মূল: পল এলিয়ট
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

১৬ মে ২০১০, রনি জেমন ডিও’র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রক মিউজিক হারিয়েছে এক আইকনিক ব্যক্তিত্ব। রেইনবো, ব্ল্যাক স্যাবাথ, ডিও ও হেভেন অ্যান্ড হেল ব্যান্ডের মিউজিকে বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছড়ানো এই মানুষ ছিলেন এক সত্যিকারের অনন্য প্রতিভা: অপরিমেয় দাপট, এক্সপ্রেশন ও সহজাত মেলোডিক স্বভাবের একজন ভোকালিস্ট, একজন সুরুচিপূর্ণ লিরিসিস্ট, এবং ঋদ্ধ কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ একজন স্টোরিটেলার ছিলেন। রনি জেমস ডিও’র কথা ও কণ্ঠে ছিল দারুণ জাদু।
তার জীবনের প্রথম ভাগের কেন্দ্রস্থলে ছিল মিউজিক। যদিও কখনোই কোনো ফরমাল ভোকাল ট্রেনিং নেননি, তবে শিশুকালেই ফ্রেঞ্চ হর্ন ও ট্রাম্পেটে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, আর সেটি পরবর্তীকালে নিজের গায়কী শক্তির ওপর দম ধরে রাখার ক্ষেত্রে ঘটিয়েছেন প্রয়োগ। নিজের প্রথম পেশাদার গ্রুপ দ্য ভেগাস কিংস-এ তিনি বেজ গিটার বাজাতেন। সেই রকেবিলিটি আউটফিটের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল ১৯৫৭ সালে, নিউইয়র্ক স্টেটে। তবে নিজের সত্যিকারের অন্তরের ডাকে সাড়া দিতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা তাকে করতে হয়নি।
১৯৫৮ সালের শেষদিকে তিনি নতুনতর ব্যান্ড রনি অ্যান্ড দ্য রেড ক্যাপস-এ লিড সিংগার হিসেবে কাজ শুরু করেন। রনি নিজের মঞ্চনাম দস্যু জনি ডিও’র নামে রাখার পর এই ব্যান্ডের নামকরণ করা হয়– রনি ডিও অ্যান্ড দ্য প্রফেটস। সাফল্য তার কাছে সহসা ধরা দেয়নি। ১৯৬০-এর দশকে রক যুগের যখন উদয় ঘটে, পরিশ্রমী রনি তখন ইলেকট্রিক এলভস ব্যান্ডের লিডার হয়ে ওঠেন; ব্যান্ডটি পরবর্তীকালে সংক্ষিপ্ত নাম এলফ বা ‘ইএলফ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে দীর্ঘকাল অপেক্ষায় থাকা সুযোগ তার কাছে ধরা দেয় ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে, যখন এলফ ব্যান্ডের ভেতর সম্ভাবনার দেখা পেয়ে ব্যান্ডটির সেলফ-টাইটেলড অভিষেক অ্যালবাম প্রযোজনা করার সিদ্ধান্ত নেন ডিপ পার্পেল-এর রজার গ্লোভার ও ইয়ান পেইস।
সেখান থেকেই দুই ব্যান্ডের মধ্যে একটা জোরাল সংযোগ গড়ে ওঠে: এই সংযোগ ব্যক্তিমানুষ হিসেবে রনির ক্যারিয়ার ও জীবনে বাঁক এনে দেয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে এই দুই ব্যান্ড একসঙ্গে ট্যুর করার দিনগুলোতে ডিপ পার্পল-এর মুডি গিটার হিরো রিচি ব্ল্যাকমোর এলফ-এ, বিশেষত ব্যান্ডটির ভোকালের কাছে একটা দ্যুতি এনে দেন।
