এখনো স্টুডিওতে গিয়ে প্রত্যাশার ভার উড়িয়ে দেওয়ার স্পর্ধা দেখান; ঠিক যেমনটা দেখিয়ে আসছেন ৫০ বছর ধরে।
রিচ হবসন: লেখক, মেটাল হ্যামার
সূত্র: মেটাল হ্যামার। হেভি মেটাল ও রক মিউজিক ম্যাগাজিন; যুক্তরাজ্য। ২৫ নভেম্বর ২০২১