ডিপ পার্পল-এর ফাংক-প্রভাবিত অ্যালবাম বার্ন ও স্টর্মব্রিঙ্গার-এর ওপর নাখোশ হয়ে ব্ল্যাকমোর যখন একটি সলো রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন, গিটারিস্ট স্টিভ এডওয়ার্ডস বাদে রনি-সহ এলফ-এর বাকি সদস্যদের দলে টানেন তিনি। রিচি ব্ল্যাকমোর’স রেইনবো শিরোনামের ওই অ্যালবাম মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে, ডিপ পার্পল থেকে এই গিটারিস্টের বিদায় নেওয়ার পরপর। আর মুহূর্তেই টের পাওয়া যায়, রনির ওপর নিখুঁত প্রতিভার দেখা পেয়েছেন ব্ল্যাকমোর। কেননা, ব্ল্যাকমোরের বারোক রুচির সঙ্গে রনির কণ্ঠস্বর ও কল্পনাশক্তির রয়েছে আদর্শগত মিল।
…
দ্য টেম্পল অব দ্য কিং
সম্ভবত তার কণ্ঠে
রেকর্ড হওয়া
সবচেয়ে
চমৎকার ও সকরুণ গান
…
রিচি ব্ল্যাকমোর’স রেইনবো অ্যালবামই রনি জেমন ডিওকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এলফ-এর সঙ্গে এতগুলো নিষ্ফলা বছর কাটানোর পর সুবর্ণ সুযোগ ধরা দেয় তার কাছে; এবং পূর্ণাঙ্গ দাপটের সঙ্গে পারফর্ম করে তিনি নিজের জাত চেনান। অ্যালবামটির ওপেনিং ট্র্যাক ম্যান অন দ্য সিলভার মাউন্টেন তার আসন্ন দিনের মানদণ্ড হয়ে ওঠে: এই মহাকাব্যিক ও মরমি কাহিনিতে তার কণ্ঠস্বর বাড়তে বাড়তে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে। অ্যালবামটির তুলনামূলক মৃদুভাষী গানগুলোতেও রনি নিজের সক্ষমতার সমান প্রমাণ রাখেন: কাব্যিক গান ক্যাচ দ্য রেইনবো, এবং দ্য টেম্পল অব দ্য কিং— সম্ভবত তার কণ্ঠে রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে চমৎকার ও সকরুণ গান।
রকের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ক্লাসিক অ্যালবামের ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া নতুন ব্যান্ড– যেটির নাম এখন স্রেফ রেইনবো— একটি প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে এবং গায়ক হিসেবে রনির অপ্রতিদ্বন্দ্বী দাপট নিশ্চিত করে। ১৯৭৬ সালের জুনে মুক্তি পাওয়া রেইনবো রাইজিং হয়ে ওঠে ‘ক্যাসেল রক’ নামে পরিচিতি পাওয়া গানের ধারার মডেল: এক মনোলিথিক স্কেল ফুটিয়ে তোলা নায়কোচিত, ফ্যান্টাসি-থিমভিত্তিক প্রগ্রেসিভ হেভি মেটাল, এবং স্টারগেজার গানে সম্ভবত তা সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। অ্যালবামের এই গান আধা-সিম্ফনিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। মিউজিক সমালোচক জিওফ বার্টন একে ‘থার্মোনিউক্লিয়ার রক-এন-রোলে’র উত্থান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কীভাবে একে উৎরে যাওয়া সম্ভব? রনি সেটা অনেকটাই করতে পেরেছিলেন রেইনবোর তৃতীয় স্টুডিও অ্যালবাম লং লিভ রক-এন-রোল-এ, গেটস অব ব্যাবিলন ট্র্যাকটির মাধ্যমে; সেটিও আরেকটি স্টারগেজারধর্মী সেট-পিস। কিন্তু অ্যানথেমিক টাইটেল ট্র্যাক হিসেবে অধিক পরিচিত ওই রেকর্ড ছিল রেইনবোর জন্য রনির সোয়ানসং; আরও বেশি রেডিও-ফ্রেন্ডলি ডিরেকশনে যাওয়ার লক্ষ্যে তার জায়গায় ব্যান্ডে ড্যাপার ইংলিশম্যান গ্রাহাম বনেটকে নেন ব্ল্যাকমোর!
রেইনবোর সঙ্গে মাত্র চার বছর কাটানোর পর ব্যান্ডটি থেকে বাদ পড়ে যাওয়া রনির জন্য ছিল আঘাত। তবে বছর খানেকের মধ্যেই তিনি আরেকটি বিশ্বখ্যাত রক ব্যান্ডে জায়গা করে নেন, আর তা তার সামনে জাহির করে নিজ ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠতম চ্যালেঞ্জ। অতি জনপ্রিয় ভোকাল অজি অসবর্নের জায়গায় ব্ল্যাক স্যাবাথ-এ তার নাম নতুন গায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হলে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর হার্ডকোর অনুরাগী– সর্বস্তর থেকে ভয়াবহ বিদ্বেষের শিকার হন রনি।
…
আপনি
স্রেফ চুপচাপ
বসে ওর গান শুনুন
আর নিজের মস্তিষ্কে
অনুভব করুন বিস্ফোরণ
…
একজন আমেরিকান হিসেবে একটি নিগূঢ় রকমের ব্রিটিশ ব্যান্ডে রনির যোগ দেওয়া তাতে জটিলতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর হয়ে নিজের
অভিষেক অ্যালবাম, ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া হেভেন অ্যান্ড হেল-এর মাধ্যমে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেন রনি। মিউজিক সমালোচক পিটার মাকোস্কি লিখেছিলেন, ‘এই ব্যান্ডে একটি সম্পূর্ণ নতুন এনার্জি এনে দিয়েছেন রনি জেমস ডিও।… (প্রিয় শ্রোতা), আপনি স্রেফ চুপচাপ বসে ওর গান শুনুন আর নিজের মস্তিষ্কে অনুভব করুন বিস্ফোরণ।’
এক কথায়, রনি ব্ল্যাক স্যাবাথকে আবারও সেরা ব্যান্ডে পরিণত করেন। তার সহজাত মেলোডি এবং তার কাব্যিক সংবেদনশীলতা ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর মিউজিকে একটি গীতিময়তার গুণ বয়ে আনে, এবং বিশেষত লিড গিটারিস্ট টনি ইয়োমিকে ওই অ্যালবামের ফেনোমেনাল টাইটেল ট্র্যাকে নিজের সর্বসেরা প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে প্রলুব্ধ করে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, রনি নিজেও সত্যিকার অর্থেই ভারী বিষয় সামলাতে সক্ষম হন, বিশেষত নিয়ন নাইটস ট্র্যাকে সজোরে সেই প্রমাণ রাখেন; অনেকের মতে এটিই ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর সবচেয়ে হেভি গান। নিয়ন নাইটস-এ রনি যা গেয়েছেন, তার চেয়ে কোনো হেভি মেটাল গান কখনোই কারও পক্ষে গাওয়া সম্ভব হয়নি।
ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর সঙ্গে আরেকটি তুখোড় অ্যালবাম করেন তিনি; ১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া মব রুলস। কিন্তু হরদম যেমনটা ঘটে এসেছে, হেভি ট্যুরিং ও ব্যক্তিগত সংঘাতের সমন্বয়ে ১৯৮২ সালে ব্যান্ডের সঙ্গে তার সম্পর্কে চিড় ধরে যায়, এবং লাইভ-ইন-কনসার্ট অ্যালবাম লাইভ ইভল-এর মিক্সিংয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলো টেম্পারিং করেছে– ওঠে এমন গুজব।
এ ঘটনার বহু বছর পরে রনি অবশ্য সেইসব গুজবকে ‘ফালতু’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, তবে লাইভ ইভল-এর প্রচ্ছদে ছিল ব্ল্যাক স্যাবাথ ও রনির মধ্যকার বিদ্বেষের সামান্য নজির: সেখানে গায়ক হিসেবে তার নাম ‘রনি জেমস ডিও’র বদলে স্রেফ ‘রনি ডিও’ লেখা হয়েছিল। এ রকম সস্তা শত্রুতার প্রতিক্রিয়ায় রনি নিজের নামেই নতুন ব্যান্ড গড়ে তোলেন; আর ব্ল্যাক স্যাবাথকে সেই ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম একেবারেই পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়!
১৯৮৩ সালের জুনে মুক্তি পাওয়া হলি ডাইভার ছিল অন্যতম সেরা অভিষিক্ত হেভি মেটাল অ্যালবাম। এই ব্যান্ডে রনি নিজের চেনা দুটি মুখও জুড়ে নেন– রেইনবোর সাবেক সহকর্মী জিমি বেইন হাল ধরেন বেজে, অন্যদিকে ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর পলায়নপর ভিনি অ্যাপিস তুলে নেন ড্রামসের দায়িত্ব; সঙ্গে আরও নেন তুলনামূলক অপরিচিত ও ১৯ বছর বয়সী অনভিজ্ঞ গিটারিস্ট ভিভিয়ান ক্যাম্পবেলকে– যিনি এর আগে আইরিশ ব্যান্ড সুইট স্যাবেজ-এ বাজাতেন। তবে তারা মিলে একটি আঁটসাঁট বন্ধন গড়ে তোলেন: বেইন ও অ্যাপিস– রক সলিড; ক্যাম্পবেল– ফ্ল্যাশি ও ফায়ারি। আর, সেই এলফ-এর পর এই প্রথম অবিসংবাদিত গ্রুপ লিডার হওয়া রনির সমন্বয়ে হলি ডাইভার পরিণত হয় তার একক শৈল্পিক ভিশনের চূড়ান্ত প্রকাশমুখর এক অ্যালবামে।
ক্লাসিক ট্র্যাকে পূর্ণ এক অ্যালবাম এটি; তা স্রেফ রনির ক্লাসিক নয়, বরং স্ট্যান্ড আপ অ্যান্ড শাউট, হলি ডাইভার, রেইনবো ইন দ্য ডার্ক, ডোন্ট টক টু স্ট্রেঞ্জারস-এর মতো জনরা-প্রবর্তিত হেভি মেটাল ক্লাসিকও। এই অ্যালবামের তুলনায় রনির চমকিত স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ইয়ান গিলিয়ানকে নিয়ে ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর প্রকাশ করা বর্ন অ্যাগেইন পরিগণ্য হয় হাসির খোরাকে।
১৯৮০-এর দশক জুড়ে রনি ও তার ব্যান্ড ডিও এক বিশাল ও বিশ্বস্ত ভক্তকূলের আস্থা ধরে রাখে। এরইমধ্যে ব্যান্ডে সদস্যদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে, যার শুরু ভিভিয়ান ক্যাম্পবেলকে দিয়ে, যিনি প্রথমে হোয়াইটস্নেক ও পরে ডেফ লিপার্ড-এ চলে যান। ১৯৮৬ সালে রনি হিয়ার-এন-এইড-এর আয়োজন করেন। আফ্রিকান দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্যের জন্য হেভি মেটালের পক্ষে ‘ব্যান্ড এইড’ নামে এক চ্যারিটি প্রজেক্টের অংশ এটি। সেখানে রনির লেখা হিট সিংগেল স্টারস-এ কণ্ঠ মেলান মটলি ক্রু, আয়রন মেইডেন ও জুডাস প্রিস্ট-এর সদস্যরা।
যদিও হলি ডাইভার-এর মতো অ্যালবাম আর কখনোই উপহার দিতে পারেননি রনি, তবে তিনি অসাধারণ সব গান উপহার দিতে থাকেন– উই রক, দ্য লাস্ট ইন লাইন, স্যাক্রেড হার্ট, রক-এন-রোল চিলড্রেন; আর করতে থাকেন মন্ত্রমুগ্ধকর লাইভ শো। রনির সেই দানবীয় পারফরম্যান্সগুলোর কথা রক-অনুরাগীদের পক্ষে ভুলে যাওয়া অসম্ভব!
এরপর ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে এক বিস্ময়কর রকমের ‘পল্টিবাজি’র ঘটনা ঘটে! আবারও ব্ল্যাক স্যাবাথ-এ যোগ দেন রনি। তবে বেশিদিন টিকেননি। ডিহিউম্যানাইজার নামে একটি অর্ধ-মার্জিত অ্যালবাম করেন তারা; কিন্তু ডাবল-ও শিরোনামের ফেয়ারওয়েল ট্যুরে ব্ল্যাক স্যাবাথ যখন ওজিকে নিমন্ত্রণ জানায় সহযোগিতার জন্য, রনি তখন বাদ পড়ে যান, এবং তার বদলি হিসেবে পারফর্ম করেন জুডাস প্রিস্ট-এর রব হ্যালফোর্ড।
১৯৯৪ সালে আবারও ডিও ব্যান্ডের কার্যক্রম শুরু করেন রনি; পরের ১০ বছরে ব্যান্ডটি বিভিন্ন লাইনআপ নিয়ে পাঁচটি অ্যালবাম রেকর্ড করে। কিন্তু ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর সঙ্গে কর্মযজ্ঞ শেষ না হওয়া রনি আবারও ফিরেন; এবং ২০০৭ সালে তিনি ইয়োমি, অ্যাপিস ও বেজিস্ট গিজার বাটলারকে নিয়ে হেভেন অ্যান্ড হেল গ্রুপের কার্যক্রমে যোগ দেন। আর সেটিই ছিল রনি জেমস ডিও’র শেষ তাড়না।
শুরুতে রনি চেয়েছিলেন হেভেন অ্যান্ড হেল সুপারগ্রুপটির ওয়ার্ল্ড ট্যুর ঠিকঠাক করতে; কিন্তু সেই ট্যুরের সাফল্য এবং ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর দ্য ডিও ইয়ারস সংকলনের নতুন তিনটি ট্র্যাক রেকর্ড করার পর এতই আলোড়িত হয়, ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হেভেন অ্যান্ড হেল একেবারেই নতুন একটি অ্যালবাম করবে। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া সেই দ্য ডেভিল ইউ নো অ্যালবাম দুনিয়াজুড়ে প্রশংসিত হয়। এটিই ছিল রনির জীবদ্দশায় মুক্তি পাওয়া তার শেষ রেকর্ডিং।
রনি জেমস ডিও’র মৃত্যু তাকে যারা চিনতেন এবং তার মিউজিক যারা ভালোবাসতেন– উভয়ের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমারও দারুণসব স্মৃতি রয়েছে তাকে ঘিরে। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমি প্রথম কোনো রকস্টারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম রনির, ১৯৮৫ সালে; তখন তিনি ডিওর স্যাক্রেড হার্ট অ্যালবামের প্রচারণায় ব্যস্ত। তার সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার জন্য ছিল বিরাট রোমাঞ্চকর। ১৯৮০ সাল থেকে– যখন আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ক্রিসমাস উপহার হিসেবে হেভেন অ্যান্ড হেল ক্যাসেটটি পেয়েছিলাম, তখন থেকেই রনি জেমন ডিও’র আমি একজন অনুরাগী।
তাকে মঞ্চে প্রথম পারফর্ম করতে দেখেছি ১৯৮৪ সালে, ডিওর হয়ে, হ্যামারস্মিথ ওডিয়নে, দ্য লাস্ট ইন লাইন ট্যুরে। এরপর বছরের পর বছর ধরে তাকে তুখোড় অনেক শো’তে পারফর্ম করতে দেখেছি: সেই রক্তাক্ত ড্রাগনের সঙ্গে বার্মিহ্যাম এইনইসি’তে, লন্ডনের অ্যাস্টোরিয়ায় হলি ডাইভার-এর পুরোটার পারফর্ম, এবং শেষবার দেখেছি হেভেন অ্যান্ড হেল-এর হয়ে ব্রাইটন সেন্টারে।
রনির শেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছি বছর কয়েক আগে, যখন তিনি লন্ডনে ছিলেন হেভেন অ্যান্ড হেল-এর হয়ে। টনি, গিজার ও ভিনির সঙ্গে তার সম্পর্কের উষ্ণতা আমার মনজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তিনি তার লেখা গানগুলোতে বহুবার ব্যবহার করেছেন, তার ট্রেডমার্ক হয়ে উঠেছে– এমন একটি বুলি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম: ‘লুক আউট!’ হলি ডাইভার, রেইনবো ইন দ্য ডার্ক, এবং ব্ল্যাক স্যাবাথ-এর রেকর্ড ব্রেকিং চিলড্রেন অব দ্য সিতে বুলিটি তিনি ব্যবহার করেছেন।
জবাবে মুচকি হেসে বলেছিলেন, “ব্যাপারটা মজার। ফিনিক্সে একবার পারফর্ম করছিলাম, সেখানে একটা লোক ছিল; যখনই গাইছিলাম, সে একটা সাইনবোর্ড উঁচিয়ে ধরছিল– ‘লুক আউট!’ বুলিটাকে আমি প্রশংসা হিসেবে নিয়েছিলাম!” হ্যাঁ, প্রশংসাসূচকই এটা।
…
হেভি
মেটাল
সিংগারদের
সব লিজেন্ডারির
মধ্যে রনি জেমস ডিও’ই
সর্বসেরা
…
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন কের্যাং!-এর হয়ে দশ বছর কাজ করার পর যখন আমি বিদায় নিয়েছিলাম, সেই পার্টিতে একটা স্টাফড ঈগলের পাশে রনির একটা ছবি দিয়ে ছাপানো হয়েছিল আমন্ত্রণপত্র; আর তাতে লেখা ছিল– ‘লুক আউট!’ এ ছিল যে মানুষ হেভি মেটালের স্পিরিটকে আমার মতে সবচেয়ে বেশি চৌকস করে তুলেছিলেন, তার প্রতি একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০০৯ সালের ক্লাসিক রক ম্যাগাজিনের এক সংখ্যায় আমি লিখেছিলাম: “হেভি মেটাল সিংগারদের সব লিজেন্ডারির মধ্যে রনি জেমস ডিও’ই সর্বসেরা।” দুনিয়াজুড়ে অনেকেই সেই মন্তব্য শেয়ার করেছিলেন।

মনে পড়ে এক মাতাল রাতে ব্রাইটনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে উঠেছিল হেভি মেটাল নিয়ে আলাপ, বিশেষত গায়কদের নিয়ে; আর তখনই এক বন্ধু হুমকি দিয়ে বসল– রনি জেমস ডিও’ই সর্বকালের নম্বর-ওয়ান মেটাল সিংগার– এ কথার সঙ্গে আমরা সবাই একমত না হলে সে পাব থেকে বেরিয়ে যাবে! আমরা একমত হলাম; বন্ধুটি রয়ে গেল পাবে। সেই আড্ডায় দ্বিতীয় স্থানে আমরা জায়গা দিয়েছিলাম রব হ্যালফোর্ড’কে।
ম্যান অন দ্য সিলভার মাউন্টেন, সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরি গ্রিনস্লিভস, দ্য টেম্পল অব দ্য কিং, স্টারগেজার, ট্যারো ওম্যান, স্টারস্ট্রাক, কিল দ্য কিং, লং লিভ রক-এন-রোল, নিয়ন নাইটস, চিলড্রেন অব দ্য সি, হেভেন অ্যান্ড হেল, ডাই ইয়ং, স্ট্যান্ড আপ অ্যান্ড শাউট, হলি ডাইভার, রেইনবো ইন দ্য ডার্ক, দ্য লাস্ট ইন লাইন, উই রক… বহুসংখ্যক অসাধারণ গান গেয়েছেন রনি জেমস ডিও। তবে রনি জেমস ডিও’র নির্যাস সবচেয়ে দারুণভাবে ফুটে রয়েছে– এমন কোনো গান বেছে নিতে বলা হলে আমি বলব স্যাক্রেড হার্ট-এর কথা: ‘হোয়েনেভার উই ড্রিম, দ্যাটস হোয়েন উই ফ্লাই’। স্বপ্ন দেখার, উঁচুতে ওড়ার সাহস ছিল তার।
আপনার চিরঘুম শান্তির হোক, রনি!
পল এলিয়ট: মিউজিক জার্নালিস্ট
সূত্র: ক্লাসিক রক; মিউজিক ম্যাগাজিন, যুক্তরাজ্য। জুন ২০১০